'হোয়াইট ফ্ল্যাগ স্টেটমেন্ট' মামলা-সরত ফনসেকার তিন বছরের কারাদণ্ড

শ্রীলঙ্কার সাবেক সেনাপ্রধান সরত ফনসেকাকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন কলম্বো হাইকোর্ট। একটি সাপ্তাহিক পত্রিকাকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে বিশৃঙ্খলা উসকে দেওয়ার দায়ে গতকাল শুক্রবার আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেন। ফনসেকার বিরুদ্ধে দায়ের করা এ মামলা 'হোয়াইট ফ্ল্যাগ স্টেটমেন্ট' নামে অধিক পরিচিত। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন ফনসেকা।
এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বরে সামরিক আদালত সেনাবাহিনীর সরঞ্জাম ক্রয়-সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলায় ফনসেকাকে আড়াই বছরের কারাদণ্ড দেন। বর্তমানে ওই সাজা খাটছেন তিনি।
'হোয়াইট ফ্ল্যাগ স্টেটমেন্ট' মামলার এজাহার অনুযায়ী, ২০১০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় শ্রীলঙ্কার ইংরেজি ভাষার সাপ্তাহিক পত্রিকা 'সানডে লিডার'কে সাক্ষাৎকার দেন ফনসেকা (৬০)। সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেন, ২০০৯ সালে লিবারেশন টাইগারস অব তামিল ইলমের (এলটিটিই) সঙ্গে যুদ্ধের শেষ দিকে 'সাদা পতাকা' দেখিয়ে আত্মসমর্পণ করতে চাওয়া তামিল কমান্ডারদের হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী গোতাভায়া রাজাপাকসে। গোতাভায়া শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসের ভাই।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। গত ১৬ মাস ধরে চলা এ মামলার বিচার প্রক্রিয়ার সময় মন্ত্রী তাঁর বক্তব্যের পক্ষে প্রমাণ হাজির করেন। তবে ফনসেকা দাবি করেন, পত্রিকাটি তাঁর বক্তব্য যথাযথ প্রকাশ করেনি।
মামলায় ফনসেকার বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ ছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর ছিল মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে দেশে বিশৃঙ্খলা ছড়ানোর অভিযোগ। তবে গতকাল ফনসেকার বিরুদ্ধে রায় দেওয়া নিয়ে বিচারপতি দিপালী বিজেসুন্দরা, ডিএমপিডি বারাবেভা ও জুলফিকার রাজিনের বেঞ্চে মতভেদ দেখা দেয়। বিচারপতি বারাবেভা তিন অভিযোগ থেকেই ফনসেকাকে অব্যাহতি দেন। বাকি দুই বিচারপতি তাঁদের রায়ে বলেন, সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে ফনসেকা 'গুজব ছড়িয়েছেন এবং বিশৃঙ্খলা তৈরি' করে জরুরি আইন লঙ্ঘন করেছেন। তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বিশ্বাসযোগ্যতাকে হেয় করার এবং সরকারকে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়ানোর চেষ্টাও করা হয়েছে। তবে তারা বাকি দুই অভিযোগ থেকে ফনসেকাকে খালাস দেন।
ফনসেকা আদালতের রায় প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রায়।
রায় ঘোষণা সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে গতকাল আদালত চত্বরে বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে আদালত ভবনের বাইরে ফনসেকার সমর্থকরা ঠিকই বিক্ষোভ করেছে।
২০০৯ সালের মে মাসে ফনসেকার নেতৃত্বে এলটিটিইর বিরুদ্ধে যুদ্ধে সরকারি বাহিনী জয় পায়। সাবেক এ সেনাপ্রধান গত নভেম্বরে রাজনীতিতে যোগ দেন এবং ২৬ জানুয়ারির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেন। ওই নির্বাচনে হেরে যান ফনসেকা। নির্বাচনী ফল প্রকাশের দুই সপ্তাহ পর সেনা আইন লঙ্ঘনের জন্য ফনসেকাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাঁর বিচার শুরু হয়। সূত্র : বিবিসি, এএফপি, পিটিআই, আল-জাজিরা।

No comments

Powered by Blogger.