সুধীজন পাঠাগারে এক দিন by ফিরোজ জামান চৌধুরী

নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া মোড়ে নেমেই পাঠাগারটির খোঁজ শুরু করলাম। ‘সুধীজন পাঠাগার কোন দিকে’ জিজ্ঞেস করামাত্র এক পথচারী তর্জনী উঁচিয়ে বললেন, সামনে কয়েক বিল্ডিং পরেই পাঠাগার। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু সড়ক ধরে আমরা সামনে পা বাড়াই।
সত্যি সত্যি রাস্তার ডান পাশে পেয়ে যাই সুধীজন পাঠাগার ভবন। সিঁড়ি বেয়ে তিন তলায় উঠেই আমরা অবাক না হয়ে পারি না—এত্ত বই! ছানাবড়া হয়ে যাওয়া চোখ দিয়ে আমরা দেখি বিশাল এক কক্ষের চার দেয়ালজুড়ে কেবল বই আর বই। আর মাঝের জায়গায় পাঠকদের জন্য পড়ার টেবিল ও চেয়ারের সারি। চেয়ারগুলো ইতিমধ্যেই দখল হয়ে গেছে আগ্রহী পাঠকদের সমাগমে। টেবিলের ওপর স্তূপ করে রাখা পত্রিকা ও ম্যাগাজিনের পাতায় নিবিষ্ট মনোযোগ তাঁদের।
‘আমরা ঢাকা থেকে এসেছি। পাঠাগারটা একটু ঘুরে দেখতে পারি?’ জিজ্ঞেস করি পাঠাগার দেখভালের দায়িত্বে থাকা একজনকে। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর উত্তর, ‘নিশ্চয়, নিশ্চয়। এই পাঠাগার সবার জন্য উন্মুক্ত।’
পাঠাগারের কর্মীদের সঙ্গে গল্প-কথায় জানা গেল, সুধীজন পাঠাগারের আদ্যোপান্ত। ১৯৬৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের কয়েকজন স্বাপ্নিক তরুণের হাত ধরে যাত্রা শুরু সুধীজন পাঠাগারের। ১৯৭৮ সাল থেকে নিজস্ব ভবনে চলছে এই পাঠাগারের কার্যক্রম। এখন প্রতিদিন বিকেল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকে এই পাঠাগার। ব্যতিক্রম শুধু শনিবার—ওই দিন পাঠাগার খোলে বেলা ১১টায়।
পাঠাগারে বই নিতে এসেছে আতিক। সরকারি তোলারাম কলেজের এই শিক্ষার্থী বলল, ‘সাহিত্যবিষয়ক বইয়ের পাশাপাশি পাঠ্যবইও পাওয়া যায় এখানে। সামনে পরীক্ষা, তাই একাধিক বই থেকে নোট করার জন্য বই তুলতে এসেছি আমি।’
অনেকে এসেছেন স্রেফ পত্রিকা পড়ার জন্য। কথা হলো এমন দুজনের সঙ্গে। রায়হান ও মঞ্জু নামে দুজনই জানালেন প্রায় একই কথা। ‘একসঙ্গে অনেক পত্রিকা পড়া যায় এখানে। তাই প্রতিদিন পত্রিকা পড়তেই পাঠাগারে আসি।’
শুধু শিক্ষার্থী বা তরুণেরাই নয়, এখানে আসেন নানা বয়সী শ্রেণী-পেশার মানুষ। যাঁরা পাঠাগারের সদস্য, তাঁরা সদস্য কার্ডের মাধ্যমে বাড়িতে বই নিয়ে যাচ্ছেন সাত থেকে ১৫ দিনের জন্য। আর যাঁরা সদস্য নন, তাঁরা পাঠাগারে বসেই বই পড়ছেন।
প্রায় ৩২ হাজার বইয়ের এক বিশাল সম্ভার নিয়ে নারায়ণগঞ্জ শহরে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে সুধীজন পাঠাগার। এ বছর ২ ফেব্রুয়ারি ৪৯ বছর পেরিয়ে ৫০ বছরে পা রাখল সুধীজন পাঠাগার। সুধীজন পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মোহাম্মদ ইসহাক জানান, ‘বই মানুষের জ্ঞানের জগৎকে বিকশিত করে। প্রায় পাঁচ দশক ধরে নতুন প্রজন্মের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে কাজ করে যাচ্ছে সুধীজন পাঠাগার।’

No comments

Powered by Blogger.