ক্ষুধা দারিদ্র্যমুক্ত দক্ষিণ এশিয়া গড়ার অঙ্গীকার-ঢাবিতে দক্ষিণ এশিয়া সোশ্যাল ফোরামের উদ্বোধন

ক্ষুধা দারিদ্র্য ও সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনমুক্ত দক্ষিণ এশিয়া গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে গতকাল শুক্রবার থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শুরু হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী দক্ষিণ এশিয়া সোশ্যাল ফোরামের সম্মেলন। 'দক্ষিণ এশিয়ায় সামাজিক পরিবর্তনের জন্য গণতন্ত্র : অংশগ্রহণ, সাম্য, ন্যায্যতা ও শান্তি' প্রতিপাদ্য নিয়ে অনুষ্ঠেয় এ সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।


ভারত, পাকিস্তান, আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকা ও লাতিন আমেরিকার কয়েকশ' প্রতিনিধিসহ কয়েক হাজার মানুষের অংশগ্রহণে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাব হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়।
অনুষ্ঠানে উপমহাদেশের প্রখ্যাত সাংবাদিক কুলদীপ নায়ার বলেন, 'ক্ষুধা, বঞ্চনা, বৈষম্য, দারিদ্র্যমুক্ত যে দক্ষিণ এশিয়ার স্বপ্ন আমরা দেখি তার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ধর্ম, জাতি, সীমান্ত বিরোধের ঊধর্ে্ব উঠে ঐক্যবদ্ধ হতে না পারলে সে স্বপ্ন কখনোই সফল হবে না। সেজন্যই দক্ষিণ এশীয় হিসেবে আমাদের সম্মিলিত পরিচয়ে গর্বিত হতে হবে।'
ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি এগিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'ভারত সরকারের উচিত দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোকে প্রযুক্তি ও পুঁজি দিয়ে সহায়তা করা। যাতে দক্ষিণ এশিয়া সমতার ভিত্তিতে একযোগে এগুতে পারে।'
সম্মেলনের সহ-আয়োজক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, এ সম্মেলনের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার হবে। ২০০১ সালে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বিরুদ্ধে ব্রাজিলে সর্বপ্রথম জনগণ ও নাগরিক সমাজের সংগঠন হিসেবে ওয়ার্ল্ড সোশ্যাল ফোরামের যাত্রা শুরু হয়। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের দিলি্ল, হায়দরাবাদ ও মুম্বাই, পাকিস্তানে এ ফোরাম হলেও এবারই প্রথম বাংলাদেশে তা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ফোরামের সমন্বয়কারী মুহাম্মদ হেলালউদ্দিন সোশ্যাল
ফোরামের উদ্দেশ্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে পার্লামেন্টের ওপরে যাতে ক্যান্টনমেন্টের প্রভাব তৈরি না হয়। এক ভাগ জনগণের জন্য যাতে রাষ্ট্রের বেশির ভাগ সম্পদ ব্যয় না হয়। সেই লক্ষ্যে দেশে দেশে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ার জনগণকে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে হবে।
হাসানুল হক ইনু বলেন, আমরা এখন মানচিত্র রক্ষা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা, সাম্প্রদায়িকতা ও পুঁজিবাদের আগ্রাসন থেকে মুক্তি_ এ চারটি যুদ্ধের মধ্যে আছি। দক্ষিণ এশিয়া ফোরামের এ সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে চাই।
জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামের সভাপতি খন্দকার জহুরুল আলম বলেন, এক অন্যরকম দক্ষিণ এশিয়া গড়তে হলে সব ক্ষেত্রে আমাদের সমাজের অবহেলিত প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় আমাদের চেষ্টা ব্যর্থ হবে।
ইউরোপের প্রতিনিধি মাটি কোহেনেন বলেন, দক্ষিণ এশিয়াকে ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন থেকে মুক্তি পেতে হলে সম্মিলিত লড়াই শুরু করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আজকের এ সম্মেলন অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি বলেন, আমাদের এ অঞ্চলের খাদ্য ও খনিজসম্পদ সমস্যাসহ অন্য সমস্যার সমাধান করতে হলে দক্ষিণ এশিয়া থেকে অর্থপাচার রোধ করতে হবে। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়া থেকে বছরে ২০ বিলিয়ন ডলার কালো টাকা ধনী দেশে পাচার হয়ে যায়। খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন ও জ্বালানি সংকটে ভোগা দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের ভাগ্য বদলাতে হলে সম্পদ পাচার ও সম্পদ রক্ষার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
ভারতীয় নারী আন্দোলনের নেত্রী কমলা ভাসিন বলেন, আমরা স্বপ্ন দেখি দক্ষিণ এশিয়াকে আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনমুক্ত করার। আমরা স্বপ্ন দেখি অসাম্প্রদায়িক ও দুর্নীতিমুক্ত অঞ্চল হিসেবে দেখতে। কিন্তু এতে বাধা হয়ে আসে উন্নত রাষ্ট্রখ্যাত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদরা। তিনি তাদের এ আগ্রাসন থেকে মুক্তি পেতে সম্মিলিত আন্দোলনের আহ্বান জানান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ব্রাজিলের প্রতিনিধি রীতা ফেইরি, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পরিচালক শাহীন আনাম, নারী নেত্রী শিরিন আক্তার, ব্র্যাকের প্রতিনিধি শিপা হাফিজ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে আলোচনা পর্ব শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের খেলার মাঠে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।

No comments

Powered by Blogger.