অর্থনীতি-উদ্বেগ নিরসনে দৃঢ় পদক্ষেপ চাই

দেশে উচ্চহারে মূল্যস্ফীতি, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে ধীরগতি, বৈদেশিক আয় কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় না থাকা, রেমিট্যান্স প্রবাহে নিম্নগামিতা, পুঁজিবাজারে চরম অস্থিরতা, করবহির্ভূত আয়ের নিম্নমুখিনতা সর্বোপরি ভর্তুকির প্রবল চাপ_ এসব কারণে অর্থনীতির চিত্র হতাশাজনকই বলতে হবে। বিশ্ব অর্থনীতিতেও ফের মন্দার পূর্বাভাস স্পষ্ট। বৃহস্পতিবার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বা সিপিডি সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে


বলেছে_ জটিল সময় পার করছে দেশের অর্থনীতি। একই দিনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত স্বীকার করেছেন, প্রবৃদ্ধির হার বাড়ানোর জন্য অপরিহার্য শর্ত সরকারি খাতের দক্ষতা বাড়ানো এবং বিদেশি বিনিয়োগ উচ্চমাত্রায় নিয়ে যাওয়া_ এসব লক্ষ্য অর্জনে যথেষ্ট ঘাটতি রয়ে গেছে। তবে তার দাবি_ ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ এখনও চলতি বছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কমই রয়েছে। এ ধরনের মতপার্থক্য বা বিতর্ক অর্থনীতিতে স্বাভাবিক এবং তা নীতিনির্ধারকদের কাঙ্ক্ষিত সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সহায়তা করে। আমরা আশা করব, সিপিডি এবং এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের অর্থনীতি সংক্রান্ত অভিমত ও সুপারিশগুলো সরকার বিবেচনায় নেবে। সিপিডি ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে আনার জন্য জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর মতো 'অজনপ্রিয়' সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্যও সুপারিশ করেছে। একই সুপারিশ এসেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছ থেকে। সম্প্রতি এ সংস্থার নির্বাহী পরিচালকদের সভায় স্থানীয় বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে একই সঙ্গে তারা দরিদ্র জনগোষ্ঠী যেন আরও চাপের মধ্যে না পড়ে সে বিষয়ে সরকারকে সতর্ক থাকতে বলেছে। একইদিনে প্রতিবেশী ভারতে জ্বালানি তেলের দাম আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে। উন্নত, উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত প্রতিটি দেশেই জ্বালানি তেল এবং এ ধরনের অপরিহার্য পণ্যের দাম বাড়ানো হলে ভোক্তাদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়ে থাকে। বাংলাদেশ সরকারের জন্য এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ বিশেষভাবে কঠিন। মূল্যস্ফীতি দশ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হলে তাতে ঘৃতাহুতি পড়বে সন্দেহ নেই। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল দরিদ্রদের ওপর চাপ কমাতে ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে। বাংলাদেশে খোলাবাজারে ভর্তুকি মূল্যে চাল বিক্রি এবং ভিজিএফ কার্ডের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্য সরবরাহসহ বেশকিছু সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি চালু রয়েছে। আমন ধানের ফলনও আশাব্যঞ্জক। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যখন খাদ্যশস্যের বাজার অস্থির, সে সময়ে বাংলাদেশের কৃষকরা খাদ্য চাহিদার প্রায় পুরোটাই উৎপাদন করতে পারছেন। আমন চাল বাজারে এলে খাদ্যের বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করা যায়। এ বাজারে যেন অসাধু ব্যবসায়ীরা অস্থিরতা সৃষ্টি করতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। একই সঙ্গে আরেকটি কঠিন কাজ হচ্ছে উৎপাদক অর্থাৎ কৃষকের স্বার্থ রক্ষা করা। মৌসুমে ধান-চালের বাজার অস্বাভাবিক পড়ে গেলে তারা লোকসানে পড়বেন এবং উৎপাদনে নিরুৎসাহবোধ করবেন। সর্বোপরি কৃষক ফসলের ন্যায্যমূল্য না পেলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, যা শিল্প ও বাণিজ্য খাতের প্রবৃদ্ধিও ব্যাহত করে। এই নানামুখী চাপ সামলানো মোটেই সহজ নয়। সরকারের জন্য সুপারিশ-পরামর্শ রাখা যত সহজ, তা অনুসরণ করা অর্থমন্ত্রীর জন্য ততই কঠিন এবং প্রায়শই মাত্রাতিরিক্ত তেতো। কিন্তু জটিল সময় পেরিয়ে আসতে হলে বিকল্পও কিন্তু নেই।

No comments

Powered by Blogger.