দেশেই তৈরি হবে হোন্ডা মোটরসাইকেল-* আগামী বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ-হোন্ডা বাজারে পাওয়া যাবে -* বছরে ২৪টি মডেলের দুই লাখ পিচ তৈরী হবে by ফারজানা লাবনী

বাংলাদেশ-হোন্ডা নামে নতুন ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল বিক্রি হবে বাংলাদেশের বাজারে। বিএসইসির (বাংলাদেশ স্টিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন) সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে জাপানের হোন্ডা কম্পানি এ মোটরসাইকেল তৈরি করবে। গতকাল বৃহস্পতিবার শিল্প মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ বিষয়ে জাপানের হোন্ডা কম্পানির সঙ্গে বিএসইসির আলোচনা চূড়ান্ত হয়।
শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, 'দেশেই মোটরসাইকেল উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে বাজারে যেসব মোটরসাইকেল রয়েছে, তার তুলনায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা কমে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা হবে।'
শিল্পসচিব মাসুদ সিদ্দিকী জানান, নতুন কারখানা নির্মাণের জন্য হোন্ডার সঙ্গে বিএসইসি যৌথ উদ্যোগে নতুন ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল তৈরি করবে। এ ক্ষেত্রে দ্রুত সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
হোন্ডা কম্পানির জাপানের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার মোটরসাইকেল উৎপাদন বিভাগের ব্যবস্থাপক কোরেমিচি কোদামা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এ দেশের বাজারে হোন্ডা মোটরসাইকেলের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। তাই এখানে কারখানা নির্মাণে হোন্ডা কম্পানি মোটরসাইকেল উৎপাদনে আগ্রহী।'
অতিরিক্ত সচিব এ বি এম খোরশেদ আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, হোন্ডা গত ছয় মাস বাজার যাচাই করে এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে। ইতিমধ্যে কারখানা নির্মাণে হোন্ডা কর্তৃপক্ষ জায়গা নির্বাচন করেছে। বিএসইসি থেকে তিনটি জায়গা নির্ধারণ করে, ঢাকা স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানা, টঙ্গীতে বিএসইসির ছয় একর জায়গা, চট্টগ্রাম জেনারেল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এসব জায়গার মধ্যে ঢাকা স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানাকে প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করেছে, জানান কর্মকর্তা।
বিএসইসির চেয়ারম্যান আবু হাফিজ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আগামী মাসের শেষ সপ্তাহে হোন্ডার সঙ্গে বিএসইসির বাংলাদেশ-হোন্ডা মোটরসাইকেল তৈরির বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে।'
বিএসইসি চেয়ারম্যান আরো বলেন, 'গতকালের বৈঠকে হোন্ডা কম্পানির দুই সদস্যের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে শেয়ার বণ্টনের বিষয়ে দরকষাকষি হয়। বিদেশি প্রতিষ্ঠানটি আমাদের ২৪ শতাংশ দিতে চায়; কিন্তু আমরা ৪০ শতাংশ দাবি করেছি। তবে কার্যকরী পরিষদে বিএসইসি থেকে দুজন পরিচালক এবং হোন্ডা থেকে তিনজন পরিচালক থাকছেন। প্রথম অবস্থায় ছয় শ লোকের নিয়োগ দেওয়া হবে। বছরে ২৪টি মডেলের দুই লাখ মোটরসাইকেল উৎপাদন করা হবে। কারখানার শুরুতে অ্যাসেম্বিলিং করা হবে। এক বছর পর ইঞ্জিন থেকে শুরু করে সব যন্ত্রাংশই বাংলাদেশ-হোন্ডা লিমিটেডের কারখানায় তৈরি হবে।'
আগামী বছরের ডিসেম্বরে কারখানার নিজস্ব শোরুমে এ নতুন ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল পাওয়া যাবে। এ লক্ষ্যে হোন্ডা ও বিএসইসি কাজ করছে বলে জানান তিনি।
শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারতের হিরো কম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে জাপানের হোন্ডা কম্পানি বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এটলাস বাংলাদেশ লিমিটেড (এবিএল)-এর সঙ্গে দীর্ঘদিন হিরো-হোন্ডা ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল তৈরি করেছে। এবিএলের ৪৯ শতাংশ শেয়ার বাজারে আছে। শেয়ারবাজারের অস্থিরতায় এবিএলের লাভ লোকসানের হিসাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে থাকে। এতে জাপানের মোটরসাইকেল নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ভারতের হিরো বা বাংলাদেশের এবিএলের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে উৎপাদন চালিয়ে যেতে আগ্রহী হয় না। গত বছর ১৭ ডিসেম্বর এ বিষয়ে চূড়ান্ত আলোচনার উদ্দেশ্যে জাপানের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার মোটরসাইকেল উৎপাদন বিভাগের ব্যবস্থাপক ওসামু ইসহিকাউয়ার নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে আসে। তারা বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের অস্থিরতায় আশঙ্কা প্রকাশ করে। একই সঙ্গে তারা এবিএলের সঙ্গে উৎপাদনে আগ্রহী নয় বলেও জানায়।

No comments

Powered by Blogger.