আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের বিশাল জয়-ওয়ানডে স্ট্যাটাসের হাতছানি by সঞ্জয় সাহা পিয়াল

লাল-সবুজের পতাকাটা ভাঁজ করে কিটস ব্যাগের মধ্যেই গুছিয়ে এনেছিলেন। ডিজিটাল ক্যামেরাটাও কেউ কেউ সঙ্গে এনেছিলেন। আয়ারল্যান্ডকে হারালেই 'ওয়ানডে স্ট্যাটাস'_ এটা জেনে শুধু সালমা খাতুনরাই নন, ঢাকা থেকে ওবি ভ্যান নিয়ে টেলিভিশন চ্যানেলের ক্যামেরাও এসেছিল দিনটি স্মরণীয় করে রাখার জন্য। হঠাৎ সাভারের বিকেএসপিতে এমন আগ্রহের ঢল দেখে আইসিসির মিডিয়া ম্যানেজার লুসি বেঞ্জামিনই প্রথমে ভ্রম শোধরালেন।


'আজ জিতলেও আরও কয়েকটি দিন বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হবে ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়ার জন্য।' লুসির এ কথাটি মাঠে ব্যাট করার সময় কেউ সালমার কানে দেননি। 'আমাদের ইনিংস শেষ হয়ে যাওয়ার পরই শুনি, আজকের ম্যাচটি জিতলেও আরও দুটি ম্যাচ খেলতে হবে আমাদের। একটু মন খারাপ হয়েছিল বটে, তবে এদিনের জয়টা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এখন তো শুধু ওয়ানডে স্ট্যাটাস নয়, বিশ্বকাপ খেলার সম্ভাবনাও বেঁচে থাকল আমাদের।' আয়ারল্যান্ডকে ৯৫ রানে হারিয়ে সালমা তার ব্যাগে গুছিয়ে আনা পতাকা নিয়ে মাঠের চারদিকে ভিক্টরি ল্যাপ দিয়েছিলেন বটে, টেলিভিশন চ্যানেলও মাঠ থেকে লাইভ
দেখিয়েছিল সে মুহূর্তটি; কিন্তু ওয়ানডে মর্যাদা লাভের মঞ্চটা অধরাই থেকে গেল আরও কয়েক দিনের জন্য। কেননা গ্রুপ 'বি' থেকে তৃতীয় স্থান নিশ্চিত করার পর এখন পরের রাউন্ডে গিয়ে গ্রুপ 'এ'র দ্বিতীয় দলটির সঙ্গে খেলতে হবে বাংলাদেশকে। সম্ভবত সেই দলটি হবে শ্রীলংকা। ওই ম্যাচটি জিতে গেলে শুধু ওয়ানডে মর্যাদা নয়, বিশ্বকাপের টিকিটও মিলে যাবে সালমাদের। ওই ম্যাচটি জিততে না পারলে ওয়ানডে মর্যাদার জন্য জিম্বাবুয়ে বা যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে খেলতে হবে।
গতকাল এ সম্ভাব্য দলগুলোর নাম সালমাদের কোচ মমতা মাবেনই বলেন নিজ মুখে। যিনি নিজেও 'আজ জিতলে ওয়ানডে মর্যাদা' ভেবে মাঠে এসেছিলেন। মেয়েদের উজ্জীবিত করতে আয়ারল্যান্ডকে 'হারাতেই হবে' বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন ম্যানেজার দীপু রায় চৌধুরী। 'এখন আমাদের সামনে শুধু ওয়ানডে মর্যাদা নয়, বিশ্বকাপ খেলারও সম্ভাবনা জেগেছে। আর এটাই ছিল আমাদের আসল লক্ষ্য।' জিততেই হবে, এমন জেদ নিয়ে এদিন বিকেএসপিতে এসেছিলেন সালমারা। টস জিতে ব্যাটিংও বেছে নিয়েছিলেন সুযোগ বুঝে; কিন্তু দিনের ওপেনার আয়শা ২ রান করে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান। ওয়ান ডাউনে নামা ফারজানাও ১৪ রান করে রান আউটের শিকার হন। ৩৮ রানে ২ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরই সত্যিকারের লড়াইয়ে নামেন অধিনায়ক সালমা। সঙ্গে নেন আরেক ওপেনার শুকতারাকে। এদিন দু'জনের জুটিতে ২১.