কথা বলবে আলো by প্রদীপ সাহা

র্তমানে ইন্টারনেটের এ যুগে তথ্য আদান-প্রদানের গতি অনেক বেড়ে গেছে_ এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। তারপরও মাঝে মধ্যে দেখা যায়, টেলিভিশনে ছবি ঝাপসা আসছে কিংবা মোবাইল ফোনে ইন্টারনেটের গতি অনেক কমে গেছে। একসঙ্গে অনেকে মোবাইল ফোনে কথা বললে কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার করলেই এ সমস্যাটি দেখা যায়। ব্যবহারকারীদের জন্য সুখবর হচ্ছে, এ সমস্যা সমাধানে আসছে এলইডি তারবিহীন অপটিক্যাল কমিউনিকেশন।


মজার ব্যাপার হচ্ছে, কোনো মাধ্যমে নয়, সরাসরি আলো ব্যবহার করেই এবার ডাটা আদান-প্রদানের কাজটি সহজে সম্পন্ন করা যাবে। স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে ব্রেমেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মানির গবেষক অধ্যাপক হারাল্ড হাস এলইডি ব্যবহার করে এ নতুন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন। তার মতে, ভবিষ্যতে আলোকরশ্মির সাহায্যেই টেক্সট, ছবি, অডিও, ফাইল ইত্যাদি আদান-প্রদান করা সম্ভব হবে এবং বাল্বের আলোই এনে দেবে ইন্টারনেট সংযোগ। গবেষণাগারের একপাশে একটি সাদা বাক্সে রাখা আছে এলইডি ল্যাম্প এবং অন্যদিকে একটি রিসিভার, মাঝখানে কিছু নেই। অধ্যাপক হাস বলেন, পাশে রাখা এ এলইডিটি সঙ্গীত বহন করছে। এর প্রমাণ হলো, যখন আলোর কিরণে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে তখনই শব্দ থেমে যাচ্ছে। যখন বাধা সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে তখন আবার এ শব্দ শোনা যাচ্ছে। অর্থাৎ এই এলইডি ল্যাম্পের সাহায্যে শব্দ বহন করা হচ্ছে। বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বোঝানোর জন্য তিনি তার হাতটি কয়েকবার আলোর সামনে আনা-নেওয়া করেন এবং প্রতিবারই তার কথার সত্যতা প্রমাণিত হয়। প্রমাণিত হয়_ বাধা দেওয়া এবং বাধা সরিয়ে নেওয়ায় শব্দটি সহজেই থেমে যাচ্ছে ও বেজে উঠছে।
তথ্য আদান-প্রদানের নতুন এ আবিষ্কার এখন অধ্যাপক হাসকে স্বপ্ন দেখাচ্ছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, তিনি শুধু বাসা-বাড়ির আলোই নয়, রাস্তার আলোকেও তথ্য প্রদানের মাধ্যম হিসেবে সবার সামনে তুলে ধরতে চাচ্ছেন। তিনি এমন প্রযুক্তি করতে চাচ্ছেন, আলো থেকেই যে কেউ তার মোবাইল ফোনে ইন্টারনেটের সংযোগ পেয়ে যাবেন কিংবা শুধু আলো দিয়েই যে কেউ তার রেডিওটি চালু করতে পারবেন। গবেষক অধ্যাপক হারাল্ড হাস বলেন, 'আমাদের আশপাশে আলোর অনেক উৎস রয়েছে এবং এসব আলোর উৎস যখন ডাটা আদান-প্রদানে ব্যবহার সম্ভব হবে তখন আমাদের সামনে এক বিরাট সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে। শুধু তাই নয়, এর ফলে আমাদের গোটা তারবিহীন তথ্য আদান-প্রদানের পরিমাণও অনেক বেড়ে যাবে।' তবে এটিও ঠিক, এ গবেষণা শুধু গবেষণাগারে সীমাবদ্ধ রাখলেই চলবে না। তাছাড়া এ অভিনব প্রযুক্তি বাজারজাত করাটাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন তিনি।
এ প্রযুক্তির জন্য দরকার একটি ক্ষুদ্র ট্রান্স রিসিভার ব্যবস্থা। তার মধ্যে থাকবে প্রেরক ও গ্রাহক যন্ত্র। এলইডি বাল্ব, স্মার্ট ফোন এবং কম্পিউটার_ সব কিছুতেই এ প্রযুক্তি যুক্ত করা যেতে পারে। ফলে আলোর মাধ্যমেই গান, ছবি এবং ভিডিওর মতো ফাইল আদান-প্রদান করা সম্ভব হবে। অধ্যাপক হাস বলেন, আলোকে কথা বলাতে হলে আলোর ঘনত্ব বাড়াতে বা কমাতে হবে এবং এভাবেই আলোর মাধ্যমে তথ্যের আদান-প্রদান সম্ভব হবে। নতুন এ প্রযুক্তিতে মোবাইল ফোনের ইন্টারনেটের গতিতে বিরাট বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে_ এতে সন্দেহ নেই। এতে বহুগুণ বেড়ে যাবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতি। বর্তমানে পানির নিচে, বিমানের ভেতর কিংবা হাসপাতালে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা নিরাপদ নয়। নতুন এ প্রযুক্তিতে এসব জায়গাতেও নির্বিঘ্নে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে। অধ্যাপক হারাল্ড হাস বলেন, অদূর ভবিষ্যতে মানুষ দেখবে, তার টেবিলল্যাম্প কিংবা সিলিংয়ে লাগানো বাতিটি থেকেই সে খুব সহজে ইন্টারনেটে সংযোগ পাচ্ছে। তবে এ প্রযুক্তিকে আরও এগিয়ে নিতে হলে বেশকিছু পরীক্ষা দরকার বলে মনে করেন তিনি। কারণ আলো দেয়াল ভেদ করে যেতে পারে না। এ কাজটি বর্তমান তারবিহীন প্রযুক্তি সহজেই করতে পারে। এ প্রযুক্তি সাধারণের নাগালের মধ্যে থাকবে কি-না তাও একটি বড় প্রশ্ন। অন্যদিকে পরিবেশগত প্রভাবের বিষয়টি তো আছেই।
যাহোক, আলোর মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদানের নতুন এ আবিষ্কার আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে একটি বিরাট পাওয়া_ এতে সন্দেহ নেই।

No comments

Powered by Blogger.