ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিন হবে উপার্জনের প্রধান ক্ষেত্র- ডিজিটাল মেলায় ভিড় ॥ দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে উঠবে_জয়

ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলার শেষ দিন মেলা প্রাঙ্গণে তিল ধারনের ঠাঁই ছিল না। আগ্রহী মানুষ মেলায় গিয়েছিল তথ্যপ্রযুক্তি জানার অদম্য ইচ্ছা থেকে। মানুষের এই বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা আয়োজকদের মনে আশার সঞ্চার করেছে, ২০২১ সালের আগেই বাংলাদেশ পুরোপুরি ডিজিটালাইজড হবে।
মেলায় তরুণ প্রজন্ম উপস্থিত ছিল উল্লেখ করার মতো। বিভিন্ন স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের একের পর এক প্রশ্ন কিভাবে তারা বিশ্ব জয়ের ইন্টারনেট জগতে পা রাখতে পারবে। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের স্টলে তরুণ তরম্নণীদের উপচেপড়া ভিড়ের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে কম্পিউটার বিজ্ঞানী সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি ঘুরে ঘুরে আইটি সম্পর্কে নানা কথা বলেছেন। সেমিনারেও বক্তারা এমন আশার কথা বলেছেন। ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিন হবে এই দেশের উপার্জনের প্রধান ৰেত্র। ডিজিটাল মেলায় মানুষের বাঁধ ভাঙ্গা অংশগ্রহণ মেলার উদ্দেশ্যকে সফল করে তুলেছে।
ডিজিটাল মেলার শেষ দিন দু'টি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। 'টেকসই ই-সার্ভিস প্রদানে পিপিপি কাঠামো' শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বিনিয়োগ বোর্ডের কার্যনির্বাহী চেয়ারম্যান ড. এস এ সামাদ। সভাপতি ছিলেন অর্থ বিভাগের সচিব ড. মোহাম্মদ তারেক। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ডিনেটের নির্বাহী পরিচালক ড. অনন্য রায়হান।
পরের সেমিনারটি ছিল 'বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি' শীর্ষক। এই সেমিনারটি ছিল অন্য সেমিনারগুলোর চেয়ে ব্যতিক্রম। প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীর বিক্রমের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্যানেলিস্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, কম্পিউটার বিজ্ঞানী সজীব ওয়াজেদ জয়। সংসদ সদস্য ড. আকরাম এইচ চৌধুরী ও তথ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস এ্যাডমিনিস্ট্রেশনের শিৰক প্রফেসর ফারহাত আনোয়ার।
সেমিনারে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, একটি দেশের পরিচিতির জন্য একটা 'ব্যান্ড' থাকা দরকার। সারা দুনিয়ার কাছে আমাদের দেশ বন্যা, খরা, ঝড় তুফানের দেশ হিসেবে পরিচিতি পেয়ে আসছে। আমরাও যে ভাল কিছু করতে পারি তা গত এক বছরে প্রমাণ হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সেস্নাগান এখন বিশ্ব ব্যাপী একটি ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। দেশের মানুষের আনত্মরিকতা এবং একাগ্রতাই এই অর্জন। আমাদের মেধা আছে, যে মেধার উৎকর্ষ বিদেশের মানুষ দেখতে পায়নি এতদিন। এখন এটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। বিদেশে এখন আর আমরা ছোট নই। আমাদের একটি ভিশন আছে। ২০২১ সালের মধ্যে এই ভিশনে পেঁৗছতে পারলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে বহুদূর এগিয়ে যাবে। ভারতে ইতোমধ্যে তাদের জাতীয় আয়ের বিরাট একটি অংশ ইন্টারনেটকে অবলম্বনে আনা হচ্ছে। সেখানে প্রতিবছর প্রায় ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করছে। আশা করি একদিন আমাদের দৰ মানব সম্পদ গড়ে উঠবে। তারাও বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করতে পারবে। যা কিনা গার্মেন্টস সেক্টরের তুলনায় অনেক বেশি হবে।
তিনি মিডিয়ার প্রতি আহবান জানান, দেশের ইতিবাচক খবরগুলো গুরম্নত্ব দিয়ে তুলে ধরা। খারাপ খবর তো থাকবেই_ এর পাশাপাশি ভাল খবর মানুষ জানতে পারলে মনে তাদের আশার সঞ্চার হয়। আমাদের দূর্ভাগ্য প্রায় ৪০ বছর হয়ে গেছে দেশ স্বাধীন হয়েছে কিন্তু আমাদের দেশের পরিচিতির জন্য কোন ব্র্যান্ড তৈরি হয়নি। আর এই ৪০ বছরের মধ্যে মাত্র ১০ বছর ৰমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। ৩০ বছর যারা ৰমতায় ছিল তারা কেবল গদি অাঁকড়ে ধরে থাকার চেষ্টা করেছে। দেশের পরিচিতির জন্য কোন কাজ করেনি। এতে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়নি। কেবল নেতিবাচক বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হয়েছে। অথচ আমাদের দেশের আর্মি 'পিস কিপিং', গার্মেন্টসে সাফল্য, একুশে ফেব্রম্নয়ারির মতো একটি ভাষা আন্দোলন রয়েছে। '৭১-এর মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ আছে। বিদেশে বসবাস করেন এমন অনেকেই নিজ যোগ্যতায় অনেক বড় হয়েছেন। এসব ইতিবাচক দিক তুলে ধরা হয়নি। দেশেও এমন সব জিনিস তৈরি হচ্ছে যেগুলো বিদেশী ব্র্যান্ড হিসেবে বাজারে বিক্রি করা হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে কাজ চলছে। এটি একটি দীর্ঘ মেয়াদী কার্যক্রম। এটা একটা সরকারের সময় শুরম্ন হয়েছে, আরেকটি সরকার ৰমতায় এসে বন্ধ করে দিলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে উঠবে না। এটাকে ধরে রাখতে হবে। দেশের মানুষের প্রাণের চাওয়া হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা। ডিজিটাল বাংলাদেশই দেশের পরিচিতির জন্য বড় ভূমিকা পালন করবে।
সজীব ওয়াজেদ জয় এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, রাজনীতির চেয়ে আমি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার বিষয়টির প্রতি বেশি গুরম্নত্ব দিচ্ছি। তিনি বলেন, ইন্টারনেটের ব্যান্ডউইথের দাম কমানোর ব্যাপারে কাজ চলছে। অচিরেই ব্যান্ডউইথের দাম কমবে আশা করছি। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এ ব্যাপারে কাজ চলছে। বিদু্যতের ব্যাপারে তিনি বলেন, বিদু্যতের ব্যাপারে অনেক পস্ন্যান্ট বাসত্মবায়নের কাজ চলছে। আগামী এক বছরের মধ্যে এ সমস্যা সমাধান হবে বলে জানান। আমি বিশ্বাস করি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে বিদু্যতের কোন বিকল্প নেই। আওয়ামী লীগ যখন ২০০১ সালে ৰমতা ছেড়ে যায় তখন দেশে অনত্মত ৫ শ' মেগাওয়াট বিদু্যত উদ্বৃত রেখে গিয়েছিল। এরপর গত ৭ বছর আর কোন বিদু্যত উৎপাদন বাড়ানো হয়নি। এখানে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা আছেন তিনি বলতে পারবেন বর্তমান সরকার বিদু্যত উৎপাদন বাড়াতে কতগুলো প্রকল্প হাতে নিয়েছে। আমরা আশাবাদী বিদু্যতের সমস্যা সমাধান হবে।

No comments

Powered by Blogger.