রোডমার্চের পর ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচি!-বাধ্য না হলে হরতাল নয় by মোশাররফ বাবলু

খুলনা অভিমুখে দুই দিনের রোডমার্চ ও জনসভা সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। ওই রোডমার্চের পর পরই বরিশাল ও রংপুর বিভাগে জনসভা এবং আগামী জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের একটি সূত্রে জানা যায়, সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বাধা না এলে বিএনপি আপাতত হরতাল কর্মসূচির দিকে যাবে না। চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চ-উত্তর জনসভা থেকে সরকারবিরোধী কঠোর


আন্দোলনের ডাক দেবেন খালেদা জিয়া। জানা গেছে, রোডমার্চ ও বৃহত্তর জেলাগুলোতে জনসভা শেষে ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়ার কথা ভাবছে বিএনপি।
দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, বিএনপি আর হরতালের মতো জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কর্মসূচির দিকে যাচ্ছে না। বর্তমানে সারা দেশে জেএসসি পরীক্ষা চলছে। ২৩ নভেম্বর থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সমাপনী পরীক্ষা শুরু হবে। এ ছাড়া আছে বিভিন্ন স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা। আগামী বছরের প্রথম দিকে শুরু হবে এসএসসি পরীক্ষা। এসব দিকে খেয়াল রেখে বিএনপি আপাতত হরতালের মতো বড় কোনো কর্মসূচিতে যাচ্ছে না। খুলনার রোডমার্চের পর বরিশালে ও রংপুর বিভাগে জনসভা এবং চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চ হবে। এসব রোডমার্চ ও জনসভা থেকে হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা ভাবছে না বিএনপি। তবে ঢাকা ঘেরাও, গণমিছিল ও অবস্থান ধর্মঘটের মতো কর্মসূচি আসতে পারে বলে দলের ওই নেতা জানান।
দলের অন্য এক নেতা বলেন, 'হরতাল আসবে না তা ঠিক নয়। সরকার বাধা দিলে হরতালও আসতে পারে। তবে আমরা চাই না এই মুহূর্তে হরতাল দিতে। তাই বিষয়টি সরকারেরও ভাবা উচিত।'
বিএনপির রোডমার্চ ও আন্দোলন প্রসঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, 'তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে আমাদের আন্দোলন চলছে। এটা শুধু বিএনপির দাবি নয়, সারা দেশের গণমানুষের দাবি। এই দাবি মেনে না নিলে চট্টগ্রামের রোডমার্চের পর সরকারকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।' তিনি আরো বলেন, সিলেট ও রাজশাহীর রোডমার্চে লাখো মানুষের ঢল নেমেছিল। খুলনার রোডমার্চেও একইভাবে মানুষের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে যদি কোনো বাধা না আসে তাহলে শান্তিপূর্ণভাবে এবারের রোডমার্চ ও জনসভা সফল হবে।
রোডমার্চে নেতৃত্ব দেবেন সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। রোডমার্চ ও জনসভা সফল করার পাশাপাশি সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে দলের সিনিয়র নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বিএনপির প্রবীণ ও তরুণ নেতাদের ঐক্যবদ্ধ করারও তাগিদ দিয়েছেন খালেদা জিয়া ।
খালেদা জিয়ার নির্দেশের পর খুলনা বিভাগের ১০ জেলার বিএনপি নেতাদের সঙ্গে গত মঙ্গলবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বৈঠক করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং রোডমার্চের প্রধান সমন্বয়ক দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম। বৈঠকে উপস্থিত জেলা নেতারা বলেন, জনগণকে সম্পৃক্ত করতে না পারলে সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার হবে না। তাঁরা জানান, খুলনায় যাওয়ার পথে পথে শত শত তোরণ নির্মাণ করার কাজ চলছে।
এদিকে রোডমার্চের প্রধান সমন্বয়কারী তরিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, রোডমার্চের দিনক্ষণ ও রুট চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখন ব্যাপক প্রস্তুতির কাজ চলছে। গত ১০ ও ১১ অক্টোবর ঢাকা থেকে সিলেট এবং ১৮ ও ১৯ অক্টোবর ঢাকা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ অভিমুখে রোডমার্চ হয়েছে। দুটি বিভাগের রোডমার্চেই মানুষের ঢল নেমেছিল। খুলনার রোডমার্চেও মানুষের ঢল নামবে।
সিলেট ও রাজশাহী অভিমুখে রোডমার্চ ও জনসভা করেছে বিএনপি। আগামী ২৬ ও ২৭ নভেম্বর খুলনা অভিমুখে রোডমার্চ করবে দলটি। দলের নেতাদের আশা, আগের রোডমার্চের চেয়ে খুলনার রোডমার্চ ব্যাপকভাবে সফল হবে। ২৬ নভেম্বর সকাল ১০টায় বিএনপির চেয়ারপারসন তাঁর গুলশানের কার্যালয় থেকে গাড়িবহর নিয়ে খুলনার উদ্দেশে রওনা হবেন। এবারের রোডমার্চে ঢাকা থেকে কমসংখ্যক গাড়ি নেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে যেসব জেলা দিয়ে রোডমার্চ খুলনায় যাবে ওই সব জেলার নেতাদের রোডমার্চ বহরে অন্তর্ভুক্ত করবে বিএনপি। ঢাকা থেকে উত্তরা, টঙ্গী, গাজীপুর বাইপাস হয়ে কালিয়াকৈর, বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু পার হয়ে পাবনা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ হয়ে যশোর দিয়ে খুলনায় যাবে রোডমার্চ। পাবনার দাসুরিয়ায় পথসভা ও বিকেলে কুষ্টিয়া কলেজ মাঠে জনসভা এবং ঝিনাইদহে আরেকটি পথসভা হবে। যশোর সার্কিট হাউসে রাত কাটাবেন খালেদা জিয়া। ২৭ নভেম্বর যশোরে পথসভা হবে। পথসভা শেষে রোডমার্চ আবার খুলনা অভিমুখে রওনা হবে। বাগেরহাটে হজরত খানজাহান আলী (রহ.)-এর মাজার জিয়ারত করে খালেদা জিয়া খুলনা সার্কিট হাউসে উঠবেন। বিকেলে সার্কিট হাউস মাঠে চার দলের জনসভায় বক্তব্য দেবেন তিনি। রাতেই ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে তাঁর।
ধামরাইয়ে জনসভা ২২ নভেম্বর : এদিকে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৪৭তম জন্মদিন ২০ নভেম্বর। এ উপলক্ষে নানা কর্মসূচির মধ্যে ২২ নভেম্বর ধামরাইয়ে হার্ডিঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। ওই জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন খালেদা জিয়া। জন্মদিনের কর্মসূচির মাধ্যমে তরুণসমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে চান তিনি।

No comments

Powered by Blogger.