রুম টু রিড বাংলাদেশ- নানা রঙে রাঙিয়ে by শরাফত হোসেন

শিশুদের সাক্ষরতার দক্ষতা ও পড়ার অভ্যাস উন্নয়নে কাজ করছে একদল তরুণ লেখক ও আঁকিয়ে। এশিয়া ও আফ্রিকার ১১টি দেশে পরিচালিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের তরুণেরাও সম্পৃক্ত এ কাজে।
লেখাকে সচিত্রীকরণের মাধ্যমে কী করে শিশুদের পাঠে আগ্রহী ও স্বপ্নবান করে তোলা যায়—এ যেন তারই উজ্জ্বল উদাহরণ।
রুম টু রিড বাংলাদেশ। একদল তরুণ লেখক-চিত্রকর নিয়ে শুরু হয় কর্মশালা। নিজেদের চেনা-জানা জগৎকে নতুন রূপে তুলে আনার জন্য নয়, শিশুদের চেনা-জানা জগৎকে তাদের মতো করে বোঝার, লেখা ও চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরার জন্য। আর এ কাজের সারথি হয়েছেন আবু সালেহ কাজল, দিনাত জুলফিকার ছবি, শারমিন নওরিন উর্মি, নাহিদা নিশা, শিরিনতা শাবীন চৌধুরী, ফারজানা তান্নি। এঁরা সবাই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন।
তাঁদের কাজের ধরন-ধারণ নিয়ে কথা বলতে আমরা গিয়েছিলাম ঢাকার লালমাটিয়ায় রুম টু রিড বাংলাদেশ কার্যালয়ে।
‘ব্যাপারটা আমার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হয়েছে। এখানে কাজ করতে এসে একটা জিনিস শিখেছি, সহজভাবে কাজ করাটাই সবচেয়ে কঠিন’ নিশার এ বক্তব্য সমর্থন করে ছবি বলে ওঠেন, ‘আমাদের অভিজ্ঞতাগুলো মজার। কীভাবে লেখার আইডিয়া এসেছে, লেখার সময় কী কী বিষয় ভাবনার ছিল—এসব নিয়ে আমরা লেখকদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। ফলে আঁকতে গিয়ে এ রকম রোমাঞ্চ অনুভব করেছি।’
‘আমরাও বেশ উদ্দীপনা পেয়েছি। শিশুদের মনস্তাত্ত্বিক বিষয়গুলো বুঝে এসে লিখতে হয়েছে।’
‘লেখা নিয়ে আবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনা করেছি আঁকিয়েদের সঙ্গে। তাঁরা আঁকছেন। আমরা লিখছি। অন্য রকম পরিবেশ।’ কথাগুলো বলতে বলতে আনমনা হয়ে গেলেন তান্নি ও শিরিনতা।
গোমড়া ভাব ভাঙালেন লোকাল ল্যাঙ্গুয়েজ পাবলিশিং প্রোগ্রামের প্রোগ্রাম অফিসার বিপ্লব মোস্তাফিজ। জানালেন কাজের খাতিরে লেখক-আঁকিয়েদের নিয়ে সাভারে যাওয়ার কথা। ‘আমরা তিন দিন ছিলাম, তাই না?’ কাজলের বক্তব্যে সমর্থন জোগালেন উর্মি, ছবি, নিশা। অনর্গল বলে গেলেন সিসিডিবি হোপ স্টোরে তাঁদের কাজের অভিজ্ঞতা, লেখক-শিল্পীদের সঙ্গে কাজের বিষয়-আশয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা, শিশুদের কাছ থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতা ইত্যাদি। শুধু লেখা-আঁকিবুঁকিতে মত্ত ছিলেন না তাঁরা, কাজের ফাঁকে খেলাধুলা, ঘুরে বেড়ানো—সবই ছিল কাজের অংশ।
উর্মি যোগ করেন, ‘আমার মনে হয়, নিজেকে আবিষ্কার করলাম এখানে কাজ করতে এসে।’ এতক্ষণে মুখ খুললেন কাজল, ‘বইয়ের কাজ আর এটা আলাদা। এখানে আমরা অনেক শিল্পী একসঙ্গে কাজ করেছি, সবার মধ্যে ভালো বোঝাপড়া ছিল। ফলে আমরা আনন্দের সঙ্গে কাজ করতে পেরেছি।’
এক টেবিলে বসে লেখক ও আঁকিয়েদের প্রশিক্ষণ। এটা একরকম নতুন চিন্তা। পরিবেশগত কারণেই লেখকদের সঙ্গে আঁকিয়েদের চিন্তার দূরত্ব কমে আসে। নিশার এ রকমই দাবি। আর ছবি জানালেন সংগতিপূর্ণ চিত্রের মাধ্যমে একটা বইয়ের রূপ কী করে বদলে দেওয়া যায়। উপস্থিত লেখকেরাও আঁকিয়েদের সঙ্গে একমত। তাঁরা সবাই মিলে শিশুদের পাঠের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে কাজ করে যেতে চান।

No comments

Powered by Blogger.