বাংলাদেশের নানান ভাষা- দেশে চালু আছে অনেক ভাষা এ নিয়ে বিশেষ আয়োজন তঞ্চঙ্গ্যা by মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে তঞ্চঙ্গ্যা উল্লেখযোগ্য। এদের বসবাস মূলত রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলায়। ভাষা-সংস্কৃতি-শিক্ষা—এসব দিক থেকে চাকমা ও মারমাদের মতোই তঞ্চঙ্গ্যারা অনেক দূর এগিয়েছে।
জাতিগতভাবে তঞ্চঙ্গ্যারা নিজেদের স্বতন্ত্র বলে দাবি করে। তবে নৃতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক বিচারে অনেকের মতে তারা চাকমা জাতির অন্তর্ভুক্ত একটি গোত্র। ক্যাপ্টেন টি এইচ লুইন তঞ্চঙ্গ্যাদের চাকমা জাতির একটি উপগোত্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, এ দেশে ২১ হাজার ৫৭ জন তঞ্চঙ্গ্যা বাস করে। ২০০১ সালের শুমারি থেকে জানা যাচ্ছে, এই সংখ্যা বেড়ে ৩১ হাজার ১৬৪ হয়েছে।
তঞ্চঙ্গ্যা জাতির নিজস্ব ভাষা রয়েছে। চাকমা ভাষার মতোই এই ভাষা ইন্দো-এরিয়ান ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। এর মূল উৎস ‘মন’ ভাষা। চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা ভাষার মধ্যে উচ্চারণগত তারতম্যই মূল পার্থক্য। এই দুই ভাষার বর্ণমালার মধ্যেও দারুণ মিল। তবে তঞ্চঙ্গ্যা লিপির সঙ্গে চাকমার চেয়ে বর্মি লিপির সাদৃশ্য বেশি। নৃ-গবেষক আবদুস সাত্তার বলেছেন, ‘ভাষাগত বিচারে চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা ভাষার সাদৃশ্য থাকলেও পারিপার্শ্বিক প্রভাবের কারণে তঞ্চঙ্গ্যাদের ব্যবহারিক শব্দাবলিতে আরাকানি বা মারমা শব্দের প্রচলন ও প্রভাব লক্ষ করা যায়।’ বর্তমান তঞ্চঙ্গ্যাদের দাইনাক বর্ণমালাকে ‘ছালাম্যা’ বলা হয়, যার অর্থ ‘গোলাকার’।
বহু তঞ্চঙ্গ্যা লেখালেখি করছেন তঞ্চঙ্গ্যা ভাষায়। এসব কবিতার মধ্যে আছে দেশাত্মবোধ ও জাতিগত সম্প্রীতিবোধের উজ্জ্বল স্বাক্ষর। যোগেশ চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যার একটি কবিতায় আছে, ‘আমা দেশত মাইনচ্য মনত/ কোনো ইংসা নাই/ হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিষ্টান/ ব্যাক্কুনে ভাই ভাই/ ও মা ত বুগত আমি সুগে আগি/ সর্গত্তুন বেগে।’ রবিন তঞ্চঙ্গ্যা এই লাইনগুলোর বাংলা করেছেন, ‘আমার দেশে কারও মনে/ কোনো হিংসা নাই/ হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিষ্টান/ মোরা ভাই ভাই/ মা তোর বুকে/ মোরা সুখে আছি/ স্বর্গের চেয়ে বেশি।’

No comments

Powered by Blogger.