ধ্রুপদী সাহিত্যের অনুবাদ by জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী

ধ্রুপদী বা ক্লাসিকের সংজ্ঞা নিয়ে মতভেদ আছে। উৎকৃষ্ট রচনা মাত্রই অনেকের চোখে ক্লাসিক। আমরা নিছক অত্যুৎকৃষ্ট অর্থে ক্লাসিক শব্দটি ব্যবহার করছি না। আবার এলিয়টীয় অর্থে ক্লাসিককে একটি বা দুটি কালজয়ী রচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ করতে চাই না। আমরা উৎকর্ষের সঙ্গে কিছুটা প্রাচীনতার যোগে ক্লাসিক শব্দটার সীমানা টানতে চাই। রবীন্দ্রনাথ বা তলস্তয় একমাত্র এ কারণেই বর্তমানের বিবেচনায় আসবেন না। শেক্সপিয়র আসবেন, চণ্ডীদাস আসবেন, এমনকি ভারতচন্দ্রেও আপত্তি নেই।


ক্লাসিকের বা চিরায়ত সাহিত্যের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে এমন দু-একটি কাব্যের কথা মনে রেখে আমরা অনুবাদ প্রসঙ্গে যেতে চাই। এতে আলোচনার সুবিধা হবে।
ভারতীয় সাহিত্যে রামায়ণ ও মহাভারত, ইউরোপীয় সাহিত্যে ইলিয়াড ও অডিসি, এইরূপ শীর্ষস্থানীয় কাব্য। ইলিয়াড ও অডিসি যে অর্থে জোড়-কাব্য, রামায়ণ ও মহাভারত তা নয়। পৃথকভাবে চারটিকেই আমরা এপিক পরিচয়ে জানি। বাংলায় মহাকাব্য কথাটি চালু আছে, শিথিলভাবে ওই এপিক অর্থেই। সংস্কৃত অলংকার শাস্ত্রের বিচারে সম্ভবত এদের একটিও টিকবে না। আমরা সর্বজন-ব্যবহৃত ও সমার্থক শব্দ হিসেবে এপিক বা মহাকাব্য শব্দটি ব্যবহার করবো।
ইলিয়াড ও অডিসি একজনের রচনা, গ্রিক কবি হোমারের রচনা বলে প্রসিদ্ধি। হোমারের ঐতিহাসিকতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কিছু কিংবদন্তির বেশি তাঁর সম্পর্কে জানা যায় না। ইলিয়াড ও অডিসির মধ্যে একজন কবির হাতের ছাপ আছে বলেই সমালোচকরা বলে এসেছেন। সেই কবির কাব্যসিদ্ধি অতি উন্নত স্তরের এবং তাঁর নির্মাণকৌশলও অনুরূপ উন্নতমানের। স্বতন্ত্র কাব্য হলেও দুটি কাব্য ঘটনাসূত্রে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত, একই মহাঘটনার দুটি পৃথক পর্ব। ঘটনাস্থল ইলিয়াডে ট্রয় নগরী, ভূমধ্যসাগরের পূর্ব উপকূলীয় একটি এশীয় নগরী। অডিসিতে ঘটনাস্থল বলতে নির্দিষ্ট কিছু নেই, আছে এক সমুদ্রযাত্রার বর্ণনা, যা শেষ হয়েছে ইথাকায়।
রামায়ণ ও মহাভারত এক কবির রচনা নয়, এক সময়েরও নয় এবং কাহিনীসূত্রে মুক্ত নয়। তবু এরা জোড়-কাব্য। এদের গঠনে শিল্পীর হাত বা শৈলীগত একত্ব তেমন স্পষ্ট নয়। বিশেষত মহাভারতের অনেকখানিই সংক্ষিপ্ত বলে ধারণা করা হয়।
