খালেদা জিয়ার নিবন্ধ- বিদেশি হস্তক্ষেপের আহ্বান কেন?

সম্প্রতি ওয়াশিংটন টাইমসে বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়ার স্বনামে প্রকাশিত অভিমত নিবন্ধটি আমাদের বিস্মিত করেছে। এভাবে একজন জাতীয় নেতা নিজ দেশে প্রকাশ্যে কোনো বিদেশি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ আহ্বান করতে পারেন_ সেটা অবিশ্বাস্যই বটে।
বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আইন-শৃঙ্খলা ও মানবাধিকার চিত্র এবং বিশেষভাবে আগামী জাতীয় নির্বাচন স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু করার ব্যাপারে সরকার এবং বিরোধী দলের ভিন্নমত থাকতেই পারে। এসব নিয়ে দেশের গণমাধ্যমে প্রতিনিয়ত বিতর্ক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সাধারণ মানুষও এসব ব্যাপারে সরকারের কাছে আরও মনোযোগ ও সুবিবেচনা প্রত্যাশা করেন। এ নিয়ে দেশবাসী বা কোনো সচেতন নাগরিক বিদেশিদের রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ জানানোর কথা চিন্তায়ও আনেন না। তারা চান, সরকার এবং বিরোধী দল সমঝোতার মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচনসহ গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যুগুলো সমাধান করুক। সুধী মহলও উভয় পক্ষের কাছে সুবিবেচনা প্রত্যাশা করে আসছেন। বিরোধীদলীয় নেতা দেশের মান-মর্যাদা ও মনোভাবকে বিবেচনায় না নিয়ে কীভাবে একটি বিদেশি পত্রিকায় উলি্লখিত বিষয়সমূহে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের কৌশল হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রসহ তার পশ্চিমা মিত্র দেশগুলোকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের আহ্বান জানালেন_ তা আমাদের বোধগম্য নয়। আমাদের কাছে তার এহেন আহ্বানকে অনভিপ্রেত, অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে। দেশে নির্বাচিত সংসদ রয়েছে। বিরোধী দল সংসদে গিয়ে বিতর্কে অংশ নেয় না। সংসদের কার্যবিবরণী তো এখন সরাসরি টেলিকাস্ট করা হয়। তাই বিরোধী দলকে এখন কথা বলতে না দিলে তা জনগণ দেখবেন, জানবেন এবং তার বিচার করতে পারবেন। এভাবে সংসদে উপস্থিত থেকে বিতর্কে অংশ নেওয়ার সুযোগ কাজে না লাগিয়ে বিদেশিদের প্রতি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের আহ্বান জানানো আর যা-ই হোক, আমাদের ভঙ্গুর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করবে না।
এটা স্বীকার্য যে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্দিষ্ট সময় অন্তর নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণই নির্ধারণ করেন তারা কাকে বা কোন দল অথবা জোটকে সরকার গঠনের সুযোগ দেবেন। এখানে ভিন্ন কোনো উপায়ে বা বিদেশিদের আহ্বান জানিয়ে সরকার পরিবর্তনের সুযোগ নেই। আর বিদেশি হস্তক্ষেপের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা শক্তিশালী হয়েছে বা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তার কোনো নজির বিশ্বে নেই। এটা সম্ভবও নয়। বিরোধীদলীয় নেতা এ সত্য অনুধাবন করবেন না_ এ ভাবাই যায় না।

No comments

Powered by Blogger.