গড বেল্গস আমেরিকা by মিনার মাহমুদ

বিকেলে ঘুম থেকে জেগে, কাজে যাওয়ার প্রস্তুতির সময়ে দরজায় বেল। খুব অস্বাভাবিক ব্যাপার। কারও আসার কথা নেই। আবার অকারণে কেউ আসে না এখানে। দরজার বাইরে ক্ষুদে দুই কিশোর। একজন সেজেছে ব্যাটম্যান পোশাকে, বাকিটা ভূতের। একদম মনে ছিল না, আজ 'হ্যালোইন ডে'। বছরের এই একটি মাত্র দিনে প্রতিবেশী শিশু-কিশোররা দরজায় আসে। একটাই প্রশ্ন তাদের : ট্রিক অর ট্রিট?_ ট্রিক মানে আজ যেহেতু ভূতের দিন, তাই সেই


আসন্ন ভূত থেকে নিস্তারের কোনো চাতুরী জানা আছে কি-না। নইলে ট্রিট_ সবাইকে একটা করে চকোলেট বা কিছু দেওয়া। ট্রিকের পথ অযথা, সবাই ট্রিট করে বাচ্চাদের।
গতবারও আগের রাতে স্টোর থেকে চকোলেট ব্যাগ কিনে রাখা হয়েছিল। এবার বেমালুম_। ওদের অপেক্ষা করতে বলে দুটি সিঙ্গেল ডলার নিয়ে ফেরত। 'কিছু মনে করো না বাছারা! দুটি টাকা নাও চকোলেটের বদলে।'
খুশি হয়ে চলে যায় হ্যালোইন পার্টি। মাইক্রোতে চা দিয়ে, পিসি নিয়ে বসা। ঢাকার দুই-একটা পত্রিকার হেডলাইন। বাইরে শীত অনেক। কয়েক প্রস্থ কাপড় চাপানোর সঙ্গে লাল চা_। দরজায় আবার বেল! হ্যালোইন পার্টি হবে। দরজা খুলে এবার হতভম্ব হতে হয়। বিশাল একদল মুখোশধারী! ২০ জনেরও বেশি। ওদের সেই একই উল্লসিত প্রশ্ন : ট্রিক অর ট্রিট? একটু আগের দুই ডলার অজর্নকারীদের তথ্যভিত্তিক প্রচারের ফল। আর নয় জনপ্রতি ডলার। ঘাড়ে কাজের ব্যাগ নিয়ে রাস্তায় বিশাল একটি দলের নেতৃত্ব। ওদের বলা হয়েছে, এবার চকোলেট কিনে দিচ্ছি। লাগছিল হ্যামিলনের সেই বংশীবাদকের মতো। মোড়ের মুদি দোকানে ওদের পছন্দে কেনা হলো চকোলেট ব্যাগ_ তিন ডলার ৫৭ সেন্ট দাম।
সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে আমেরিকায় আছে কিছু অযথা মানসিক রোগী। এমনই একজন এক হ্যালোইনে চকোলেটে বিষ মিশিয়ে কিছু শিশুকে খুন করে। এর পর থেকে সংগৃহীত চকোলেট স্থানীয় ধনী পরিবারগুলোতে খাওয়া হয় না। কিন্তু দরিদ্র হিস্পানিক (দক্ষিণ আমেরিকা) আর উপমহাদেশীয় শিশুরা খায় এসব ট্রিট_।
এক হ্যালোইন রাতে, হলুদ ট্যাক্সিতে যাত্রীর সাজে খুব কৌতূহল। এদিন যে যেমন খুশি সাজোর দিন_। অবিকল সম্রাট টিপু সুলতানের মতো সাজে সেজেছে একজন আমেরিকান তরুণ। পনেরো-ষোলোটি হ্যালোইন রাতে বিশ-ত্রিশ হাজারের বেশি বিচিত্র সব পোশাক দেখা আছে। কিন্তু মহান বীর টিপু সুলতানের পোশাকে এই প্রথম কাউকে দেখা। দূরের গন্তব্য। অধিকাংশ আমেরিকানই, ফরাসিদের মতোই নিজে বকতে এবং অন্যকে বকবক করাতে ভালোবাসে। চুপচাপ বসে ছিলেন পেছনের সিটে। অনুমতি নিয়ে শুরু হয় কৌতূহলের সব প্রশ্ন। জানা গেল_ টিপু সুলতান বিষয়ে ব্যাপক আগ্রহ তার। বিশ্ববিদ্যালয়ে 'মেজর' ইতিহাস। বিশেষ পর্ব হিসেবে পছন্দ করেছেন উপমহাদেশের ইংরেজবিরোধী আন্দোলন। টিপু সুলতান হচ্ছেন তার জানামতে অবিভক্ত ভারতের সবচেয়ে বড় আইডল। এরপর অবলীলায় বলে দেন তার রাজনৈতিক অবস্থান, তিনি ব্রিটিশবিরোধী। আরও বলেন, আমেরিকান পলিসিও ইংরেজবিরোধী। ওদের ডানহাতি গাড়ির বিরোধিতা করে আমেরিকা করল বাঁ হাতে চালিত। বাতির সুইচও উল্টো...। ব্রিটিশ বিরোধিতায় আমেরিকানদের এই গাড়ি আর বাতির সুইচ শুনে কান ঝালাপালা হয়ে গেছে। থামিয়ে এবার নিজের রাজনৈতিক সংহতি প্রকাশ করা হলো। ইচ্ছে হয় জিজ্ঞেস করতে : বাঁ দিকে গাড়ি আর সুইচ ছাড়া আর কোন উল্লেখযোগ্য উদাহরণ আছে? করা হয় না। _কেননা, নেই। এমনকি সবখানে ওজনের মাপ আজও আমেরিকায়_ সেই পুরনো ব্রিটিশ পদ্ধতির পাউন্ড, রাস্তায় গজ, মাইল। গ্যাস স্টেশনে গ্যালন। ওজনে কিলো আর রাস্তায় কিলোমিটারের হিসাব আইন করে চালু করলে সেদিনই আমেরিকার রাস্তায় লাখ লাখ গাড়ি বসে যাবে তেলের হিসাবে ভুল হওয়ায়। আকাশেও থেমে যেতে পারে একটি-দুটি পেল্গনের ইঞ্জিন। অঙ্কে আমেরিকানদের মতো এমন ভয়াবহ স্টুপিড আর কোনো জাতি আছে কি-না পৃথিবীতে, জানা নেই। সাত আর চার যোগ করতেও টিপতে থাকে ক্যালকুলেটর। গড বেল্গস আমেরিকা।
minar.mahmood@gmail.com
 

No comments

Powered by Blogger.