বাংলাদেশে ভারতীয় চলচ্চিত্র-গণমাধ্যম by সুপা সাদিয়া

ণমাধ্যমের বড় একটা অংশজুড়ে আছে চলচ্চিত্র জগৎ। চলচ্চিত্র জগতের অবস্থা অনেকের মতো একটি বিষয় আমাকেও চিন্তিত করে তুলছে। যেভাবে একের পর এক সিনেমা হল বন্ধ হচ্ছে, নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো কোথায় প্রদর্শিত হবে! ১৯১০ সালে ঢাকায় প্রথম প্রেক্ষাগৃহ গড়ে ওঠে। চলচ্চিত্রের ঢেউ গিয়ে পড়ে জমিদার ও ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে। তারা নির্মাণ শুরু করে বিলাসবহুল প্রেক্ষাগৃহগুলো। ১৯২৪ সালে নির্মিত 'পিকচার প্যালেস' 'রূপমহল' নামে এবং


'মুকুল' 'আজাদ' নামে রূপান্তরিত হয়। ১৯২৭ সালে নির্মিত হয় লায়ন এবং ১৯৩১ সালে মানসী। তবে এ পুরো সময়জুড়ে ছিল নির্বাক ইংরেজি ও ফরাসি ছবির প্রদর্শন। আর কলকাতা থেকে স্টিমারে চলচ্চিত্রের ফিল্ম আসত। স্বাধীন বাংলাদেশে আবারও আসছে ভারতীয় সিনেমা। তবে তখনকার আসা আর এখনকার আসায় অনেক ফারাক রয়েছে। পাকিস্তান আমলে ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর ভারতীয় ছবি, হিন্দি ভাষার ছবি নিষিদ্ধ হয়; এর ধারাবাহিকতা চলে বাংলাদেশেও। এখন বাংলাদেশে রয়েছে নিজস্ব ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি; স্বাধীনতার পর যেটি একটি সফল ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে দাঁড়িয়েছিল। অবশ্য আশির দশক থেকে কিছুটা ধস শুরু হয়, যা বর্তমানে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
জিত-কোয়েল মলি্লকের 'জোর' ছবির মাধ্যমে শুরু হয়েছে ভারতীয় ছবির প্রদর্শন। এর পরপরই 'বদলা' ও 'সংগ্রাম' নামের আরও দুটি ছবি মুক্তি পাচ্ছে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের অবস্থা এমনিতেই খারাপ, ভারতীয় চলচ্চিত্র এলে আরও ধ্বংসের মুখে পড়ে যাবে। যেখানে আমাদের দেশীয় সিনেমা শিল্পের ভিত্তিকে শক্তিশালী করা দরকার, সেখানে ভারতীয় ছবির আমদানি সবাইকে হতবাক করে তুলছে।
এটা ঠিক, বাংলাদেশের ছবি দেখতে অনেকেই আর প্রেক্ষাগৃহমুখো হচ্ছে না। এর দায়ভার এড়াতেই কি তবে ভারতীয় ছবির মুক্তি? আমিও একজন সাধারণ দর্শক; চাই হলে গিয়ে ছবি দেখতে; অবশ্যই একটি ভালো-সুস্থধারার চলচ্চিত্র; আজকাল যা খুবই কম দেখা যায় বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে। তাই ভারতীয় ছবি প্রদর্শনের বিষয়ে একেবারে দ্বিমত না জানিয়ে বলতে চাই, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সরকারের পক্ষ থেকে আরও পৃষ্ঠপোষকতা করা উচিত এবং ভারতীয় ১০টি ছবি বাংলাদেশে প্রদর্শিত হলে বাংলাদেশের অন্তত ৩টি চলচ্চিত্র যেন ভারতে প্রদর্শনের অনুমতি পায়।
তবে আবারও একটি প্রশ্ন_ প্রেক্ষাগৃহই যদি না থাকে তবে কোথায় গিয়ে মুক্ত হবে চলচ্চিত্রগুলো? এরই মধ্যে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ধসের কারণে একের পর এক প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। প্রেক্ষাগৃহগুলো ভেঙে তৈরি হচ্ছে মার্কেট, কমপেল্গক্স। ঢাকার আদি প্রেক্ষাগৃহগুলোর মধ্যে পিকচার হাউস, রূপমহল, তাজমহল, গুলিস্তান, স্টার, লায়ন, মুন, নাজ, জ্যোতি, শ্যামলী, মলি্লকাসহ আরও অনেকগুলো ইতিমধ্যে বন্ধ হয়েছে। ভেঙে ফেলার জন্য সম্প্রতি বিক্রি হয়েছে ঢাকার অন্যতম বৃহৎ প্রেক্ষাগৃহ ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হল। শুরু হয়েছে ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহর আর শহরতলির সিনেমা হলগুলোর বন্ধের তোড়জোড়। তবে সিনেমা হলে দর্শক না আসার অজুহাতে যে সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তার জন্য শুধু সিনেমার মানই নয়, সঙ্গে যুক্ত আছে জরাজীর্ণ হলগুলোর বেহাল অবস্থা।
ভারতীয় ছবি মুক্তি যদি এ দেশের চলচ্চিত্র জগতের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায় তবে অচিরেই তা রুখতে হবে। আর যদি বিনিময় সূত্রে গাঁথা যায় চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী, তবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের আরও ব্যাপ্তি বাড়বে। বাংলাদেশে এখনও তৈরি হয় আগুনের পরশমণি (১৯৯৫), নদীর নাম মধুমতী (১৯৯৪), চিত্রা নদীর পাড়ে (১৯৯৯), শ্রাবণ মেঘের দিন (১৯৯৯), মাটির ময়না (২০০০), নিরন্তর (২০০৬), মনের মানুষ (২০১০), আমার বন্ধু রাশেদ (২০১১), রানওয়ে (২০১১)-এর মতো চলচ্চিত্র। বাংলাদেশে রয়েছে স্টার সিনে কমপেল্গক্সের মতো প্রেক্ষাগৃহ। আমরা আশাবাদী, আরও আসবে এমন সব চলচ্চিত্র, যা দর্শক মন জয় করবে আর এমন সব প্রেক্ষাগৃহ নির্মিত হবে যেখানে স্বাচ্ছন্দ্যে বসে উপভোগ করা যাবে বাংলাদেশের মানসম্মত চলচ্চিত্রগুলো।

সুপা সাদিয়া :সংস্কৃতিকর্মী
supasadia@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.