৪ ওভারে ৮৬ রান আসে। কভার ড্রাইভ, স্ট্রেট ড্রাইভ থেকে শুরু করে আইরিশ বোলারদের ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেলেন শুকতারা। কোনো ধরনের ঝুঁকি না নিয়ে বাজে বলগুলো শট খেলার জন্য বেছে নেন তিনি। ১২১ মিনিট ক্রিজে থেকে যখন হাফ সেঞ্চুরির কাছাকাছি শুকতারা, তখনই এলবিডবি্লউ হয়ে যান ৪৭ রানে। এর পরের জুটিতেও লতা মণ্ডলকে সঙ্গে নিয়ে ৪৯ রান করেন সালমা। এর মধ্যে সালমা নিজে হাফ সেঞ্চুরি করে ব্যাট তুলে সতীর্থদের হাততালির জবাব দেন; কিন্তু ক্লান্ত সালমা এরপর খুব বেশি দৌড়াতে পারেননি। এ সময় পাঁচ ব্যাটসম্যান রান আউট হন অনেকটা তার কারণেই। শেষের দিকে ক্লান্তিতেই সম্ভবত রানের গতি শ্লথ হয়ে যায়। শেষ পাঁচ ওভারে আসে মাত্র ৩১ রান। বাংলাদেশের শেষ চার ব্যাটসম্যান রান আউট হন। আইরিশদের নিখুঁত নিশানা ভেঙে দেয় সব উইকেট।
৭ উইকেটে ২০৯ রান করার পরই কিছুটা জয়-জয় গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে মাঠে। কেননা আইরিশদের ২৪ বছরের ক্রিকেট ইতিহাসে তারা পরে ব্যাট করে দুশ'র ওপর রান তুলতে পারেনি। সেখানে বাংলাদেশের দেওয়া ২১০ রানের টার্গেটটা অস্বস্তিকর ছিল আইরিশদের জন্য। তার ওপর আবার পান্নার প্রথম বলেই এলবিডবি্লউ হয়ে ওপেনার শিলিংটনের আউট হওয়াটা ঘাবড়ে দিয়েছিল বিদেশিনীদের; কিন্তু দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৬৮ রান চলে এলে কিছুটা চাপে পড়ে যান বাংলাদেশি মেয়েরা। এরপর অবশ্য চাপ থেকে দলকে এক হাতে বের করে আনেন নবাগত স্পিনার কুবরা। মাত্র ৩২ রানের খরচে তিনি ৬ উইকেট তুলে নেন। এরপর ৪৬ রান তুলতেই ৮ উইকেট হারিয়ে বসে আয়ারল্যান্ড। ম্যাচের মাঝে যখন কুবরা আইরিশ মেয়েদের বোল্ড করছেন, রির্টান ক্যাচ নিচ্ছেন_ তখন পাশের মাঠেই স্পিন প্র্যাকটিস শুরু করে দেন আইরিশ দলের লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানরা; কিন্তু স্পিন নয়, রান আউটেই নিচের দিকের দুটি উইকেট খুইয়ে বসে আয়ারল্যান্ড।
মাঠ থেকে বেরিয়েই ড্রেসিংরুমে কেঁদে ফেলেন বিদেশিনীরা। আর লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে মাঠ ঘুরতে থাকেন সালমারা। 'এই জয়ের পর ওয়ানডে মর্যাদা পাওয়াটা এখন সময়ের ব্যাপার। একটু অপেক্ষা করুন, আমরা এ টুর্নামেন্টেই ওয়ানডে মর্যাদা পাওয়ার সেলিব্রেশন করব।' কোচ মমতা মাবেনের এ আশা পাওয়ার পর খুশি মনেই ঢাকা ফিরেছিল মিডিয়ার সব গাড়ি।

No comments

Powered by Blogger.