ভারত বিনা যুদ্ধেই জঙ্গি বিমান হারাচ্ছে, নিহত হচ্ছেন পাইলট

বিধ্বস্ত মিগ-২৭ জ্বলছে
ভারতে চলতি বছরের বিনা যুদ্ধে অন্তত ১০ ঘটনায় ১১ যুদ্ধ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে এবং ২২ ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন। সব মিলিয়ে ২০১৯ সালে ভারতীয় বিমান বাহিনীর জন্য একটি রক্তাক্ত বছরে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে ভারতের একটি সংবাদ মাধ্যম।

সর্বশেষ ধারাবাহিক যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে ভারতের অসম রাজ্যের তেজপুরে। চলতি মাসের ৮ তারিখে রাতে আকাশে ওড়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই একটি ধান ক্ষেতে বিধ্বস্ত হয় সুখোই এসইউ এমকেআই। দুই পাইলটই সৌভাগ্যক্রমে বিমান থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছিলেন। তবে একজন এ ঘটনায় মারাত্মক ভাবে আহত হয়েছেন এবং ভবিষ্যতে আর বিমান চালাতে পারবেন না তিনি।

ভারতের জন্য চলতি বছরটি শুরু হয়েছিল জাগুয়ার বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার মাধ্যমে। ২৮ জানুয়ারি উত্তর প্রদেশের কুশিনগর জেলায় এ ঘটনা ঘটে। এটিও আকাশে ওড়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিধ্বস্ত হয়। গোরখাপুর বিমান ঘাঁটি থেকে ছক বাঁধা প্রশিক্ষণের জন্য আকাশে উড়েছিল বিমানটি। অবশ্য, বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগে পাইলট নিরাপদে বের হয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন।

কয়েকটি সূত্র থেকে বলা হয়েছে, কারিগরি ত্রুটি আঁচ করতে পেরেছিলেন চালক। তাই বিমান থেকে জরুরি ভাবে বের হয়ে আসার আগেই একে জনবহুল এলাকা থেকে দূরে সরিয়ে নেন তিনি।

পরবর্তী মাসটি ভারতের বিমান বাহিনীর জন্য বেশ তিক্ত হয়ে থাকবে। পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের বালাকোটে চালানো বিমান হামলাকে ভারত সফল হিসেবে দাবি করা সত্ত্বেও এ মাসটি বেশ তিক্ত হিসেবে গণ্য করা হয়। ফেব্রুয়ারি মাসের পয়লা তারিখে পরীক্ষামূলক উড্ডয়নের সময়ে বিধ্বস্ত হয় ভারতীয় বিমান বাহিনীর মান-উন্নত মিরেজ ২০০০। এ ঘটনায় নিহত হন দুই পাইলই। এ দিকে ১২ ফেব্রুয়ারি রাজস্থানের জয়সালমারে বিধ্বস্ত হয় মিগ-২৭। অবশ্য ভারতীয় বিমান বাহিনীর পাইলট নিরাপদে বের হতে সক্ষম হয়েছিলেন।

এদিকে, ১৯ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় বিমান কসরত বা অ্যাক্রোবেটিক দল সূর্য কিরণের দু’টি বিমান বিধ্বস্ত হয়। এয়ার ইন্ডিয়া শোর মাত্র একদিন আগেই ব্যাঙ্গালুরের ইয়েলাহানকা বিমান ঘাঁটির কাছে বিমান দু’টি বিধ্বস্ত হয়। বিমান থেকে দু’জন পাইলটই বের হয়ে আসতে সক্ষম হলেও একজন পাইলট শেষ পর্যন্ত নিহত হয়েছিলেন।

এদিকে ২৭ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান বিমান বাহিনীর সঙ্গে আকাশ যুদ্ধে ভারত অন্তত একটি মিগ-২১ হারায়। পাকিস্তান দাবি করেছে ভারতীয়

দু’টি বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। এর একটি ভারতীয় সীমানার মধ্যে পড়েছে। যাই হোক, মিগ-২১’এর পাইলট অভিনন্দনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছিল পাকিস্তান।

একই দিনে আরও একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। পাকিস্তানের সঙ্গে আকাশ যুদ্ধ যে এলাকায় হয়েছে তার থেকে অন্তত ১০০ কিলোমিটার দূরে এ ঘটনা ঘটে। ভারতীয় বিমান বাহিনীর এমআই-১৭ভি৫ হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ভারতীয় বিমান প্রতিরক্ষা বিভাগের হামলায়। এ ঘটনায় ছয় সেনা সদস্য এবং ভূমিতে এক বেসামরিক নাগরিকসহ মোট সাত জন প্রাণ হারান।

মার্চে ৮ এবং ৩১ তারিখে ভারত হারায় দু’টি মিগ বিমান। রাজস্থানের বিকানারে বিধ্বস্ত হয় মিগ-২১। এটি পাখির আঘাতে ভূপাতিত হয়েছিল। আর যোধপুরে বিধ্বস্ত হয় মিগ-২৭। দুই পাইলটই নিরাপদে বের হয়ে আসতে পেরেছিলেন।

তিন মাস পরে জুনের ৩ তারিখে ১৩ আরোহীসহ নিখোঁজ হয়ে যায় ভারতীয় বিমান বাহিনীর এএন-৩২ পরিবহন বিমান। কয়েক দিনব্যাপী তল্লাসি অভিযান চালিয়ে বিধ্বস্ত বিমানটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল। চীন সীমান্তবর্তী অসমের জোরহাটের মেচুকা বিমান ক্ষেত্রে যাওয়ার পথে এটি বিধ্বস্ত হয়।
ধান ক্ষেতে বিধ্বস্ত সুখোই এসইউ এমকেআই'এর আগুন নেভানোর চেষ্টা চলছে

No comments

Powered by Blogger.