বিদ্যুতের দাম-নিশ্চিত করা হোক সরবরাহ

মাথাব্যথার আরেক কারণ বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। থেমে নেই লোডশেডিং। নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে এখনো অনিশ্চয়তা। এরই মধ্যে আবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব। গ্রাহক পর্যায়ে সব ধরনের বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন পিডিবির এ প্রস্তাব আমলে নিয়েছে। এখন দাম বাড়ানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।


তবে নিশ্চিত করে এটা আগাম বলে দেওয়া যায়, দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব যখন করা হয়েছে, তখন দাম বাড়ানো হবে। চাপটা শেষ পর্যন্ত যাবে ভোক্তাপর্যায়েই।
বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ক্ষেত্রে পিডিবি ও বিইআরসির যুক্তি নতুন কিছু নয়। এর আগে যতবার দাম বাড়ানো হয়েছে প্রতিবারই একই যুক্তি দেখানো হয়েছে। পিডিবির অব্যাহত লোকসান কমিয়ে আনতেই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর আগে গত ফেব্রুয়ারি ও আগস্ট মাসে দুই ধাপে পাইকারি বিদ্যুতের দাম ইউনিটপ্রতি প্রায় ১৬ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়। লোকসানের যে বিষয়টি বিইআরসি ও পিডিবি উল্লেখ করেছে, সেটা মূলত উৎপাদনে। পিডিবি বর্তমানে দৈনিক চার হাজার ৮০০ থেকে পাঁচ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। ডিসেম্বরের মধ্যে সরকারি খাতে তেলভিত্তিক আরো ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে। একটি হিসাব অনুযায়ী ফার্নেস অয়েল দিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করলে আট টাকার বেশি খরচ পড়ে। অন্যদিকে ডিজেল দিয়ে একই পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে ব্যয় হয় ১৬ টাকার বেশি। পিডিবির গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রে ওই বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে ব্যয় হয় অনেক কম। অন্যদিকে বিতরণ কম্পানিগুলোর কাছে পিডিবি বিদ্যুৎ বিক্রি করে প্রতি ইউনিট ২ দশমিক ৮১ টাকা। এর ফলে পিডিবিকে বছরে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে। কুইক রেন্টাল ও তেলভিত্তিক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং অন্যান্য আইপিপিকে (বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র) প্রতি মাসে বিল দিতে হয় দেড় হাজার কোটি টাকা। এই বিশাল অঙ্ক গুনতে হয় পিডিবিকে। এই খরচের বদৌলতে প্রাপ্তি কতটুকু?
গত জুনে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর গত জুন পর্যন্ত মোট এক হাজার ৯২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল তিন হাজার ২৬৮ মেগাওয়াট। গত জুনে সেই উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে চার হাজার ৮৯০ মেগাওয়াটে দঁাঁড়ায়। ২০১১ সালের জুনের মধ্যে স্থাপিত ৩১টি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে এক হাজার ৯২২ মেগাওয়াটসহ মোট তিন হাজার ১৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। সব মিলিয়ে বর্তমানে দেশে স্থাপিত সরকারি ও বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের সংখ্যা ৬২ এবং উৎপাদনক্ষমতা ছয় হাজার ৭২৭ মেগাওয়াট। কিন্তু দেশে বিদ্যুতের এই চাহিদা অনেক বেশি। বিদ্যুতের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। সেই চাহিদা সামাল দেওয়াটাই হবে বড় কাজ। বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির নতুন পরিকল্পনার আওতায় বর্তমান সরকারের মেয়াদে এ পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ৩৯টি চুক্তি হয়েছে। এসব চুক্তির আওতায় মোট চার হাজার ৫০৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৪১টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। তিন হাজার ৩০৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন। এসব কেন্দ্র চালু হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ কিছুটা বাড়বে বলে ধারণা করা যেতে পারে। পিডিবির লোকসানের অন্যতম কারণ 'সিস্টেম লস' নামের চুরি, সেটা কমাতে না পারলে বিদ্যুৎ খাত কোনো দিন লাভের মুখ দেখবে না।
উৎপাদন খরচ বাড়লে ভোক্তাপর্যায়ে দাম বাড়বে_এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বারবার দাম না বাড়িয়ে একবারে বাড়িয়ে দেওয়াই উত্তম। তবে দাম বাড়ানোর পরও সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে কি না, সেটা বড় প্রশ্ন হয়েই থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.