প্রামাণ্যতথ্য উপস্থাপন করুন ॥ খালেদাকে আশরাফের চ্যালেঞ্জ- তেরো মাসে ২০% নারী নির্যাতনের শিকার

"গত ১৩ মাসে এই সরকারের আমলে সারাদেশে ২০ ভাগ নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন"-বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার এই বক্তব্যকে চরম মিথ্যাচার এবং অসত্য বলে আখ্যায়িত করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
বিরোধীদলীয় নেত্রীর প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে তিনি বলেন, 'কথিত ২০ শতাংশ নির্যাতিত নারীর নাম-পরিচয় এবং নির্যাতনের তথ্য প্রকাশ করুন। তাঁর (খালেদা জিয়া) বক্তব্যে প্রমাণের দায়-দায়িত্ব তাঁকেই নিতে হবে। অতীতের অপরাধের জন্য দেশবাসী বিশেষত নারী সমাজের কাছে মা চাওয়ার জন্য খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'আশা করব তিনি মিথ্যার বেসাতি এবং নোংরামি বন্ধ করে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করবেন। তাঁর গায়ের ওপর যে পাকিস্তানী পেতাত্মা চেপে বসে আছে তা ঝেড়ে ফেলে দেশের পরিবর্তিত বাস্তবতা মেনে নিয়ে রাজনীতির সুস্থ ধারায় ফিরে আসবেন। যুদ্ধাপরাধী জামায়াতকে জোট থেকে বাদ দেবেন। অন্যথায় জাতি কোন দিনই আপনাদের মা করবে না।"
তিনি বলেন, অচিরেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে। খালেদা জিয়া এদের রা করতে পারবেন না। আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলে মুক্তিযুদ্ধের সময় কে, কোথায় কতজন নারীকে হত্যা করেছে, কতজন নারীকে ধর্ষণ করেছে এবং মনোরঞ্জনের জন্য কতজন নারীকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে, তা বেরিয়ে আসবে। এ জন্যই খালেদা জিয়া নার্ভাস হয়ে এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন।
সৈয়দ আশরাফ বলেন, 'খালেদা জিয়ার বক্তব্য একেবারেই ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও রাজনৈতিক বিদ্ব্বেষপূর্ণ নির্জলা মিথ্যাচার। চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি বেগম জিয়ার কথিত ২০ শতাংশ নির্যাতিত নারীর নাম, পরিচয়, ঠিকানা, নির্যাতনের স্থান এবং নির্যাতনের ধরনের প্রামাণ্য তথ্য তিনি দেশবাসীর সামনে হাজির করম্নন। তালিকা দিন। তিনি বলেন, '১৫ কোটি মানুষের দেশে ২০ ভাগ নারীকে নির্যাতনের শিকার হতে হলে ১ কোটি ৬০ লাখ নারীকে নির্যাতনের শিকার হতে হয়। গত ১৩ মাসে এত বিপুল সংখ্যক নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন_তা পরিসংখ্যানগতভাবেই অবাসত্মব ও হাস্যকর। আমরা তাদের (বিএনপি) কাছে নারী নির্যাতনকরীদের তালিকা থাকলে তা দিতে বলব। তাহলে, আমরা ব্যবস্থা নিতে পারব।'
সৈয়দ আশরাফ বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সংঘটিত সংখ্যাতীত অন্যায়-অত্যাচারের দুঃসহ স্মৃতি থেকে জনগণের দৃষ্টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার হীনমানসে খালেদা জিয়া এই কদর্য মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়েছেন। বিরোধীদলীয় নেতার মতো একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির মুখে এহেন কুৎসিত মিথ্যাচার মানায় না। এতে বিদেশের কাছে দেশের ভাবমূর্তিও ুণ্ন হয়।
এই প্রসঙ্গে গত জোট সরকারের পাঁচ বছরে সংঘটিত নারী নির্যাতনের পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, '২০০১-২০০৫ সালের মধ্যে পাকিসত্মানী পেতাত্মা বিএনপি এবং পুরনো রাজাকার-আলবদরের দল যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামীর সম্মিলিত অভিযানে দেড় লাধিক নারী তাদের সম্ভ্রম হারিয়েছে। তাই বিএনপি-জামায়াত ধর্ষক ও খুনীদের নেত্রী, নারী সমাজের কলঙ্ক খালেদা জিয়ার মুখে আর যাই হোক- নারী নির্যাতন বা নারীর অধিকারের কথা শোভা পায় না।'
এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আশরাফ বলেন, জোট সরকারের পাঁচ বছরে সংঘটিত নারী নির্যাতনসহ সকল অত্যাচার-নির্যাতন বিষয়ে তদনত্ম কমিশন গঠিত হয়েছে। অচিরেই দোষী ব্যক্তিদের আদালতের কাঠগড়ায় হাজির করে বিচার শুরম্ন হবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি ২১ ফেব্রম্নয়ারি ঢাকা বিশ্ববদ্যিালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কয়েক কর্মীর হাতে ছাত্রী লাঞ্ছনার ঘটনাকে 'আইনশৃঙ্খলাজনিত ঘটনা' হিসেবে আখ্যায়িত করেন। বলেন, ওই ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনী ইতোমধ্যেই পদপে নিয়েছে। সরকার যে কোন স্থানে যারাই নারী নির্যাতন করম্নক না কেন, কঠোর ব্যবস্থা নেবে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রসঙ্গে সৈয়দ আশরাফ আলবেনিয়া, যুগোসস্নাভিয়া, লাইবেরিয়া, কম্বোডিয়াসহ নুরেমবার্গ ট্রায়ালের উদাহরণ টেনে বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের প্রতীকী বিচার হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশে এক লাখের ওপর রাজাকার ছিল। এ ছাড়াও পাকিসত্মানের দোসর ছিল প্রায় চার-পাঁচ লাখ। এত লোকের বিচার করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সাধারণ মা ঘোষণার পরও ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী জেলখানায় বন্দী ও তাদের বিচার হচ্ছিল। এদের মধ্যে এখনও যাঁরা বেঁচে আছেন ও সুস্থ আছেন তাঁদের বিচার হবে। যেসব ব্যক্তি, সংগঠন ও দল যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের চিহ্নিত করে বিচার করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাহবুব-উল-আলম হানিফ, ডা. দীপুমনি, আহমদ হোসেন, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আফজাল হোসেন, মৃণাল কানত্মি দাশ, অসীম কুমার উকিল, ফরিদুন্নাহার লাইলী, সাগুফতা ইয়াসমীন এ্যামিলি, মেহের আফরোজ চুমকি, আশরাফুন্নেছা মোশারফ, এথিন রাখাইন, অপু উকিল, শাহীন মনোয়ারা হক, সাধনা হালদার, তহুরা আলী, সানজিদা খানম প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.