'সহিংসতা' বন্ধে সিরিয়াকে তিন দিনের সময় আরব লিগের

রকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর 'সহিংস দমন-পীড়ন' বন্ধের জন্য গত বুধবার সিরিয়াকে তিন দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে আরব লিগ। এ সময়ের মধ্যে সহিংসতা বন্ধ না হলে সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছে তারা।এদিকে যুক্তরাষ্ট্র হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, বিক্ষোভকারীদের সহিংস আচরণের ফলে শেষ পর্যন্ত আসাদ সরকারই লাভবান হবে। সিরিয়ায় পরিস্থিতি গৃহযুদ্ধের রূপ নিয়েছে উল্লেখ করে রাশিয়া সহিংসতা বন্ধে আরব লিগসহ বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।


গত বুধবার মরক্কোর রাজধানী রাবায় আরব লিগের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক হয়। সেখানে সহিংসতা বন্ধে সিরিয়াকে তিন দিনের সময় বেঁধে দিতে সম্মত হয় আরব লিগ সদস্যরা। বৈঠক শেষে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হামাদ বিন জাসেম আল-থানি বলেন, 'আরব লিগকে সহযোগিতা করতে রাজি না হলে সিরিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। আরব দেশগুলো সিরিয়ার ব্যাপারে একেবারে শেষ প্রান্তে এসে ঠেকেছে। সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে আমরা হস্তক্ষেপ করব না। কিন্তু রক্তপাত অবশ্যই বন্ধ হতে হবে।'
আরব লিগ প্রধান নাবিল আল আরাবি বলেন, 'সিরিয়ায় রক্তপাত বন্ধে সম্ভাব্য সব কিছুই করব আমরা।' নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্য প্রায় ৫০০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলকে সিরিয়ায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
আরব লিগ গত শনিবার সিরিয়ার সদস্যপদ স্থগিত করে। সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের ওপর সরকারি বাহিনীর হামলা বন্ধে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের ওপর চাপ তৈরির জন্যই এ পদক্ষেপ নিয়েছে তারা। এ মাসের শুরুতে আরব লিগ সিরিয়াকে অস্থিতিশীল শহরগুলো থেকে ট্যাংক ও সেনা প্রত্যাহার, বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা বন্ধ এবং দুই সপ্তাহের মধ্যে বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছিল। তবে প্রেসিডেন্ট আসাদ ওই আহ্বানে সম্মতি দেওয়ার পরও সেখানে সহিংসতা কমেনি। গত ২ নভেম্বর আরব লিগের ওই আহ্বানের পর থেকে সংঘাতে এ পর্যন্ত ৩৭০ জন মারা গেছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। গত মার্চে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত সেখানে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি লোক মারা গেছে বলে দাবি করেছে জাতিসংঘ।
আরব লিগে সিরিয়ার সদস্যপদ স্থগিতের প্রতিবাদে আসাদের সমর্থকরা গত বুধবার দামেস্কে মরক্কো ও আরব আমিরাতের দূতাবাসে হামলা চালায়। দূতাবাস লক্ষ্য করে ডিম ও পাথর ছোড়ে তারা। হামলার প্রতিবাদে মরক্কো দামেস্ক থেকে তার দূত প্রত্যাহার করে নিয়েছে। আরব আমিরাত ওই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। ফ্রান্সও তার দূত প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে। এর আগে গত শনিবার ফ্রান্স, কাতার, সৌদি আরব ও তুরস্কের দূতাবাসে হামলা চালায় আসাদ সরকারের কয়েক শ সমর্থক। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার সিরিয়া সরকার হুঁশিয়ারি দিয়েছে, কূটনৈতিক মিশনগুলোতে হামলার চেষ্টাকারী যেকোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হবে।
এদিকে সিরিয়ায় সব পক্ষের প্রতি সহিংসতা বন্ধের ডাক দিতে আরব লিগসহ বিশ্ব সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া। সিরিয়ার প্রতি আরব লিগের অবস্থান 'আরো বেশি সুনির্দিষ্ট' হওয়া উচিত বলে মনে করছে তারা। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেরগেই লাভরভ গত বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, 'সিরিয়ার সহিংসতা বন্ধের জন্য আরব লিগ যে অবস্থান নিয়েছে তা আরো বিশদ ও সুস্পষ্ট হওয়া উচিত। তবে আরব লিগের পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সব দেশের প্রতি প্রস্তাব রাখব, তারা যেন সিরিয়া সরকারের পাশাপাশি বিরোধী গোষ্ঠীগুলোকেও সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানায়। সিরিয়ার পরিস্থিতি গৃহযুদ্ধের রূপ নিয়েছে।'
গত বুধবার দামেস্কে বিমানবাহিনীর গোয়েন্দা ঘাঁটিতে দলত্যাগী সেনাদের হামলার ঘটনা 'আশ্চর্যজনক নয়' বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র মার্ক টোনার বলেন, 'আমরা কোনোভাবেই এ ঘটনা বরদাশত করব না। আসাদের নৃশংস কৌশলের কারণেই সিরিয়ার শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নিয়েছে; যা সিরিয়াকে অত্যন্ত বিপজ্জনক পথে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা মনে করি, বিক্ষোভকারীরা সহিংস হয়ে উঠলে তাতে আসাদ সরকারই লাভবান হবে।' সূত্র : এএফপি, বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.