সড়ক নির্মাণকাজে অনিয়ম ও জালিয়াতি-বোয়ালমারীর মেয়রের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

রিদপুরের বোয়ালমারী পৌরসভার মেয়র আবদুস শুকুর শেখের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পৌর এলাকার একই প্যাকেজে চারটি সড়কের নির্মাণকাজে অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে মেয়র তাঁর ছোট ভাইকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার মাধ্যমে ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এক ঠিকাদার। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রধান প্রকৌশলীর কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন ওই ঠিকাদার।


এদিকে এ অভিযোগ অস্বীকার করে মেয়র কালের কণ্ঠের এ প্রতিবেদককে তাঁর সঙ্গে দেখা করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, 'আপনি আমার ব্যাপারটি দেখুন। আমি আপনার ব্যাপারটি দেখব।'
ঠিকাদারের ওই অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, বোয়ালমারী পৌরসভার নোটিশ নং-০২/২০১০-১১, তারিখ ২০/৪/১১-এর মেমো নং বোয়াল/পৌর/ইঞ্জি/২০১/৩১৬/২৪৯ প্যাকেজ নং আইএনপিআইডিপি/ বোয়াল/ আরডি/ ২০১-১১/০১ স্মারক অনুযায়ী বোয়ালমারী পৌর এলাকার চারটি সড়কের সিলকোট উঠিয়ে নতুন সিলকোট, ম্যাকাডাম ও কার্পেটিং কাজে ৮০ লাখ ৭৬ হাজার ২৪১ টাকার টেন্ডার গত ৫ মে তারিখে গ্রহণ করা হয়। ২১টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নেয়। এর মধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে (২২ দশমিক ২৫% কম দরে) ৬২ লাখ ৭৮ হাজার ৮৭৫ টাকায় মধুমতি এন্টারপ্রাইজের মালিক এম এ রাজ্জাক কাজটি পেয়েছেন বলে মেয়র ঘোষণা দেন। কিন্তু বাস্তবে মেয়র ও তাঁর অধীন প্রকৌশলীরা কৌশলে জালিয়াতি করে পৌর মেয়রের ভাই জাকির হোসেনের দরমূল্য ৮৪ লাখ ৭১ হাজার ৬৭৬ টাকা, তাঁর উদ্ধৃত দর দরপত্রের ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ বেশি, নিজ ভাইকে কাজ দিতে মেয়র প্রাপ্ত নিম্ন দরপত্রের কাগজপত্রে ভুল দেখিয়ে ১১টি নিম্ন দরপত্র বাতিল করেন। বাকি আটটি দরপত্রে ঊর্ধ্বদর ৭ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত দেখানো হয়। এর মধ্যে মেয়র তাঁর ভাইকে সর্বনিম্ন ঊর্ধ্বদর ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ দেখিয়ে কার্যাদেশ দিয়েছেন।
চারটি সড়কের মধ্যে রয়েছে আঁধারকোঠা থেকে বঙ্গবন্ধু সড়কের শ্যামল সাহার মিল, বোয়ালমারী খাদ্য গুদাম থেকে ছোলনা কবরস্থান হয়ে মেয়রের বাড়ি পর্যন্ত, রেলস্টেশন থেকে ছোলনা গোলাম নবীর বাড়ি পর্যন্ত এবং বঙ্গবন্ধু সড়কের খালেক বিশ্বাসের বাড়ি থেকে সড়ক ও জনপথের পেট্রলপাম্প পর্যন্ত। এই সড়কের পুরনো সিলকোট উঠিয়ে তিন ইঞ্চি সিলকোট, চার ইঞ্চি ম্যাকাডাম ও এক ইঞ্চি কার্পেটিং করার কথা থাকলেও কোনো সড়কে শুধু সিলকোট, আবার কোনো সড়কে এক ইঞ্চি ম্যাকাডাম করা হলেও কোনো সড়কেই কার্পেটিং করা হয়নি। এতে পৌর মেয়র ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন মর্মে লিখিত অভিযোগ জানিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে পৌর মেয়র আবদুস শুকুর শেখের কাছে তাঁর মোবাইল ফোনে (০১৭১৫-২৬৮৮৯৭) জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ করে বলেন, 'আমি বিএনপি করি। ওরা আওয়ামী লীগ করে। সে কারণে রাজনৈতিকভাবে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে।'
মেয়র বলেন, সর্বনিম্ন দরদাতা আবেদন করে তাঁর দরপত্র তুলে নিয়েছেন। ভাই জাকিরকে ঊর্ধ্বদরে কিভাবে কাজ দিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে অনুমোদন নিয়ে কাজ দেওয়া হয়েছে। ব্যস্ততার কারণ দেখিয়ে ফোন ছেড়ে দেওয়ার আগে এই প্রতিবেদককে তাঁর সঙ্গে দেখা করার অনুরোধ জানিয়ে মেয়র
বলেন, 'আমার ব্যাপারটি আপনি দেখুন। আমি আপনার ব্যাপারটি দেখব।' ব্যাপারটি কী? কী দেখব_এ প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিনি ফোন রেখে দেন।

No comments

Powered by Blogger.