লক্ষ করা যায় যে, ইউরোপের বিভিন্ন আধুনিক ভাষায় ইলিয়াড ও অডিসি গত পাঁচ শতাধিক কাল ধরে বারবার অনূদিত হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। কিন্তু বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় রামায়ণ মহাভারতের অনুবাদ ঠিক একভাবে হয়নি। আমরা কৃত্তিবাস ও তুলসীদাসের রামায়ণ ও কাশীরাম দাসের মহাভারতে প্রকৃত অর্থে অনুবাদ বলতে পারি না। হিন্দি বা বাংলা ভাষায় পাঠক সাধারণের কাছেও এদের অনুবাদ পরিচয় অস্পষ্ট।
ইউরোপে যা হয়েছে তা অনুবাদ, এ দেশে যা হয়েছে তাকে মূলাশ্রয়ী স্বাধীন রচনা বলতে পারি।
ক্লাসিকের অনুবাদ প্রসঙ্গে কিছু সমস্যার কথা উঠবে, সেগুলো হোমার প্রসঙ্গে প্রযোজ্য হবে। ভার্জিল, দান্তে, গ্যোয়টে প্রসঙ্গে হবে। গ্রিক ও রেনেসাঁস পর্বের ফরাসি ও ইংরেজি নাট্যকারদের প্রসঙ্গেও হবে। মূলাশ্রয়ী স্বাধীন রচনার ক্ষেত্রে হবে না।
ড্রাইডেনের ভাষায় এগুলোকে ইমিটেশন বলা যায় : মূলের সংকেত দ্বারা অনুপ্রাণিত স্বাধীন ও নতুন সৃষ্টি। ড্রাইডেন যদিও ইমিটেশনকে অনুবাদেরই একটা শ্রেণী হিসেবে গণ্য করেছেন, তবে তাকে গুরুত্ব দেননি।
ক্লাসিকের অনুবাদে সমস্যা অনেক এবং দেশকাল নির্বিশেষে অনুবাদককে এ সকল সমস্যার সমাধান খুঁজতে হয়েছে।
এলিজাবেথের যুগে যিনি হোমারের সবচেয়ে সার্থক অনুবাদক, চ্যাপম্যান, তিনি মূলের ছয় মাত্রার ছন্দ নিয়ে মুশকিলে পড়েছিলেন। ইংরেজিতে ষড়মাতৃক ছন্দ যদিও বা লেখা যায়, তাকে কৃত্রিমতার হাত থেকে বাঁচানো প্রায় অসম্ভব। অথচ গ্রিক ও লাতিন ভাষায় এই সমস্যা নেই। কালিদাসের মন্দাক্রান্তা ছন্দ নিয়ে বাঙালি কবি একই সমস্যার সম্মুখীন।
ইংরেজি ভাষায় পঞ্চমাত্রিক ছন্দ আমাদের বাংলা পয়ার ছন্দের মতোই প্রাচীন ও প্রতিষ্ঠিত। আয়াম্বিক কাপলেট যখন সপ্তদশ শতকের শেষ চতুর্থাংশে ও পুরো অষ্টদশ শতক ধরে কবিতার রাজ্যে অপ্রতিহত প্রতাপে রাজত্ব করছে, তখন হোমার অনুবাদকে আর ষড়মাত্রার ছন্দ নিয়ে ভাবতে হয়নি। প্রচলিত ছন্দেই ড্রাইডেন তাঁর ভার্জিল এবং পোপ তাঁর হোমারকে ইংরেজি করেছেন। অষ্টাদশ শতকেই, কিছু কাল পর কুপার তাঁর হোমার অনুবাদে ব্যবহার করলেন ব্ল্যাঙ্ক ভার্স বা অমিত্রাক্ষর ছন্দ, যা ইংরেজিতে এক সময় ব্যাপক উৎকর্ষ লাভ করেছিল, কিন্তু কুপারের নিজের সময়ে যা হীনপ্রভ, অবহেলার শিকার। কুপার তাঁর অনুবাদে কিছুটা প্রাচীনত্ব আরোপ করতে চেয়েছিলেন অনতিপ্রাচীন অমিত্রাক্ষর ছন্দের মাধ্যমে। তবে চ্যাপম্যান যে ভুল করেছিলেন, সেই দুঃসাহসের পথে যাননি।
