নিরাপত্তার চাদরে ট্রাইব্যুনাল by শংকর কুমার দে

যুদ্ধাপরাধের মামলায় এই প্রথম কোন জামায়াত নেতার বিচারের রায় ঘোষণা উপলক্ষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে ঢেকে দেয়া হয়েছে নিরাপত্তার চাদরে।
ট্রাইব্যুনালকে ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে র‌্যাব, সোয়াত, গোয়েন্দা, দাঙ্গা পুলিশ, বোম ডিসপোজাল ইউনিটসহ পুলিশ বাহিনীর নিñিদ্র নিরাপত্তা বলয়। নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ের আশঙ্কায় রণসজ্জায় সজ্জিত হওয়ার মতো নিরাপত্তার আয়োজন করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। পিপার স্প্রে, এপিসি, জলকামান ও রায়টকারসহ সব ধরনের রণপ্রস্তুতিসহ র‌্যাব পুলিশের গাড়িগুলো বিশেষ টহল দেয়া শুরু করেছে। রাজধানী ঢাকা ছাড়াও সারাদেশের পুলিশকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পুলিশের উচ্চ পর্যায় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। দীর্ঘ ৪১ বছর পর গত ২১ জানুয়ারিতে দেশে প্রথম যুদ্ধাপরাধের বিচারে আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ দেয়ার পর আজ মঙ্গলবার জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায় ঘোষণা হচ্ছে। জায়ায়াত শিবির আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাতিল ও বিচারাধীন আটক যুদ্ধাপরাধীর মুক্তির দাবিতে আন্দোলনরত অবস্থায় মঙ্গলবার রায়ের দিন হরতাল আহ্বান করেছে। তারা নতুন করে হুমকি দিয়েছে, জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে রায় গেলে লাগাতার হরতাল দেয়া হবে, দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু করা হবে। এই প্রেক্ষাপটে ট্রাইব্যুনাল, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে যাতে নাশকতা ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য নিরাপত্তার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
সোমবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপারে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে বলা হয়েছে, জামায়াত শিবির জামায়াত শিবির যুদ্ধাপরাধীর মুক্তির দাবী ও আন্তর্জাতিক ট্রাইবুন্যাল ভেঙ্গে দেয়ার দাবীতে একের পর এক পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আক্রমণ ও হামলা করে আসছে। পুলিশের গাড়িতে আগুন, ভাংচুরসহ মানুষজনের জানমাল বিনষ্ট করার জন্য নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটাচ্ছে। জামায়াত নেতার রায় ঘোষণার দিন নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ জন্য ট্রাইব্যুনাল, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের নিরাপত্তা নিñিদ্র করে তোলার সব ধরনের আয়োজন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চতুর্দিকে শত শত সোয়াত, র‌্যাব, দাঙ্গা পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা ঘিরে রাখবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মাজার সংলগ্ন পশ্চিম দিকের গেট সকাল নয়টার আগেই আটকিয়ে দেয়া হবে। শিশু একাডেমীসংলগ্ন পূর্ব দিকের গেটটি করে দেয়া হবে বন্ধ। দুই দিকেই বিপুল সংখ্যক দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন থাকবে। মোতায়েন করা হবে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট। কেবলমাত্র অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রবেশ করতে পারবেন। অনুমোদন ছাড়া কোন ব্যাক্তির প্রবেশাধিকার থাকবে নিষিদ্ধ।
সোমবার থেকেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সব প্রবেশপথ ও আশপাশের পুরো এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কয়েক স্তরের। সোয়াত বাহিনীর সদস্যরা আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মূল প্রবেশপথ সুপ্রিমকোর্টের গেটে অবস্থান করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। শিশু একাডেমীর সামনে দিয়ে ট্রাইব্যুনালের দ্বিতীয় গেটসহ সংলগ্নএলাকা, শিক্ষা ভবন, কদম ফোয়ারা, পুরোনো হাইকোর্ট ও দোয়েল চত্বরসহ পুরো এলাকায় র‌্যাব-পুলিশ রণসজ্জায় সজ্জিত হয়ে ঘিরে রাখার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ছাড়াও রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়গুলোতেও শত শত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছে। পুলিশ রাস্তার মোড়ে মোড়ে পথচারীদের তল্লাশি করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পল্টন, বিজয়নগর, কাকরাইল, মগবাজার, মহাখালী, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, সাতরাস্তা, শাহবাগ, আরামবাগ, মালিবাগ, শাহাজানপুর, প্রেসক্লাব, দৈনিক বাংলা মোড় ও কমলাপুর, বায়তুল মোকাররম উত্তর ও দক্ষিণ গেট, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সর্তক অবস্থায় মোতায়েন করা হয়েছে। পিপার স্প্রে, এপিসি, জলকামান ও রায়টকারসহ পুলিশ ও র‌্যাবের বিশেষ গাড়ির টহল দিতে শুরু করেছে।
একাত্তুরের মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গত ২১ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ প্রদানের পর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় ঘোষণা করা হচ্ছে মঙ্গলবার। এর পর পর্যায়ক্রমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের যে রায় ঘোষণা হতে যাচ্ছে তাতে পরবর্তীতে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা হতে পারে।
পুলিশের এক উর্ধতন কর্মকর্তা সোমবার দৈনিক জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাতিল ও আটক বিচারাধীন যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির দাবিতে জামায়াত-শিবির একের পর এক পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আক্রমণ, গাড়িতে আগুন, ভাংচুর চালানোসহ সহিংস ঘটনা ঘটানোর পর এখন নতুন করে হরতাল ডেকে হুমকি দিচ্ছে। সোমবার জামায়াতÑশিবিরকে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করতে অনুমতি দেয়ার পরও তারা উস্কানিমূলক বক্তব্য ও অশ্লীল সেøাগান দেয়া হয়েছে। জামায়াতÑশিবির যতই সহিংস অপতৎপরতার দিকে পা বাড়াবে তাদের পরিণতি ততই খারাপের দিকে যাবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মানুষের জানমাল রক্ষা ও হেফাজতের জন্য প্রস্তুত। নাশকতা ও নৈরাজ্যের চেষ্টা করা হলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে বলে জানিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.