ঈদুল আজহা-ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর হয়ে উঠুক

মুসলমানদের ঘরে ঘরে আবারও খুশির বারতা বয়ে নিয়ে আসছে পবিত্র ঈদুল আজহা। ইতিমধ্যে ঘরে ঘরে ঈদের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। শহরবাসী মানুষ গ্রাম ও মফস্বলে প্রিয়জনের উদ্দেশে যাত্রা করেছেন। ঈদের প্রস্তুতি হিসেবে কোরবানির পশু বিক্রির হাটগুলো জমজমাট হয়ে উঠেছে। শহর-গ্রামের রাস্তায় কোরবানির উদ্দেশ্যে কেনা পশু নিয়ে মানুষের নানা আয়োজনও চোখে পড়ছে। ঈদুল আজহাকে আমাদের দেশে কোরবানির ঈদ বা বকরি ঈদ হিসেবেও


অভিহিত করা হয়। কেউ কেউ এ ঈদকে বড় ঈদও বলেন। তাৎপর্যের দিক থেকে ঈদুল আজহার গুরুত্ব অনেক। এ ঈদের সঙ্গে মুসলমানদের সুপ্রাচীন ঐতিহ্যের যোগ আছে। হজরত ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহর উদ্দেশে তার প্রিয় সন্তানকে কোরবানি দিতে গিয়ে ত্যাগের যে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন তা স্মরণ করতে গিয়ে মুসলমানরা প্রতি বছর জিলহজ মাসের ১০ তারিখে কোরবানি দিয়ে থাকেন। তাই এটি শুধু পশু কোরবানি নয়_ এ হলো মুসলিম জাহানের ঐক্য ও সংহতির স্মারক। আর পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে শুধু পশুটিকেই কোরবানি দেওয়া হয় না। এর মধ্য দিয়ে পরম করুণাময়ের সন্তুষ্টি যেমন কামনা করা হয়, তেমনি মানুষের অন্তরের কালিমা ও পশুত্বকেও কোরবানি করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। প্রিয় পশুকে কোরবানি দিয়ে মুসলমানরা নিজের ভেতরের নেতিবাচক দিকগুলো থেকে মুক্তিলাভের আশা পোষণ করেন। এ মাসেই পবিত্র হজ উদযাপিত হয়। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর পুণ্য স্মৃতিকে স্মরণ করতে গিয়ে এ মাসে মুসলমানরা মহানবী হজরত মুহম্মদ (সা.)-এর নির্দেশিত পথে মক্কা নগরীতে সমবেত হন। সেখানে হজের সুপ্রাচীন ঐতিহ্যগুলো পালন করেন এবং কোরবানি দেন। এতে করে হজযাত্রীদের নবজন্ম ঘটে_ তাদের অন্তর হয় কলুষমুক্ত। যারা হজ পালন করতে না গিয়ে নিজ নিজ ঘরে বসে কোরবানি দেন তারাও একই ঐতিহ্যের সঙ্গে নিজেদের একাত্ম করেন। এই সুমহান ঐতিহ্য সত্ত্বেও কোথাও কোথাও কোরবানিকে কেন্দ্র করে ভোগবিলাসের নজির দেখা যায়। কেউ কেউ এ উৎসবকে শুধু পশু জবাই ও ভূরিভোজনের উৎসব হিসেবে দেখে থাকেন। এমনকি ধর্মীয় বিধান মেনে, গরিব-দুঃখী ও প্রতিবেশীদের মধ্যে মাংস বিতরণেও অনেককে দ্বিধান্বিত দেখা যায়। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ঈদের আনন্দ সবার মধ্যে ভাগ করে নিতে পারলেই তা মহত্ত্বের মর্যাদা পায়। শুধু মাংস বিতরণ নয়, কোরবানির পশুর চামড়ার পয়সা গরিব-দুঃখীদের মধ্যে বিতরণের রেওয়াজ নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে ধর্মীয় বিধানকে উচ্চে তুলে ধরা উচিত। এ ঈদ সম্পর্কে কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, "ওরে হত্যা নয়_ 'সত্যাগ্রহ', আজ শক্তির উদ্বোধন"। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সত্যাগ্রহ বা শক্তির উদ্বোধন হতে দেখা যায় না। এবারের ঈদে ধর্মপ্রাণ মানুষের মনে যদি সত্যাগ্রহ ও শক্তির উদ্বোধন ঘটতে দেখা যায় তবে তা হবে ঈদে প্রকৃত খুশির সংবাদ। প্রতি বছরের মতো এবারের ঈদেও লাখো মানুষ প্রিয়জনের টানে গ্রামে ফিরছেন। কেউ ইতিমধ্যে পেঁৗছে গেছেন গন্তব্যে, কেউবা পথে আছেন। বাড়িফেরত মানুষের যে সংবাদ পত্রিকায় আসছে তাতে সবার বাড়ি ফেরা সুখকর হয়ে উঠছে না। অনেকেই দীর্ঘ জ্যামের ভোগান্তিতে কষ্ট করছেন। কষ্টকর এই যাত্রার পরও সবার মধ্যে ঈদ শান্তি ও সুখের বার্তা নিয়ে আসুক_ ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর হয়ে উঠুক প্রতিটি প্রাণ, এটাই আমাদের কামনা। ঈদ সবার জীবনে আনন্দ ও মঙ্গল বয়ে আনুক। ভেদাভেদ ভুলে সবাই মিলে ঐক্য ও সংহতির বাতাবরণে ঈদ পালন করুক। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা_ ঈদ মোবারক।
 

No comments

Powered by Blogger.