এতক্ষণ আমরা যে সমস্যার দিকে নির্দেশ করছি সে হলো অনুবাদের একটি মৌলিক সমস্যা। এবং যদিও ক্লাসিকের অনুবাদেই এটা বারবার দেখা দিয়েছে, সমস্যাটি কিন্তু এখানেই সীমাবদ্ধ নয়।
সমস্যাটি শুধু এই নয় যে, অনুবাদ আক্ষরিক হবে, না ভাবানুবাদ হবে। ড্রাইডেনের ভাষায় মেটাফ্রেসটিক [গবঃধঢ়যৎধংঃরপ] হবে, না প্যারাফ্রেসটিক [চবৎধঢ়যৎধংঃরপ] হবে। অনুবাদ কি মূলের ছন্দকেও মেনে নেবে। ভাষার যেমন প্রকৃতিভেদ আছে, তেমনি আছে ছন্দভেদ। ইংরেজি সিলেবলভিত্তিক ছন্দে স্বরাঘাতের যে গুরুত্ব বাংলায় তার কোনো প্রতিরূপ নেই, বাংলা ছন্দের নিয়মই আলাদা। হোমার অনুবাদে এ প্রশ্নে ইংরেজি ভাষার কবিদের ভাবনা ও মীমাংসা থেকে আমরা অন্যান্য ইউরোপীয় ভাষায় কবিদের পরিস্থিতি আঁচ করব। যারা মূল ভাষা থেকে সরাসরি অনুবাদ করেন, সমস্যাটা তাঁদেরই, পরোক্ষ অনুবাদকের নয়।
কৃত্তিবাস ও কাশীরাম দাস তাঁদের পুনর্গঠন কর্মে বাল্মীকি বেদব্যাসের ছন্দ্রপ্রকরণ নিয়ে মাথা ঘামাননি, প্রচলিত বাংলা পড়ায় যথেষ্ট বিবেচনা করেছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁদের সঙ্গে মিল পাওয়া যাবে ড্রাইডেন ও পোপের চিন্তায়। ড্রাইডেন এক সময় বেশ দোটানায় পড়েছিলেন মিলান্তক ও অমিল ছন্দের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে, বিশেষত নাটকের মাধ্যম হিসেবে। শেষ পর্যন্ত সমিল ছন্দের দিকেই ঝুঁকতে হয়েছিল, তাঁর মেজাজেও সমর্থন ছিল ওই দিকে।
প্রশ্নটা শুধু ছন্দ নিয়ে নয়। ছন্দ একটি ব্যাপকতর ও গভীরতার সমস্যার একটি দিক মাত্র, তার বেশি নয়। সমস্যা হলো স্টাইলের। হোমারের স্টাইলের একটি অবিচ্ছেদ্য দিক হলো তাঁর ষড়মাত্রার ছন্দ, যা হোমারের কথিত সরলতা, তাঁর গতির দ্রুততা ও তাঁর প্রবলতা, সবই ধারণ করেছে। পোপের অনুবাদ নিয়ে আরনল্ডের আপত্তি এই নয় যে পোপ সমিল ছন্দে লিখেছেন। আপত্তি হলো হোমারের সহজতা অনুবাদে রক্ষিত হয়নি, অষ্টাদশ শতকের কাব্যভাষার কৃত্রিমতা মূলের একটি মৌল গুণের সঙ্গে, স্বাভাবিকতার সঙ্গে অসঙ্গতি ঘটিয়েছে। আরনল্ডের বিবেচনায় হোমারকে তাঁর স্বভাবচ্যুত করলে হোমার থাকে না।
আরনল্ডের এই সমালোচনা যুগোপযোগী। তার সময়ে পূর্ব-শতকের হিরোইক কাপলেটকে দূর থেকে নির্মোহ নজরে দেখা সম্ভব ছিল। তবে একটি জায়গায় তিনি ভুল করেছেন_ পোপের পক্ষে তাঁর স্থান-কালের সীমাবদ্ধতার মধ্যে যা উচিত ও সম্ভব ছিল তাই করে ছিলেন। হিরোইক কাপলেট তাঁর সময়ের কাব্যরীতির সর্বাধুনিক ও উপযুক্ততম বাহন। এই দৈবদত্ত উত্তরাধিকার ও স্বোপার্জিত সম্পদকেই তিনি কাজে লাগিয়েছিলেন, এতে তার বিচক্ষণতারই প্রমাণ মেলে। কোনো কবির পক্ষে সম্ভব নয় অন্য কোনো কবিকে তাঁর সম্পূর্ণ সত্তায় ভিন্ন ভাষায় উপহার দেওয়া। চ্যাপম্যান দিয়েছিলেন চ্যাপম্যানের হোমার। পোপ দিয়েছেন পোপের হোমার। যারা এর অতিরিক্ত দাবি করে তারা অন্যায় দাবি করে।
