আমরা কিভাবে স্বাধীন হলাম by বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর

১) বেতন ও পারিশ্রমিকের ৰেত্রে এই নিয়মগুলো মানতে হবে। চেকের সঙ্গে সব বেতন-বিল অথবা পারিশ্রমিক রেজিস্টার পেশ করতে হবে। বেতন বিলের সংশ্লিষ্ট কমী সংস্থার প্রতিনিধির অনুমোদন সূচক স্বাৰর থাকতে হবে।
(২) কেবল মাত্র ব্যক্তিগত কারণে সপ্তাহে ১ হাজার টাকা তোলা যাবে। (৩) চিনির কলের জন্য ইৰু এবং পাটকলের জন্য পাট প্রভৃতি শিল্প-কাঁচামাল ক্রয় করার জন্য অর্থ দেয়া হবে।
(৪) বাংলাদেশের ক্রেতাদের প্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয়ের জন্য কেবলমাত্র বাণিজ্য সংক্রান্ত ব্যাপারে সপ্তাহে ১০ হাজার টাকা পর্যনত্ম দেয়া হবে। এ টাকা নগদ বা নগদ ড্রাফটে নেয়া যেতে পারে। কিন্তু উল্লেখিত ৩ ও ৪ বিধান মোতাবেক টাকা দেয়ার আগে ব্যাংক আগের কাগজপত্র দেখে নিশ্চিত হবে যে অর্থগ্রহণকারী সত্যিই কোন শিল্প বা বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বা একজন ব্যবসায়ী। তাছাড়া দেখতে হবে যে, টাকা তোলা হচ্ছে তা যেন গত এক বছরের সাপ্তাহিক গড়পড়তা তোলা টাকার বেশি না হয়।
(৫) শিল্প পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার কাজে সে সব কনট্রাক্টর নিয়োজিত এবং যাদের গৃহনির্মাণের জিনিসপত্র ও সাজসরঞ্জাম কেনার জন্য টাকা তুলতে হয় তাদের ৰেত্রে চেকের সঙ্গে এ মর্মে যথাযোগ্য কর্তৃপৰের কাছ থেকে একটি সার্টিফিকেট দাখিল করতে হবে যে, উক্ত ব্যক্তি যে টাকা তুলতে চেয়েছেন তা উপরে বর্ণিত কাজের উদ্দেশেই ব্যয় করা হবে।
(গ) ক্রসচেক ও ক্রস ডিমান্ড ড্রাফটের বেলায় কোন বিধিনিষেধ নেই এবং বাংলাদেশের যে কোন ব্যাংক তা ইসু্য করতে পারবে এবং তা যে কোন ব্যাংকে জমা দেয়া যাবে।
(ঘ) স্টেট ব্যাংক এবং পাকিস্তান ন্যাশনাল ব্যাংক বাংলাদেশের যে কোন জায়গায় টাকাকড়ির টেলিগ্রাফ ট্রান্সফার চালু রাখতে পারবে, তবে এ ধরনের লেনদেন ঢাকার মাধ্যমে করতে হবে। যেসব ব্যাংকের শাখা পশ্চিম পাকিস্তানে তাদের ঢাকাস্থ স্টেট ব্যাংক এবং পাকিস্তান ন্যাশনাল ব্যাংকের শাখায় জমা দেয়ার জন্য উপযুক্ত টাকার ব্যবস্থা করতে হবে।
(ঙ) 'ঘ'-এ বর্ণিত নির্দেশ অনুযায়ী টাকা সংগ্রহের ব্যবস্থার জন্য আনত্মঃআঞ্চলিক টেলিফোন চ্যানেল নিম্নোক্ত কারণে সোমবার, মঙ্গলবার, বুধবার এবং বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা থেকে ৪টা পর্যনত্ম খোলা থাকতে পারবে।
(১) সোমবার এবং বুধবার টাকা সংগ্রহের জন্য কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো বিকাল ৩টা থেকে ৪টা পর্যনত্ম একবার খবর পাঠাতে পারবে।
(২) মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে প্রতিটি কমার্শিয়াল ব্যাংক এ মর্মে খবর গ্রহণ করতে পারবে যে প্রয়োজনীয় টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।
