একাত্তরে ‘মিরপুরের কসাই’ কাদের মোল্লার বিচার ॥ আজ রায় by বিকাশ দত্ত

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী ৬ অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আজ রায় ঘোষণা করা হবে।
এটি হবে দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালের দ্বিতীয় রায়। ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্র্রার ব্রিফিং এ খবর জানিয়েছেন। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করবেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য রয়েছেন বিচারপতি মোঃ মজিবুর রহমান মিয়া ও জেলা জজ মোঃ শাহিনুর ইসলাম। এর আগে ২১ জানুযারি প্রথম রায় ঘোষণা করা হয় বাচ্চু রাজাকার হিসেবে পরিচিত আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে । রায়ে তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- প্রদান করা হয় । এছাড়া দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলা রায় ঘোষণার জন্য সিএভিতে রাখা হয়েছে। যে কোন দিন তার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হবে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম, বর্তমান আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ,সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ আব্দুল আলীমের বিচার চলছে (ছয়জন)। এগুলোর মধ্যে কোনটি শেষ পর্যায়ে আবার কিছু মাঝ পর্যায়ে রয়েছে। পাশাপাশি আরও ৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। ৬ ডিসেম্বর ২০১১ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন সম্পন্ন হয়। পরে ট্রাইব্যুনাল যে কোন দিন রায় ঘোষণার জন্য সিএভিতে রাখেন। এর মধ্যে ট্রাইব্যুনাল পুনঃগঠনের পর শুধুমাত্র সাঈদীর মামলাটি নতুন করে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। সে হিসেবে ২০১৩ সালের ২৯ জানুয়ারি উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে।
রেজিস্ট্র্রারের ব্রিফিং ॥ দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্র্রার (জেলা জজ) এ কে এম নাসিরউদ্দিন মাহমুদ সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ রায় ঘোষণার কথা জানান। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আব্দুল কাদের মোল্লার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হয়েছে। রায়ের জন্য সিএভিতে রাখা হয়েছিল। আজ ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে উক্ত মোকদ্দমাটি রায় ঘোষণার জন্য কার্যতালিকায় রাখা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হবে। এদিকে রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ভেতরে ও বাইরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। র‌্যাব-পুলিশের সদস্য সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি এলিট ফোর্স সোয়াত বাহিনীকেও মোতায়েন করা হয়েছে।
রেজিস্ট্র্রার এ কে এম নাসির উদ্দিন আহম্মেদ জনকণ্ঠকে বলেছেন, হরতালে রায় ঘোষণায় কোন প্রভাব ফেলবে না। তিনি আরও বলেন, আজকে রায়কে কেন্দ্র করে ট্রাইব্যুনালকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী থাকবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন গোয়েন্দাসংস্থাসহ সকল ধরনের সিকিউরিটিজ নিয়ন্ত্রণের জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকবে।
ট্রাইব্যুনালের ডেপুটি রেজিস্ট্র্রার (যুগ্ম জেলা জজ) ব্যারিস্টার মেজবাহ উদ্দিন আহম্মেদ জনকণ্ঠকে বলেছেন, বিচার প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে চলছে ,চলবে। হরতালে কোন প্রভাব পড়বে না।
প্রসিকিউটর ॥ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আলী জানিয়েছেন, ‘আমরা একটি প্রত্যাশিত রায়ের অপেক্ষায় আছি। আমরা আশা করি, তথ্যপ্রমাণ দিয়ে আসামির বিরুদ্ধে ৬টি অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছি। আমরা কাদের মোল্লার সর্বোচ্চ শাস্তির আরজি জানিয়েছি। এরই মধ্যে ট্রাইব্যুনালের সকল নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে বলেও তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি আমরা কাউকেই ভয় পাই না।
আব্দুর রাজ্জাক ॥ ডিফেন্স টিমের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার রাজ্জাক মামলার রায় ঘোষণার জন্য রাখার দিন ১৭ জানুয়ারি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, রাষ্ট্রপক্ষ কাদের মোল্লার অপরাধ প্রমাণের সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ এমন কোন এভিডেন্স এবং ডকুমেন্ট দেখাতে পারেনি যার ভিত্তিতে কাদের মোল্লার ন্যূনতম শাস্তি দেয়া যেতে পারে। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে এ মামলা করা হয়েছে।
এক নজরে মামলা ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক শেষ হয়ে। আজ তার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হবে। তার বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা করা হয়। এরপর ২০০৮ সালে পল্লবী থানায় কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়। ২০১০ সালের ১৩ জুলাই তাকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১১ সালের ৩০ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল। ২০১১ সালের ৫ ডিসেম্বর ফরমাল চার্জ দাখিলের আবেদন। ২০১১ সালের ২৮ ডিসেম্বর অভিযোগ আমলে নেয়। ২০১২ সালের ১৬ এপ্রিল ট্রাইব্যুনাল -১ থেকে ট্রাইব্যুনাল-২ এ মামলা স্থানান্তর। ২০১২সালের ২৮ মে হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ষড়যন্ত্র, উস্কানিসহ ৬টি অভিযোগ গঠন করা হয়। ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন। ২০১৩ সালের ৩ জানুযারি পুনবিচারের আবেদন। ২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারি আবেদন খারিজ। ১৭ জানুয়ারি যুক্তিতর্ক শেষ হয়। এরপর রায় ঘোষণার জন্য সিএভিতে রাখা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.