অনুবাদও ক্লাসিকের মর্যাদা পায়, যদি সে অনুবাদ সৃজনধর্মী হয়। রাজা জেমসের বাইবেলের মতোই পোপের অনুবাদে হোমার ইংরেজি সাহিত্যে ক্লাসিকের মর্যাদা পেয়েছে। পরবর্তীকালের অনুবাদসাফল্য যাই হোক, যা বাইবেল ও হোমার উভয় ক্ষেত্রেই হয়েছে, তা কখনো পূর্ব কীর্তিকে বাতিল করবে না। হোমার এর ষড়মাত্রাই শুধু নয়, ওজস্বিতা দ্রুততা ও সহজতার সমন্বয় যদি হোমারীয় স্টাইলের বৈশিষ্ট্য হয়ে থাকে, তবে তা যে কোনো কবির পক্ষে অনায়ত্ত। সেসিল ডে লুইসের অনুবাদ পেয়ে 'এই তো হোমার পেয়েছি' বলে কেউ তো উল্লসিত হয়নি।
ইউরোপীয় সাহিত্যের ধারাবাহিকতা ও পারস্পরিক যোগাযোগের কারণ 'ক্লাসিক' ধারণাটি কখনোই অস্পষ্ট হতে পারেনি। নিমেষে হোমার, ভার্জিল, ওভিদ-এস্কিলাস-সাফোক্লিস-ইউরেপিদিস, প্লিনি-থ্যুকিদি-দিস-সিজার-সিসেরো একজন পাঠকের মনে আসে। এই সব পূর্বসূরিদের আদর্শে লিখতে পারাই বহুদিন ধরে সাহিত্যকর্মীদের আরাধ্য ছিল। এই ধারণা বদ্ধমূল ছিল যে, গ্রিক ও লাতিন অগ্রজগণ চিরকালের জন্য রচনার মান ও পদ্ধতি বেঁধে দিয়ে গেছেন। ভালো লেখার অর্থ হলো তাঁদের মতো লেখা। বিদ্যালয়ের লেখাপড়ায় ইউরোপের সকল দেশে এঁদের লেখাই পাঠ্যসূচির বড় জায়গা দখল করে ছিল শতাব্দীর পর শতাব্দী। মাতৃভাষায় রচিত সাহিত্য যা কিঞ্চিৎ নূ্যনার্থে 'বার্নাকুল্যার' সাহিত্য বলে আখ্যায়িত ছিল, সহজে পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত হয়নি_ বিদ্যালয়ে হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়নি। প্যারিস, অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজে প্রথম থেকেই ক্লাসিকের পঠন-পাঠন চলেছে, কিন্তু অক্সফোর্ডের ইংরেজির জন্য প্রথম চেয়ার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই শতকের শুরুতে, তার আগে নয়। কেমব্রিজে আরও পরে। একদিকে রোমকেন্দ্রিক রোমান ক্যাথলিক চার্চ, অন্যদিকে পাদুয়া, বোলইনা, প্যারিস, ল্যেডেন, উইটেনবুর্গ, অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ_ এক কথায় মধ্যযুগের সকল বিশ্ববিদ্যালয় সম্মিলিতভাবে 'ক্লাসিক' বলতে কী বুঝায় সেটা অবিরত চর্চার মাধ্যমে স্পষ্ট রেখেছে ইউরোপীয় মানসে।
