পুলিশে ঘাপটি মেরে থাকা দলবাজদের তালিকা হচ্ছে- প্রশাসন জামায়াত শিবিরের রাহুমুক্ত হচ্ছে না by শংকর কুমার দে

বিএনপি-জামায়াত শিবিরের রাহুগ্রাসকবলিত পুলিশ প্রশাসন। চারদলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রৰা করে চলেছে জোটের দলীয়করণ করা পুলিশ কর্মকর্তারা।
সরকারের ভেতরের খবর ফাঁস করে দিচ্ছে তারা। বিএনপি-জামায়াত শিবিরের পুলিশ কর্মকর্তাদের অনেকেই ভোল পাল্টে অনেকেই সেজে গেছে সাচ্চা আওয়ামী লীগার পুলিশ কর্মকর্তা। সরকারকে বেকায়দায় ফেলে ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছে তারা। গোয়েন্দা সংস্থা পুলিশ প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থাকা বিএনপি-জামায়াত শিবিরের দলবাজ তালিকা তৈরি করছে। এ খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
চারদলীয় জোট সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করার ব্যাপারে তথ্য পাচার করে দেয় সিআইডির ৪ পুলিশ কর্মকর্তা। তারা বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে বাবরকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ সংক্রানত্ম তথ্য ফাঁস করে দিয়েছে। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও চট্টগ্রামের দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় চারদলীয় জোট সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময়ে তথ্য পাচার করে দেয়ার ঘটনাটি ঘটে। বিএনপির কোন্ কোন্ কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে তাদের যোগাযোগ হয়েছে তাদের মোবাইল ফোনের কললিস্ট দেখে তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সিআইডির ৪ পুলিশ কর্মকর্তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএনপি-জামায়াত শিবিরের সন্ত্রাসীরা রগ কেটে, হাতুড়ি বাটাল দিয়ে পিটিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশ ম্যানহোলে ফেলে দেয়ার ঘটনায় বিএনপি-জামায়াত শিবির সমর্থিত পুলিশের সহায়তা থাকার অভিযোগে তদনত্ম করা হচ্ছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াত-শিবির যে রাতে সন্ত্রাসের তা-বলীলা চালায় কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তাদের হাতে-পায়ে ধরে ছাত্রলীগের কর্মীরা বাঁচানোর আকুতি জানিয়েছে। কিন্তু জামায়াত-শিবির সমর্থিত পুলিশ সদস্যরা তাদের প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা তো করেইনি, বরং বুট দিয়ে তাদের লাথি মেরে ফেলে দিয়েছে। সেই রাতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মোতায়েন করা পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। জামায়াত-শিবির সেই রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ফারম্নক হোসেনকে নির্মমভাবে খুন করে তার লাশ ম্যানহোলে ফেলে দিয়েছে। ছাত্রলীগের কর্মীদের রগ কেটে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরম্নতর আহত করে অজ্ঞান অবস্থায় ফেলে দিতে জামায়াত_শিবিরকে সহায়তা করেছে তাদের দলীয় পুলিশ সদস্যরা। পুলিশের এক এসপিসহ ১০ পুলিশ সদস্যকে এ ঘটনায় প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। জামায়াত_শিবিরকে সহায়তা করার অভিযোগে এসব পুলিশ কর্মকর্তার ব্যাপারে তদনত্ম করা হচ্ছে।
রংপুরে নারী-পুরম্নষের এক সঙ্গে চলাফেরা করার ওপর ফতোয়াবাজিসহ নানা অপকর্মের হোতা রংপুর ডিবি পুলিশের এসআই গোলাম মিনাজউদ্দিনকে কোজ করা হয়েছে বৃহস্পতিবার। গত ১ মার্চে রংপুর শহরের বিনোদন পার্ক সুরভী উদ্যান ও চিড়িয়াখানা থেকে ১৯ নারী-পুরম্নষকে আটক করে। তাদের আটক করে অশস্নীল-অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এ ঘটনার পরের দিন জাতীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজি ও গোলাম মিনাজউদ্দিনকে শোকজ করে। এ ঘটনায় সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হওয়ার পরও দায়ী ডিবি পুলিশের এসআইর বিরম্নদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বিলম্ব ঘটে। পুলিশ প্রশাসনের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা জামায়াত-শিবিরের পুলিশ কর্মকর্তারা ডিবি পুলিশের এ এসআইকে মদদ যুগিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ কারণেই তার বিরম্নদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিলম্ব ঘটেছে বলে জানা গেছে। পুলিশ প্রশাসনে যে বিএনপি, জামায়াত-শিবির ঘাপটি মেরে বসে আছে রংপুরের ডিবি পুলিশের এক এসআইয়ের ঘটনা তা সাৰ্য দিচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ৰমতায় এসে ২৬ হাজার পুলিশ সদস্যের নিয়োগ দিয়েছে। বিএনপি, জামায়াত_শিবিরের কর্মীদের নিয়োগদানে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনে আওয়ামী লীগার অভিহিত করে ১ হাজার ৩৮ পুলিশ কর্মকর্তাকে চাকরিচু্যত, পদোন্নতি বঞ্চিত, হয়রানি করেছে। পৰানত্মরে দলীয় বিবেচনায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে ৮৯৬ জনকে পদোন্নতি, প্রাইস পোস্টিংসহ বিভিন্নভাবে পুরস্কৃত করেছে। এমনকি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ৰমতা থেকে বিদায় নেয়ার সময় পুলিশ প্রশাসনকে ৪ সত্মরে সাজিয়ে গেছে। তত্ত্বাধায়ক সরকার ৰমতায় আসার পর একটি সত্মরকে বদলি করলে যেন অন্য আরেকটি সত্মর থেকে যায়। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুলিশ প্রশাসনের সামান্য কিছু পরিবর্তন করলেও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দলীয়করণের রাহুগ্রাস মুক্ত করতে পারেনি। বর্তমান সরকার ৰমতায় আসার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতোই পুলিশ প্রশাসনের কিছু পদের বদলি ও পরিবর্তন করা ছাড়া জোট সরকারের দলীয়করণ প্রভাবমুক্ত করার উদ্যোগ নিতে পারেনি। এতে বর্তমান সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.