শিবপুরের সিঅ্যান্ডবি বাজারে পুলিশি তাণ্ডব- ৮-১০টি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাটঃ আহত ১৫

‘ভাই আমার পিতাকে মারবেন না। আমার পিতা একজন হাঁপানি রোগী। তাকে মারলে তিনি মরে যাবেন।’ ‘বাবা আমার পুত্রকে মারবেন না।
আমার পুত্র একজন গলা অপারেশনের রোগী। তাকে মারলে সে বাঁচবে না।’ বাবাকে বাঁচাতে ছেলের এবং ছেলেকে বাঁচাতে বাবার এ আকুতিও পুলিশি নির্যাতনের হাত থেকে রা পাননি হাসমত উল্লাহ নামে ৭০ বছরের বৃদ্ধ এবং সাইফুল ইসলাম নামে তার ছেলে। সব মানবিক আবেদনকে পদদলিত করে পুলিশ অসুস্থ দুই বাবা ও ছেলেকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করেছে।

গত শুক্রবার রাত ৯টায় শিবপুর উপজেলার সিঅ্যান্ডবি বাজারে পুলিশ এ তাণ্ডব চালিয়েছে। একই সময় পুলিশের পিটুনিতে আহত হয়েছে কম-বেশি ১৫ জন নারী ও পুরুষ। পুলিশ ভাঙচুর করেছে পাঁচ-ছয়টি দোকান ও বাড়িঘর। পুলিশের নির্মমতার হাত থেকে মহিলারা পর্যন্ত রা পাননি।

এলাকাবাসী জানান, শিবপুর থানার দারোগা নূরুল ইসলাম প্রায়ই সিঅ্যান্ডবি বাজার এলাকায় গিয়ে ফেনসিডিল বিক্রির মিথ্যা অভিযোগ এনে মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করে আসছে। কয়েক দিন আগে নূরুল ইসলাম নামের এ দারোগা এক ডাক্তারকে ফেনসিডিল বিক্রির মিথ্যা অভিযোগে তার কাছ থেকে তিন হাজার টাকা আদায় করে। গত শুক্রবার রাত ৯টায় দারোগা নূরুল ইসলাম দু’জন কনস্টেবল নিয়ে সাদা পোশাকে সিঅ্যান্ডবি বাজারে যান। সেখানে ডাকাতদের কায়দায় দেলোয়ার হোসেনের রাইস মিলে ঢুকে ভেতর থেকে সাটার বন্ধ করে দেন। পরে তার হাত-পা বেঁধে তাকে কুকুরের মতো পেটাতে থাকেন। এ সময় দেলোয়ার পুলিশের নির্যাতনে চিৎকার করতে থাকলে বাজারের লোকজন ঘটনাস্থলে জড়ো হন। জনগণ বাইরে থেকে কিছু বুঝতে না পেরে তারা সাটার ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখতে পান দারোগা নূরুল ইসলাম তাকে হাত-পা বেঁধে মারছে। এ সময় জনগণ দেলোয়ারকে মারধর করার কারণ জানতে চাইলে দারোগা নূরুল ইসলাম জানান দেলোয়ার ফেনসিডিল বিক্রি করেন। এতে জনগণ সমস্বরে বলতে থাকে দেলোয়ার একজন নিরীহ ব্যবসায়ী। সে ধান-চালের ব্যবসায় করে। তিনি ভালো মানুষ। কেউ আপনাদের ভুল তথ্য দিয়েছে। এ অবস্থায় পুলিশ কর্মকর্তা জোর করে তাকে ধরে নিয়ে যেতে চাইলে জনগণ তার বিরুদ্ধে মামলা বা গ্রেফতারি পরোয়ানা দেখাতে বলেন। এতে অবস্থা বেগতিক দেখে সেই পুলিশ কর্মকর্তা সেখান থেকে চলে যান। যাওয়ার সময় দারোগা নূরুল ইসলাম ক্যাশ থেকে ১৮ হাজার টাকা ও দেলোয়ারের মোটরসাইকেল নিয়ে যান। এর আধা ঘণ্টা পর ১২-১৩ জনের একদল সশস্ত্র পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বাজারের লোকজনের ওপর হামলা চালায়। তারা এখলাসুর রহমানের ওষুধের দোকান, শরিফুল ইসলামের মুদি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করে। পরে তারা দেলোয়ারের বাড়ি গিয়ে হামলা চালায়। তারা দেলোয়ারের স্ত্রী শিরিনসহ চার-পাঁচজন মহিলাকে মারধর করে। এ সময় দেলোয়ারের ভাই আনোয়ার দৌড়ে এলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। পরে ঘটনাস্থল থেকে আরো ১৩ জনকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। আবার রাতেই রহস্যজনক কারণে ১০ জনকে ছেড়ে দেয়। আনোয়ার, কলেজছাত্র সাগর ও কৃষক লুৎফরকে আটক রেখে সারা রাত তাদের ওপর নির্যাতন চালায় শিবপুর থানা পুলিশ। গতকাল শুক্রবার তাদের আধমরা অবস্থায় কোর্টে চালান দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে ঘটনার পর শিবপুর থানার ওসির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে ঘটনা অস্বীকার করেন। শুক্রবার সকালে তিনি বলেন, ঘটনা সিঅ্যান্ডবি বাজারের ঘটনা। কোন্দারপাড়া বাজারের কথা বলায় আমি ঘটনা স্বীকার করিনি। এ ব্যাপারে শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুনুর রশিদ খান বলেন, সিঅ্যান্ডবি বাজারের ঘটনা অওয়ামী লীগ ও সরকারের ভাবমূর্তি ুণœ করেছে। শিবপুরের ওসির বিরুদ্ধে শত শত অভিযোগ নিয়ে হাজার হাজার মানুষ এখন মিছিলোন্মুখ অবস্থায় রয়েছে। যেকোনো সময়ই ওসির বিরুদ্ধে মিছিল নিয়ে মানুষ মাঠে নামতে পারেন।
       


No comments

Powered by Blogger.