(চ) বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ব্যাংকিং ব্যবস্থার জন্য চালু টেলিপ্রিন্টারের কাজ অব্যাহত থাকবে।
(ছ) বাংলাদেশের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিলসমূহ আদায়ের কাজ চলতে দেয়া হবে, তবে এসব ৰেত্রে ক্রস চেক বা ড্রাফটযোগে পাওনা মেটাতে হবে।
(জ) বৈদেশিক ট্রাভেলার্স চেক ভাঙ্গাবার দায়িত্ব কেবল অনুমোদিত ডিলারদের ওপরই ন্যসত্ম থাকবে।
(ঝ) কূটনৈতিক মিশনের লোকেরা অবাধে তাদের এ্যাকাউন্ট চালু রাখতে পারবেন। এবং বৈদেশিক নাগরিকরা তাদের বৈদেশিক মুদ্রার এ্যাকাউন্ট এবং বৈদেশিক মুদ্রায় প্রাপ্ত টাকা-পয়সা সংক্রান্ত যাবতীয় কাজকর্ম চালিয়ে যেতে পারবেন।
(ঞ) লকার ব্যবস্থা চালু রাখতে দেয়া হবে না।
(ট) স্টেট ব্যাংক অথবা অন্য কোন ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশের বাইরে টাকা-পয়সা পাঠানো চলবে না।
(ঠ) বিদেশ থেকে আমদানির জন্য প্রদত্ত লাইসেন্সর বিনিময়ে ঋণপত্র খোলা যাবে (বোনাস ভাউচার জমা দিয়ে যে লাইসেন্স পাওয়া যায় তাও এর অন্তর্ভুক্ত)।
(ড) বাটার ডকুমেন্ট সংক্রান্ত (এসব ৰেত্রে মাল ইতোমধ্যে জাহাজ বোঝাই করা হয়েছে) পাওনা শোধ করতে হবে।
(ঢ) যেসব রফতানি ঋণ পরিশোধিত হয়নি, সেগুলো ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড এবং ইস্টার্ন ব্যাংকিং কর্পোরেশনের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে হবে। তবে এসব ব্যাংকে এতদসংক্রান্ত যেসব নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সেগুলো মেনে চলতে হবে।
স্টেট ব্যাংক
২৬ নং নির্দেশ : অন্যান্য ব্যাংকগুলোর মতো স্টেট ব্যাংকও ব্যাংকের কাজ_কারবার ও দফতরের প্রশাসনিক কাজের একই সময় পালন করবে। উপরে উলেস্নখিত বিধিনিষেধগুলো যথারীতি পালন করা হচ্ছে কিনা সে ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ স্টেট ব্যাংক করবে।
'পি' ফর্ম দেয়া যেতে পারে এবং ছাত্র ও অন্যান্য অনুমোদিত প্রাপকের জন্য বিদেশে সব অনুমোদিত অর্থ প্রেরণের অনুমতি দেয়া যেতে পারে।
আমদানি ও রফতানির কন্ট্রোলার
২৭ নং নির্দেশ : বাংলাদেশে মালপত্র আমদানির জন্য আমদানির লাইসেন্স ইসু্য ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কাজ চালানোর উদ্দেশে আমদানি ও রফতানি কন্ট্রোলারের অফিস চালু থাকবে।
ট্রাভেল এজেন্ট ও বিদেশী বিমান সংস্থা
২৮ নং নির্দেশ : সব ট্রাভেল এজেন্ট ও বিদেশী বিমান সংস্থার অফিস চালু থাকতে পারে। তাদের বিক্রয়লব্ধ অর্থ বাংলাদেশের মধ্যে কোন ব্যাংকে জমা রাখতে হবে।
ফায়ার সার্ভিস
২৯ নং নির্দেশ : বাংলাদেশের সর্বত্র সব অগি্ননির্বাপক সার্ভিস চালু থাকেব।
পৌরসভা
৩০ নং নির্দেশ : ধাঙ্গরের ট্রাক, রাসত্মার বাতি, ঝাড়ু দেয়ার কাজ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য ও নিষ্কাশন সার্ভিস পরিচালনার উদ্দেশে পৌরসভাগুলোর প্রয়োজনীয় বিভাগ খোলা থাকবে।
কর বন্ধ অভিযান
৩১ নং নির্দেশ : (ক) পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যনত্ম :
