দেশেই বিশ্বমানের ড্রেজার by শাহ মতিন

নেক দুঃসংবাদের ভিড়ে একটি সুসংবাদ_স্বাধীনতার ৪০ বছর পর এই প্রথম বিশ্বমানের তিনটি কম্পিউটারাইজড ড্রেজার তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। ড্রেজার তিনটি নেদারল্যান্ডসের ভোস্টা এলএমজির সঙ্গে যৌথ অংশীদারিত্বে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স তৈরি করেছে। প্রাথমিক ট্রায়াল সম্পন্ন করে ড্রেজার তিনটি মুন্সীগঞ্জের মাওয়া নৌঘাট ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে পলিমাটি অপসারণে ব্যবহার করা হচ্ছে।


নতুন ড্রেজার তিনটি বিআইডবি্লউটিএর বহরে যোগ হওয়ায় ড্রেজিং-ক্ষমতা আরো ২০ লাখ ঘনমিটার বৃদ্ধি পেয়ে এখন ৫০ লাখ ঘনমিটারে উন্নীত হয়েছে। ড্রেজার নির্মাণের এমন সংবাদ বাংলাদেশের জন্য চমকই বটে। বাংলাদেশ যে পিছিয়ে নয়, অনেকখানি এগিয়ে গেছে এ খবর তারই সুস্পষ্ট প্রমাণ। এই অগ্রগতি আগামীতে আরো হিরন্ময় এক বাংলাদেশেরই ইংগিত।
ড্রেজার নির্মাণের এই অগ্রগতির খবরটির জন্য কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের এমডি ইঞ্জিনিয়ার আলহাজ এম এ রশিদ নিঃসন্দেহে ইতিহাস হয়ে থাকবেন এবং জাতির গর্বিত সন্তান হিসেবে বিবেচিত হবেন। দেশের নদীপথের নাব্য যে অনেক স্থানেই তার চিরায়ত রূপটি হারিয়ে ফেলেছে, তা সবাই জ্ঞাত। নাব্য হারিয়ে নৌপথে নৌযান চলাচলও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ক্রমেই এই দুরবস্থার মাত্রা বেড়েই চলছে। এমতাবস্থায় নদীতে ড্রেজিং হয়ে ওঠে অপরিহার্য। সে ক্ষেত্রে দেশেই যদি ড্রেজার তৈরি সম্ভব হয়, তবে আমরা দুরবস্থাটি কাটিয়ে তুলতে অনেকখানি ভরসা পাব। নৌপথের দুরবস্থা নিরসনে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে গুরুত্বপূর্ণ নৌরুট পুনরুদ্ধারে ব্যাপক উদ্যোগ নেয়। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবেই ড্রেজার সংগ্রহের উদ্যোগ নেয় বিআইডাবি্লউটিএ। 'অভ্যন্তরীণ নৌপথের নাব্য রক্ষার্থে দুইটি ড্রেজার, ক্রেনবোট, ক্র-হাউজবোট ও আনুষঙ্গিক সরঞ্জামাদি সংগ্রহ' শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় দুইটি ও বিআইডাবি্লউটিএর নিজস্ব অর্থায়নে ১টি; মোট তিনটি ড্রেজার সংগ্রহের জন্য সরকার ও ভোস্টা এলএমজি-কর্ণফুলী জয়েন্ট ভেঞ্চার কনসোর্টিয়াম লিমিটেডের মধ্যে ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর চুক্তি সম্পাদিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী নেদারল্যান্ডসের ভোস্টা এলএমজির সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও কারিগরি নির্দেশনায় চট্টগ্রাম কর্ণফুলী থানা এলাকায় ইছানগরে ড্রেজার তিনটি নির্মাণ করা হয়েছে। যদিও ডেজারের যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ আমেরিকা-ইউরোপ থেকেই আনা। তার পরও দেশে নির্মাণ করতে পারাটা হৈচৈ ফেলে দেওয়ার মতোই ব্যাপার বটে।
নির্মিত ড্রেজার সম্পর্কে কর্ণফুলী শিপইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ জানায়, ড্রেজার তিনটি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআইডাবি্লউটিএ) হস্তান্তরের আগে প্রকৌশলীদের দিয়ে ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। বিআইডাবি্লউটিএ জানায়, কম্পিউটারাইজড এ ড্রেজার তিনটি জ্বালানি সাশ্রয়ী। দেশের নদ-নদীগুলোর তীব্র নাব্য সংকট মোকাবিলায় বিআইডাবি্লউটিএ তার সীমিত সামর্থ্য দিয়ে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশে নির্মিত ড্রেজার ভালোই সার্ভিস দিচ্ছে। যা আশাবাদী হওয়ার মতো। অপরদিকে ড্রেজার তিনটি পাওয়ার পর বিআইডাবি্লউটিএর ড্রেজারবহরের ড্রেজিং-ক্ষমতা আরো ২০ লাখ ঘনমিটার বৃদ্ধি পেয়ে মোট ৫০ লাখ ঘনমিটারে উন্নীত হয়েছে। এতে অভ্যন্তরীণ নৌরুট, ফেরি রুট, বেসিন এবং চ্যানেলগুলোর নাব্য বৃদ্ধি পাবে। এর আগেও বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের বিস্ফোরণে ধ্বংসপ্রাপ্ত ১৫ হাজার টন ধারণক্ষমতার তেলবাহী জাহাজ বাংলার সৌরভ পুনর্নির্মাণ করে ইতিহাস সৃষ্টি করে কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড। তারা গর্বের সঙ্গেই মিডিয়াকে জানায়, বাংলাদেশে এই প্রথম আমরা ড্রেজার তৈরি করছি। ভুলত্রুটি থাকতে পারে। আশা করছি, আগামীতে কোনো ভুলত্রুটি হবে না। কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের এমডি প্রকৌশলী আবদুর রশিদ বলেন, ১৯৭৪ সালের পর বাংলাদেশে কোনো কাটার সাকশান ড্রেজার সংগ্রহ করা হয়নি। ৩৫ বছরের পুরনো ড্রেজারগুলো ড্রেজিংয়ের ক্ষেত্রে চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে। নতুন ড্রেজার সংগ্রহ সময়ের দাবি। নতুন এ তিনটি ড্রেজার ২০ বছর ভালো সার্ভিস দেবে। দেশে জাহাজ নির্মাণ করে বিদেশে রপ্তানির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির ইতিহাস মাত্র কয়েক বছরের। বাংলাদেশে নির্মিত জাহাজ অন্য দেশের হয়ে বিশাল সমুদ্রপথে বাংলাদেশেরই অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। এটা গর্বিত হওয়ার মতোই ব্যাপার।
লেখক : সাংবাদিক

No comments

Powered by Blogger.