স্থানীয় বিনিয়োগ-উদ্বুদ্ধ করতে হবে আগ্রহীদের

বরটি ইতিবাচক। যখন ধারণা করা হচ্ছে, অর্থনীতিতে দেশ পিছিয়ে যাচ্ছে, সংকট থেকে উত্তরণের কোনো পথই আর খোলা নেই_তখনই স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে আগ্রহ নতুন পথের দিশা দিচ্ছে। এমনিতে আমাদের এখানে অনেক নেতিবাচক দিক রয়েছে। এই নেতিবাচক দিকগুলো অতিক্রম করাও সহজ নয়। তার পরও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ দেশের অর্থনীতিতে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে, এমনটি আশা করা যায়।


দেশে বিনিয়োগের অন্তরায়ের অন্ত নেই। একটি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার মতো অবকাঠামো এখনো এখানে নেই, এমন কথা শোনা যায়। দেশে বিনিয়োগবন্ধ্যত্বের এটাও অন্যতম কারণ বলে ধরে নেওয়া যায়। মানতেই হবে, আমাদের দেশে বিনিয়োগের সুস্থ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থা এখনো গড়ে ওঠেনি। তার পরও বিশ্বে বিনিয়োগের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১১৪তম। এশিয়ার দেশগুলো এখন বাংলাদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে চায়। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি খবরে দেখা গেছে, পাকিস্তানের টেঙ্টাইল খাতের বিনিয়োগকারীরা এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। পাকিস্তান থেকে পোশাকশিল্প ও টেঙ্টাইল খাতে পাকিস্তানি বিনিয়োগ এখন অনেক বেড়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এই আগ্রহ আমাদের জন্য ইতিবাচক। আমাদের এখানে এখন প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। এর পাশাপাশি বিনিয়োগের জন্য কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। এই শর্তগুলো পূরণ করা গেলে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ যেমন আরো বাড়বে, তেমনি দেশের বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন। বস্তুত দেশের বিনিয়োগ বাড়লেই বিদেশি বিনিয়োগ আরো বেশি আকৃষ্ট হবে, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অধিকতর আশ্বস্ত বোধ করবেন।
যখন বিনিয়োগ নিয়ে হতাশা, তখনই কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরটি যেন একটি নতুন পথের সন্ধান দিল। খবরে বলা হয়েছে, 'চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে ১২৭টি ইউনিটে চার হাজার ৯১২ কোটি টাকা, আগস্ট মাসে ১৩১টি ইউনিটে দুই হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা ও সেপ্টেম্বর মাসে ১০৬টি ইউনিটে এক হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব নিবন্ধন করে বিনিয়োগ বোর্ড। সব মিলিয়ে অর্থবছরের চার মাসে মোট ৫৩৬টি ইউনিটে ১৬ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব নিবন্ধিত হয়েছে। এর মধ্যে টেঙ্টাইল খাতে ২১২টি ইউনিটে দুই হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে কৃষিভিত্তিক শিল্পে মোট ৫২টি ইউনিটে দুই হাজার ৪০৪ কোটি টাকা, ফুড ও এলায়েড শিল্পে ২৭টি ইউনিটে ৩১৩ কোটি টাকা, প্রিন্টিং ও পাবলিশিং খাতে ১১ ইউনিটে ২৩৭ কোটি টাকা, চামড়াশিল্পে সাত ইউনিটে ২৯ কোটি টাকা, রাসায়নিক শিল্পে ৯৬টি ইউনিটে এক হাজার ৪০২ কোটি টাকা, ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে ৯৭টি ইউনিটে দুই হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা, সেবা খাতে ৩০টি ইউনিটে তিন হাজার ৮০৯ কোটি টাকা ও অন্যান্য শিল্পে চারটি ইউনিটে দুই হাজার ৬৮৪ কোটি টাকার প্রস্তাব নিবন্ধিত হয়েছে।'
আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা হচ্ছে, বিনিয়োগ প্রস্তাবের পরও নানা জটিলতায় বিনিয়োগ শেষ পর্যন্ত হয় না। ২০০৯-১০ অর্থবছরে বিনিয়োগ নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়লেও বিনিয়োগ ছিল কম। বিনিয়োগ বাড়াতে হলে বিনিয়োগের ইতিবাচক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এই পরিবেশ নির্ভর করে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি গ্যাস-বিদ্যুৎসহ অন্যান্য অবকাঠামোগত সহায়তার দিকগুলো নিশ্চিত করতে হবে। বিনিয়োগে আগ্রহীদের সর্বতোভাবে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.