মঙ্গামুক্ত উত্তরের জনপদ-কৃষি গবেষণাকে আরো জোরদার করতে হবে

ঙ্গাকবলিত উত্তরের জনপদ'। উত্তরের জনপদের সঙ্গে 'মঙ্গাকবলিত' বিশেষণটি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছিল। সেই উত্তরের জনপদ এখন মঙ্গামুক্ত জনপদে পরিণত হয়েছে। কার্তিকের মঙ্গায় কয়েক কোটি মানুষের চরম দুর্ভোগের অবসান হয়েছে। আগাম ও খরাসহিষ্ণু ধানের আবিষ্কার উত্তরের জনপদে এই পরিবর্তন এনে দিয়েছে। এবার উত্তরের জেলাগুলোতে এই জাতের আমন ধানের চাষ এত ব্যাপক হয়েছে এবং ফলনও এত ভালো হয়েছে যে তা নির্ধারিত


লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে বিশাল পরিমাণে। এককালের মঙ্গাকবলিত উত্তরের জনপদে এখন নতুন ধানের উৎসব চলছে। চাতালগুলোতে দিনরাত চাল তৈরির কাজ চলছে। এ জন্য আমাদের যে বিজ্ঞানীরা আগাম ও খরাসহিষ্ণু এই ধান আবিষ্কার করেছেন, তাঁদের যেমন প্রশংসা করতে হয়, তেমনি প্রশংসা করতে হয় বর্তমান কৃষিমন্ত্রী তথা সরকারের। কারণ সরকার চাষাবাদে সার-বীজসহ কৃষি উপকরণ সরবরাহ করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট পারদর্শিতার পরিচয় রেখেছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশ যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তা এখন বিশ্বব্যাপী নানা গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তে একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য। এই পরিবর্তনের কারণে দক্ষিণাঞ্চলে দেখা যাবে সাগরের আগ্রাসী আচরণ, আর উত্তরাঞ্চলে দেখা যাবে ক্রমবর্ধমান খরা। ইতিমধ্যে সেই খরা প্রায় মরুকরণ প্রক্রিয়ায় রূপ নিতে চলেছে। ভূগর্ভের পানির স্তর ক্রমশ নিচে নামছে। অনেক এলাকায় গভীর নলকূপেও পানি ওঠে না। তাই এসব এলাকায় বোরো ধানের চাষে রীতিমতো বিপর্যয় দেখা দেবে। খরচও অনেক বেড়ে যাবে, ফলনও পাওয়া যাবে অনেক কম। সেদিক থেকে আমনের এই বর্ধিত উৎপাদন আমাদের কিছুটা হলেও আশার আলো দেখাতে পেরেছে। একইভাবে যদি কম সেচনির্ভর ও রোগ-প্রতিরোধী বোরোর জাত উদ্ভাবন করা যায়, তাহলে বোরোর উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যয়ও অনেক কমে যাবে। তাই দেশের কৃষি গবেষণাকে অব্যাহত রাখতে হবে এবং তা আরো জোরদার করতে হবে।
পাশাপাশি আমরা দেখছি, মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত থেকে কৃষকদের রক্ষারও পরিকল্পিত উদ্যোগ নেই। প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলে আমনের বাম্পার ফলনের পরও কৃষকের মুখে হাসি নেই। এর প্রধান কারণ, সেখানে এখন ধান বিক্রি হচ্ছে সাড়ে চার শ থেকে সাড়ে পাঁচ শ টাকার মধ্যে। এতে তাদের উৎপাদন খরচও ওঠে না। আবার সেখানে চাতালগুলোতে পুরুষ শ্রমিককে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি দেওয়া হলেও সমান পরিশ্রম করে একজন নারী শ্রমিক পায় মাত্র ৭০ থেকে ৮০ টাকা। উদ্বৃত্ত শ্রমের সুযোগ নিয়ে নারী শ্রমিকদের এভাবে বঞ্চিত করা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। রাষ্ট্রীয়ভাবে এর প্রতিকার করা প্রয়োজন।
আমরা আশাবাদী, জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য সব ক্ষতি মোকাবিলা করেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। এ জন্য প্রয়োজন সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ। বিচক্ষণতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে এবং তা করতে হবে মূলত সরকারকেই।

No comments

Powered by Blogger.