করের আওতায় মন্ত্রিসভা-সম্পদের হিসাবও প্রকাশ করুন

বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তি হিসেবে মন্ত্রিসভার সদস্যদের বেতন-ভাতা করের আওতামুক্ত। মন্ত্রিসভার সদস্যদের বাইরে স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার ও বিচারকরাও এই সুবিধা ভোগ করেন। বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে দুটি আইন সংশোধনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের বেতন-ভাতা আয়কর আইনের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দি প্রাইম মিনিস্টার (রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজেস) অ্যাক্ট-১৯৭৫ এবং দি মিনিস্টারস, মিনিস্টারস অব


স্টেট, ডেপুটি মিনিস্টারস (রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজেস) অ্যাক্ট-১৯৭৩ সংশোধনের মাধ্যমে করের নতুন আওতা কার্যকর হবে। বিভিন্ন বিবেচনায় এটি অত্যন্ত শুভ একটি পদক্ষেপ হিসেবে গৃহীত হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সাম্প্রতিককালে সাধারণ নাগরিকদের আয়কর দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করে যাচ্ছে। রাজস্ব বোর্ডের উদ্যোগ, গণমাধ্যমের উৎসাহে কর দেওয়ার ব্যাপারে নাগরিকদের মধ্যে এক ধরনের সচেতনতাও জাগ্রত হয়েছে। অনেকেই এখন নিজ উদ্যোগে কর দেওয়ার ব্যাপারে উৎসাহী। কর মেলায় গিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নাগরিকরা কর দেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক দায়িত্ব পালন করছেন। তারপরও করের আওতায় আসতে পারেন এমন বহু মানুষ কর দিচ্ছে না। এর জন্য প্রধানত অসচেতনতা দায়ী। আবার অনেকে নানা উপায়ে কর ফাঁকি দিয়ে রাষ্ট্রকে প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করছেন। যদিও এটি সুনাগরিকোচিত দৃষ্টিভঙ্গি নয়। আয়কর আইনের আওতায় থাকা রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিক যদি নিয়মিত আয়কর পরিশোধ করতেন, তবে তা হতো সবচেয়ে সুখকর বিষয়। নাগরিকদের কাছে যখন আয়কর বিষয়ে স্বচ্ছ অবস্থান আশা করা হয় তখন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আয়করের আওতার বাইরে থাকা সুখকর অভিজ্ঞতা নয়। রাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় ও পদস্থ ব্যক্তিরা কর দেন না_ এ তথ্য নাগরিকদের নিরুৎসাহিত করতে পারে। সেদিক থেকে মন্ত্রিসভায় আইন বদলের সিদ্ধান্ত নাগরিকদের উৎসাহিত করবে সন্দেহ নেই। পাশাপাশি মন্ত্রীদের আয়-ব্যয়ের হিসাবেও স্বচ্ছতা আনবে এ উদ্যোগ। তবে শুধু রাষ্ট্রীয় বেতন-ভাতার ক্ষেত্রে করের বিধানই যথেষ্ট নয়। কেননা রাষ্ট্রীয় বেতন-ভাতার বাইরে তাদের উপার্জনের উপায় থাকতে পারে। বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যক্তি হিসেবে রাষ্ট্রীয় আইন যেভাবে তাদের করের আওতামুক্ত করেছে তেমনি পদস্থ ব্যক্তি হিসেবে তারা বাড়তি সুবিধা পেতে পারেন। অতীতে অভিযোগ উঠেছে, ক্ষমতাসীন থাকার সুবিধা কাজে লাগিয়ে মন্ত্রীরা অবৈধ সম্পদের প্রাচুর্য গড়ে তুলেছেন। বোধগম্য কারণেই সে সম্পদ আয়করের আওতার বাইরে থেকে গেছে। ভবিষ্যতেও এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তাই নাগরিকরা সবসময়ই শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সম্পদের হিসাব প্রকাশ করার তাগিদ দিয়ে থাকেন। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সঙ্গে প্রতিবছর নিয়ম করে সম্পদের হিসাব প্রকাশ করলে পদস্থ ব্যক্তিরা অযাচিত সন্দেহ ও উড়ো কথা থেকেও রেহাই পেতে পারেন। সবচেয়ে বড় কথা, এর মাধ্যমে গণতান্ত্রিকতা ও জবাবদিহিতার সংস্কৃতি বেগবান হতে পারে। মন্ত্রিসভার সদস্যরা যদি স্বেচ্ছায় এমন জবাবদিহিতার সংস্কৃতি চালু করেন তবে সেটি খুবই আনন্দদায়ক ঘটনা বলে বিবেচিত হবে। মন্ত্রিসভার সদস্যদের আয়করের আওতায় আনার যে উদ্যোগ নেওয়া হলো তা সফল হোক। আমরা আশা করব, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার এ উদ্যোগ এখানেই থমকে যাবে না। পদস্থ ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের আয়-ব্যয় ও সম্পদের হিসাব জনসমক্ষে প্রকাশের উদ্যোগও আসুক।

No comments

Powered by Blogger.