যে সকল প্রাচীন ভাষায় ক্লাসিক সাহিত্য রচিত হয়েছে, একটি ব্যাপক ও বহু ভঙ্গিম চিরায়ত সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে, তার মধ্যে গ্রিক ও লাতিন, সংস্কৃত ও চীনা ভাষার উল্লেখ করা যায়।
যদিও চিরায়ত সাহিত্য সকল দেশের সকল মানুষের উত্তরাধিকার, তবু ঐতিহাসিক ভৌগোলিক কারণে গ্রিক ও লাতিন ইউরোপে, সংস্কৃত ভারত উপমহাদেশে এবং চীনা ওই ভাষার পরিচয়ে পরিচিত ভূ-খণ্ডে, চীন দেশে সর্বাধিক পরিচিত ও প্রচলিত। ইউরোপ ও ভারত বহুভাষিক ও বহুজাতিক; চীন তার অদ্বিতীয় লিখিত ভাষার কারণে এক অর্থে একভাষিক; যদিও ভারতের মতোই বহুজাতিক।
সমাসবহুল বাংলা বাক্য বা বাক্যাংশবহুল বিলম্বিত ও ধীর-সঞ্চারী বাক্য দিয়ে গড়া পোশাকী গদ্যই ক্লাসিকের মর্যাদা রক্ষা করতে পারে, এই ধারণা এক সময় এ দেশেও চালু হয়েছিল। গদ্যের এই আড়ম্বর ক্লাসিক্যাল লাতিন সাহিত্যে ও মধ্যযুগের ফার্সি সাহিত্যে আমরা পাই। একই লক্ষণে আক্রান্ত সতেরো শতকের ইংরেজি গদ্য, কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে। বাংলায় 'কাদম্বরী'র অনুবাদক এই সাড়ম্বর সমাসবদ্ধ গদ্যেই বাণভট্টের সম্মান রক্ষা করেছিলেন। আমাদের অর্বাচীন গদ্য সাহিত্য এখনও একই অনুবাদ নিয়ে সন্তুষ্ট, তবে একশ' বছর পরও থাকবে, তার নিশ্চয়তা নেই। যেসব সাহিত্যে গদ্য হাজার বছর, এমন কি পাঁচশ' বছর পেরিয়ে এসেছে, সেখানে প্রতি শতকেই নতুন অনুবাদের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
অর্থাৎ যুগোপযোগী ভাষায় ক্লাসিকের অনুবাদ হওয়া আবশ্যক এই চিন্তা প্রাধান্য পেয়েছে। কালীপ্রসন্ন সিংহের মহাভারতের মূল্য অস্বীকার না করেও রাজশেখর বসু যখন তার সময়ের ভাষায় [যদিও সংক্ষিপ্ত আকারে] মহাভারত পরিবেশন করেন তখন এই একই চিন্তা কার্যকর, আমরা সহজেই বুঝতে পারি।
কালীপ্রসন্ন সিংহ ও বর্তমানকালের মধ্যে মোটামুটি শতাব্দীর ব্যবধান। একশ' বছর পূর্বে আমাদের পূর্বপুরুষরা যে ভাষায় কথা বলেছেন, আশা করা যায় তা বর্তমানকালের ভাষা থেকে দূরবর্তী কিছু নয়। কিন্তু তাঁরা লেখার আদর্শ হিসেবে যে ভাষা সৃষ্টি করেছিলেন তার মধ্যে ছিল বিস্তর পরনির্ভরতা, পরানুকরণ, অতএব কৃত্রিমতা। উন্নত সাহিত্যের জন্য তাঁরা উন্নত ভাষার তাগিদ অনুভব করেছিলেন আমরাও কিছুটা করি, তবে মাত্রার তারতম্য ঘটে গেছে।
উনিশ শতকীয় বাংলার রেনেসাঁস তুলনায় একটি খণ্ডিত আন্দোলন কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ। এর বিচিত্র প্রবণতার মধ্যে আছে প্রাচীন সংস্কৃত সাহিত্যের প্রতি একটি নতুন দৃষ্টিপাত। া

No comments

Powered by Blogger.