অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে ওবামা-এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে থাকতে এসেছি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, বিশ্বের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগীয় অঞ্চল। আর এ অঞ্চলের জাতি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এখানে উপস্থিতি অব্যাহত রাখবে। মার্কিন নিরাপত্তানীতিতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে এ অঞ্চলকে। গতকাল বৃহস্পতিবার অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে ওবামা এসব কথা বলেন।


বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ওবামার এ বক্তব্য চীনের জন্য পরিষ্কার বার্তা বহন করে। আগের দিন বুধবার অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সামরিক বন্ধন সুদৃঢ় করার ঘোষণা দেন ওমাবা। এর অংশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় আড়াই হাজার মেরিন সেনা মোতায়েন করতে সম্মত হয় দুই পক্ষ। ইতিমধ্যে ক্যানবেরা-ওয়াশিংটনের এ সমঝোতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে চীন। বিশ্লেষকরা দেশ দুটির এ পদক্ষেপকে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বিস্তারের বিপরীতে পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দিকে যুক্তরাষ্ট্র এখন সর্বোচ্চ মনোযোগ দিচ্ছে উল্লেখ করে ওবামা বলেন, 'এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই, একবিংশ শতকে এ অঞ্চলের সব ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি থাকবে।' তিনি বলেন, আয়তন, সম্পদ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দিক দিয়ে এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিশ্বে ক্রমেই তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সমর্থ হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এ অঞ্চলের উত্থান দেখেছে বিশ্ব। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, 'বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরমাণু শক্তিধর দেশসহ বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী এ অঞ্চলে বাস করে। তাই এশিয়া আগামী দিনগুলোতে খুব বড় ভূমিকার সঙ্গে ঠিক করবে এ শতকের বিশ্ব পারস্পরিক সমঝোতা নাকি সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাবে। মানব-উন্নয়ন হবে, নাকি মানুষ ভোগান্তির মধ্য দিয়ে দিনপাত করবে, তা ঠিক করতে এ অঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।'
এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন প্রসঙ্গে ওবামা বলেন, 'প্রশান্ত মহাসাগরীয় জাতি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এখানে দীর্ঘ মেয়াদে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। আমরা এখানে থাকতে এসেছি। ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক মূল নীতিমালা মেনে এ অঞ্চলের সন্তোষজনক অগ্রগতির জন্য এখানকার ঘনিষ্ঠ মিত্র রাষ্ট্র ও বন্ধুদের সঙ্গে একযোগে কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র।'
চীনের সঙ্গেও নিজেদের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক সম্প্রসারণের আগ্রহের কথা জানান ওবামা। তিনি বলেন, 'পরমাণু বিস্তার রোধ করে, কোরীয় উপদ্বীপ-সংক্রান্ত উত্তেজনা প্রশমিত করার ভিত্তিতে চীন আমাদের সহযোগী হতে পারে। ভবিষ্যতে বেইজিংয়ের সঙ্গে সহযোগিতার ক্ষেত্র প্রসারিত করতে আমরা সচেষ্ট থাকব। নিজেদের মধ্যে বিদ্যমান ভুল হিসাব-নিকাশ দূর করাসহ উভয়ের মধ্যে ব্যাপকভাবে সামরিক যোগাযোগ বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে সমঝোতার দিকে এদিয়ে যেতে পারি আমরা।' তবে তিনি মনে করেন, এ জন্য চীনা পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন আনা দরকার। বেইজিংকে তাদের নীতি বদলেরও আহ্বান জানান তিনি।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক 'কঠিন শিলার' মতো কাজ করেছে বলে মনে করেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ড। তিনি বলেন, এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকার ব্যাপারটি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মূল চাবিকাঠি।
তবে এই 'শান্তি ও স্থিতিশীলতা' বজায় রাখার লক্ষ্যে মার্কিন সামরিক উপস্থিতির ব্যাপারে উদ্বিগ্ন ইন্দোনেশিয়া। তারা মনে করে, এ অঞ্চলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি বাড়ার ফলে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হতে পারে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্টি নাতালেগাওয়া বালিতে আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে গতকাল বলেন, 'যে ধরনের উন্নয়ন প্রতিক্রিয়ার বা পাল্টা-প্রতিক্রিয়া জন্ম দেয় এবং উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বা অবিশ্বাসের দুষ্টচক্র তৈরি করে, তা আমাদের বিচারে নিন্দাযোগ্য।' তিনি বলেন, তাই এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার আগে পুরো ব্যাপারটি ভালোমতো খতিয়ে দেখা দরকার। এর ফলে যাতে কোনো ভুল বোঝাবুঝির পরিস্থিতি তৈরি না হয় সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।'
সিঙ্গাপুরও জানিয়েছে, পরাশক্তিধর দেশগুলোর স্বার্থসিদ্ধির প্রতিযোগিতার ফাঁদে পড়তে চায় না আসিয়ানভুক্ত দেশগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিপাইন।
গত বুধবার ২৮ ঘণ্টার সফরে অস্ট্রেলিয়ায় পেঁৗছান ওবামা। আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দিতে গতকাল ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেন তিনি। বালি দ্বীপে তিন দিনের আসিয়ান সম্মেলন চলবে শনিবার পর্যন্ত। সূত্র : বিবিসি, এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.