(১) কোন ভূমি রাজস্ব আদায় করা হবে না।
(২) বাংলাদেশে উৎপাদিত লবণের ওপর শুল্ক আদায় করা হবে না।
(৩) বাংলাদেশে উৎপাদিত তৈরি তামাকের ওপর কোন কর আদায় করা হবে না।
(৪) তাঁতীরা কোন শুল্ক ছাড়াই সুতা কিনতে পারবে এবং কারখানা ও ডিলাররা শুল্কবিহীন মূল্যে সুতা বিক্রি করবে।
উপরের বিষয়গুলোর সাপেৰ প্রমোদ কর, হাটবাজার, সেতু ও পুকুর শুল্কসহ সব প্রাদেশিক কর আদায় করা হবে এবং বাংলাদেশ সরকারের এ্যাকাউন্টে জমা দেয়া হবে।
(গ) শুল্কসহ সব স্থানীয় কর দিতে হবে।
(ঘ) কেন্দ্রীয় সরকার এতদিন কাস্টমস ডিউটি, আবগারি শুল্ক, বিক্রয় করসহ যে সকল অপ্রত্যৰ কেন্দ্রীয় কর আদায় করত, সেগুলো এখন থেকে কর আদায়কারী এজেন্সিরা সংগ্রহ করবে। কিন্তু সেগুলো কেন্দ্রীয় সরকারের এ্যাকাউন্টে জমা দেয়া হবে না অথবা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে হস্তান্তর বা পাঠানো চলবে না। এভাবে সংগৃহীত অর্থ ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড এবং ইস্টার্ন ব্যাংকিং কর্পোরেশন লিমিটেডের স্পেশাল এ্যাকউন্ট জমা করতে হবে। এসব ব্যাংক এ ব্যাপারে তাদের কাছে ইসু্য করা নির্দেশগুলো মেনে চলবেন। সব আদায়কারী এজেন্সি এসব নির্দেশ এবং মাঝে মাঝে ইসু্য করা যেতে পারে এমন অন্যসব নির্দেশ বাসত্মবায়িত করবেন।
(ঢ) পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত প্রত্যৰ কেন্দ্রীয় করসমূহ, যেমন আয়কর, আদায় করা হবে না।
পাকিস্তান বীমা কর্পোরেশন ও বীমা কোম্পানিসমূহ
৩২ নং নির্দেশ : পাকিস্তান বীমা কর্পোরেশন চালু থাকবে। পোস্টাল জীবন বীমাসহ অন্যসব বীমা কোম্পানিও চালু থাকবে।
বেসরকারী বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং দোকানপাট
৩৩ নং নির্দেশ : সব বেসরকারী বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং দোকানপাট স্বাভাবিকভাবে চালু থাকবে এবং স্বাভাবিক কাজের সময় খোলা থাকবে।
কালো পতাকা
৩৪ নং নির্দেশ : সব গৃহ-শীর্ষে কালো পতাকা উড্ডীন থাকবে।
সংগ্রাম পরিষদ
৩৫ নং নির্দেশ : সংগ্রাম পরিষদসমূহ সব পর্যায়ে জোরেশোরে তাদের কাজ চালিয়ে যাবে এবং এসব নির্দেশও মাঝে মাঝে ইসু্য করা যেতে পারে এমন অন্য সব নির্দেশ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
১৯৭১ সালের ১৫ মার্চ আওয়ামী লীগ নিম্নলিখিত 'ব্যাখ্যাগুলো' ইসু্য করেন।
সাধারণ
(ক) ইসু্যকৃত নির্দেশাবলীর বাস্তবায়নের উদ্দেশে সিমেন্ট, চটের থলি এবং রিলিফসামগ্রী সংগ্রহের জন্য সাপস্নাই ও ইন্সপেকশন ডিরেক্টরেটের প্রয়োজনীয় বিভাগগুলো কাজ চালিয়ে যাবে।
(খ) ইসু্যকৃত নির্দেশাবলীর বাস্তবায়নের জন্য কাস্টমস ও আবগারি বিভাগ এবং এ ধরনের অন্যান্য এজেন্সিগুলোর কর্মচারীরা তাদের নিজ নিজ জায়গায় কাজে যোগ দেবে।
সুনির্দিষ্ট নির্দেশাবলীর ব্যাখ্যা
