সয়াবিনের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী-মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা জোরদার করুন

ন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমলেও অভ্যন্তরীণ বাজারে সয়াবিনের মূল্য ঊর্ধ্বমুখী। কয়েক দিন ধরে এই ঊর্ধ্বমুখীর চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে এবং তার পেছনের কারণ অজানা। টিসিবির হিসাবে, গত এক সপ্তাহে সয়াবিনের মূল্য বেড়েছে লিটারে ১০ থেকে ১৫ টাকা। ২৬ ডিসেম্বর ২০১১ কালের কণ্ঠে প্রকাশিত এ সম্পর্কিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দফায় দফায় দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে আইনের তোয়াক্কা করছেন না মিল মালিকরা।


মনিটরিং সেলকে এ ব্যাপারে তাঁরা রাখছেন অন্ধকারে। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের যুক্তি হলো, ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান কমে যাওয়ায় তাঁরা দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এসব দেখভালের দায়দায়িত্ব সরকারের যে সংস্থার বা কর্তৃপক্ষের তারা মৌন কেন?
দীর্ঘদিন ধরে বাজার পরিস্থিতি অস্থিতিশীল। তন্মধ্যে ভোজ্য তেল নিয়ে সবচেয়ে বেশি তুঘলকি কাণ্ড ঘটেছে। সরকারের তরফে দফায় দফায় বৈঠক করে এর সমাধান সূত্র বের করার চেষ্টা হয়েছে বটে; কিন্তু প্রায় সব উদ্যোগই হোঁচট খেয়েছে। শেষ পর্যন্ত দেখা গেছে, বাজার নিয়ন্ত্রণহীনই থেকে গেছে। সয়াবিন যেহেতু আমদানি করা একটি পণ্য, সেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারে এর মূল্য ওঠা-নামার সঙ্গে স্থানীয় বাজারের অবশ্যই মিল থাকা বাঞ্ছনীয়। ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান কমার বিষয়টির সুরাহা এককভাবে মিল মালিকরা সম্পন্ন করে নিজেদের ইচ্ছামাফিক মূল্য নির্ধারণ করে নিতে পারেন না। বাজার ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি এবং এ-সংক্রান্ত নানা ধরনের প্রশ্ন দীর্ঘদিন ধরে অনিষ্পন্ন অবস্থায় ঘুরপাক খাচ্ছে এবং ভোক্তারা এর খেসারত দিয়ে চলেছেন। বাজারে সম্প্রতি সয়াবিনের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির অভিযোগও এসেছে। অতীতেও এমন অপচেষ্টা হয়েছে এবং মহলবিশেষ এ থেকে ফায়দা লুটে নিয়েছে। মূল্য বৃদ্ধি করতে হলে কতকগুলো নিয়ম ও আইনের মধ্য দিয়েই তা করতে হবে। 'অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন ও পরিবেশক নিয়োগ আদেশ ২০১১' অনুযায়ী কোনো কম্পানি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি কিংবা হ্রাস করতে চাইলে সমিতির মাধ্যমে তা করতে পারবে। আর নতুন মূল্য কার্যকর হওয়ার ১৫ দিন আগে তা মনিটর সেল, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানাতে হবে। কিন্তু এসব নিয়ম বরাবরই থাকছে উপেক্ষিত।
বাজারে যারা থেমে থেমে নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করছে, তাদের ব্যাপারে এযাবৎ নানা মহল থেকে ব্যাপক কথাবার্তা হয়েছে। সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব দেওয়া হলেও বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যত অসাধুদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থান নিতে পারেনি। উচ্চারণসর্বস্ব অঙ্গীকার-প্রতিশ্রুতি আর হুঁশিয়ারির ফল যা হওয়ার বা হতে পারে, তা-ই হয়েছে। বাজার ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি ব্যক্তি বা মহলবিশেষের স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধে সরকারকে অবশ্যই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সাধারণ মানুষের বাঁচা-মরার সমস্যাসংক্রান্ত এত বড় একটি বিষয়ের কার্যত কোনো সমাধান সূত্র বের করা যাবে না, তা তো হতে পারে না। সয়াবিনের ক্ষেত্রে পুনর্বার অসামঞ্জস্যপূর্ণ চিত্র ফুটে উঠল কেন_এ প্রশ্নের রহস্য উদ্ঘাটনে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.