৪ নং নির্দেশ : বৈদেশিক রফতানি ব্যাহত হতে পারে সেই সব ৰেত্রে যেখানে 'লেটার অব ক্রেডিট' ইতোমধ্যে খোলা হয়েছে কিন্তু রফতানি বিলগুলো সংগ্রহ করা হবে ২৫ নং নির্দেশের 'চ' ধারা অনুসারে।
৫ নং নির্দেশ : আকাশপথে এবং বৈদেশিক ডাকের মাধ্যমে আমদানিকৃত জিনিসগুলো খালাস করা হবে। এ উদ্দেশ্যে কাস্টমস বিভাগ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় এজেন্সিগুলো কাজ চালিয়ে যাবে।
১৬ নং নির্দেশ : খাদ্যশস্য দ্রম্নত অপসারণের জন্য 'শেড' না পাওয়া গেলে, উন্মুক্ত জেটিতে সেগুলো রাখা চলবে।
১৯ নং নির্দেশ : সড়ক সংরৰণের কাজ চালু থাকবে।
২০ নং নির্দেশ : ঘূর্ণিবিধ্বস্ত এলাকায় রিলিফের সাহায্য দ্রব্য পৌঁছানোর জন্য যে পরিবহন-সংক্রান্ত কর্মচারীদের নিযুক্ত করা হয়েছিল, তারা তাদের কাজ চালিয়ে যাবে।
২৫ নং নির্দেশ : ব্যাংকসমূহ শুধু বাংলাদেশের অন্তর্গত পার্টির পৰে এমন ব্যাংক গ্যারান্টি ও 'ইনডেমনিটি বন্ড' ইসু্য করতে পারবে, যা শুধু বাংলাদেশের মধ্যে চালানো যাবে।
৩১ নং নির্দেশ : প্রাদেশিক করগুলো আগের মতোই দিতে হবে। কাস্টমস ডিউটি, আবগারি কর এবং বিক্রয় করের মতো কেন্দ্রীয় পরোৰ করগুলোর জন্য নিম্নোক্ত নিয়ম অনুসরণ করতে হবে।
(ক) কাস্টমস ও আবগারি বা অন্যান্য কর কর্তৃপক্ষগণ যে কর ধার্য করেছেন, করদাতাকে সেই ধার্যকৃত কর বা ডিউটি ইস্টার্ন মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড ও ইস্টার্ন ব্যাংকিং কর্পোরেশন লিমিটেডের বিশেষ এ্যাকাউন্টে জমা দিতে হবে।
(খ) উপরে উল্লেখিত কাজের জন্য কাস্টমস ও আবগারি বিভাগ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় এজেন্সিসমূহের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো কাজ চালিয়ে যাবে।
এসব বিভিন্ন নির্দেশের মধ্যে দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উদ্ভবের ভিত্তি তৈরি করেছেন এবং মুক্তিযুদ্ধের পূর্বেই স্বতন্ত্র রাষ্ট্রের নীতিমালার নির্দেশনা দেন। এই রাষ্ট্রের সার্বভৌম কর্তৃত্বের কেন্দ্রে জনসাধারণ, এই কতৃত্বের স্বরূপ সিভিল এবং সিভিল কর্তৃত্বের অন্তর্গত পুলিশ এবং মিলিটারি। এই আন্দোলনের নেতিবাদী দিকটিও উল্লেখ্য। অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে যে-বিকল্প রাষ্ট্রের ভিত্তি তৈরি হয়েছে তার মধ্যে বিদ্যামান সমাজ কাঠামো অৰত থেকে গেছে। এই বিকল্প রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠান ৰেত্রে বাঙালি মধ্যশ্রেণীর ভূমিকার দূরস্পর্শী রূপান্তর ঘটেছে, কিন্তু মধ্যশ্রেণী উদ্ভূত বাঙালি প্রশাসকদের বদল ঘটেনি। কোন সমাজ গ্রুপ অসহযোগের মাধ্যমে উচ্ছেদ হয়নি কিংবা স্থানচু্যত হয়নি। সমাজ কাঠামো অৰত থাকা, বাঙালি প্রশাসকদের অপরিবর্তন এবং সমাজ গ্রম্নপের উচ্ছেদ না-হওয়ার দূরস্পর্শী প্রভাব পড়েছে স্বাধীনতা-উত্তর রাষ্ট্র কাঠামোর ৰেত্রে এবং সামরিক বাহিনীর রাষ্ট্রৰমতা সম্বন্ধে দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে।

No comments

Powered by Blogger.