সব এমপির এলাকার জন্য ১৫ কোটি টাকা করে বরাদ্দ- দেশের সব এলাকাকে সমান সুবিধা দেয়া হবে ॥ প্রধানমন্ত্রী

শুধু কথায় নয়, এবার বাস্তবেই উন্নয়নের রাজনীতির ধারায় ফিরেছে সরকার। এ লক্ষ্যে ইতিহাসের প্রথমবারের মতো দেশের সকল স্থানে সমান উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সরকারী এবং বিরোধী দলসহ সকল সংসদ সদস্যের স্ব স্ব এলাকার জন্য সমান ১৫ কোটি টাকা করে উন্নয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই দেশ সবার। যখন যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন দেশের জনগণ সব সময় তাদের প্রয়োজনীয় উন্নয়ন এবং সরকারী সকল সুযোগসুবিধা পাওয়া তাদের নৈতিক অধিকার। অতীতের সরকারগুলো সমতায় বিশ্বাসী ছিল না বলে বৈষম্য করে বিশেষ এলাকায় বিশেষ উন্নয়ন কর্মকা- বাস্তবায়ন করেছে। কিন্তু বর্তমান সরকার সেই মতাদর্শে বিশ্বাসী নয়। তাই দেশের সকল এলাকাকে সমান সুযোগসুবিধা প্রদানের সিদ্ধানত্ম গ্রহণ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার শেরেবাংলানগরস্থ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) ভবনে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেছেন। 'অগ্রাধিকারভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পলস্নী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের' মাধ্যমে সারাদেশের ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে বিভিন্ন সামাজিক সেবা, সড়ক উন্নয়ন, ব্রিজ কালভার্ট নির্মাণ, রাস্তা প্রশস্তকরণ, হাটবাজারের উন্নয়ন এবং বৃক্ষরোপণ করে পরিবেশ উন্নয়নে এ বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হবে। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সুত্র জানায়, গত এক বছর আগে সকল সংসদ সদস্যকে স্ব স্ব এলাকার অগ্রাধিকারভিত্তিতে প্রয়োজনীয় উন্নয়ন প্রস্তাব জমা দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। সে প্রেৰিতে এমপিরা তাদের এলাকার প্রয়োজনীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রস্তাব জমা দেন। সেই প্রস্তাবনাকে আবার পরিকল্পনা কমিশনের পৰ থেকে যাচাইবাছাই করে প্রকল্পটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে দেশের সকল এলাকায় সমান উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য সকল সংসদ সদস্যকে সমান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাসত্মবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশর অধিদফতর (এলজিইডি)।
সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নিজে থেকেই আবার বলেছেন, সংসদ সদস্যরা স্ব স্ব এলাকার উন্নয়ন কাজ এলজিইডির কাছে প্রসত্মাব করবে আর এলজিইডি সে মেতাবেক উন্নয়ন কাজ বাসত্মবায়ন করবে। সংসদ সদস্যরা সরাসরি প্রকল্পের কাজ করাতে পারবেন না। এ সময় তিনি আরও বলেন, এলজিইডি সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা তা মনিটরিং করবেন এমপিরা।
সূত্র আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে আরও বলেছেন যে, ঢাকা শহরে এখন যানবাহনের অপ্রতুলতা চরমভাবে লৰ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু অনেকদিন ধরে বিআরটিসি'র ২৬৩টি দোতলা বাস নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। অথচ কেউ এসব বাস ঠিক করে আবার রাসত্মায় চলাচলের উদ্যোগ নিচ্ছে না। শীঘ্রই এসব বাস মেরামতের জন্য একটি প্রকল্প একনেকে উপস্থাপন করার জন্য নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ঢাকা শহরের বিদ্যমান যানবাহন সঙ্কট মোকাবেলা করার জন্য নতুন করে ৩০০ সিএনজি বাস আমদানি করা হবে বলে জানিয়েছেন। বিআরটিসি এ প্রকল্পটি বাসত্মবায়ন করবে।
এছাড়াও বৈঠকে তিনি দেশের সকল নদীর বাঁধ থেকে মাটি না কাটার নির্দেশ দিয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, নদীর বাঁধের নিচের অংশ থেকে মাটি কেটে অনেক জায়গায় ইটভাঁটি বা অন্য কোন কাজে ব্যবহার করার জন্য নেয়া হচ্ছে। এর ফলে নদীর বাঁধ নরম হয়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে। তাই সংশিস্নষ্টদের এ ব্যাপারে সজাগ থাকার নির্দেশ দেন তিনি।
জানা যায়, এ সময় তিনি আরও বলেন, সিরাজগঞ্জ এবং পাবনাসহ দেশের অনেক এলাকায় মিল্কভিটা সপ্তাহের কোন একদিন দুধ কেনা বন্ধ রাখার কারণে কৃষক সমস্যায় পড়ছে। তাই সপ্তাহের সব দিনই কৃষকের কাছ থেকে দুধ কেনার জন্য সংশিস্নষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এ সময় তিনি খামারিদের যেন কোন রকম সমস্যা না হয় সে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশও দিয়েছেন।
বৈঠকের পর পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) একে খন্দকার সাংবাদিকদের বলেন, গতকাল একনেক বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ পলস্নী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পসহ ৭ হাজার ৮শ' ৪৪ কোটি টাকার মোট ১০টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৬ হাজার ৪শ' ৮০ কোটি টাকার যোগান দেয়া হবে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে। বাকি ১ হাজার ৩শ' ৬৪ কোটি টাকার যোগান দেয়া হবে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে। অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলো হচ্ছে, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে 'পদ্মা নদীর ভাঙ্গন হতে রাজবাড়ী জেলার বকশীপুর এবং সেনাগ্রাম এলাকায় ফরিদপুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন প্রকল্প।' এই প্রকল্পের মাধ্যমে কুষ্টিয়ার খোকসা ও কুমারখালী উপজেলায় গড়াই নদীর তীরের ভাঙ্গন রোধে তীর সংরৰণে কাজ করা হবে। মোট ৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পটি বাসত্মবায়ন করা হবে।
মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বাসত্মবায়ন করা হবে 'আঞ্চলিক মৎস্য পশুসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প।' প্রাথমিকভাবে নোয়াখালী এলাকায় প্রকল্পটি বাসত্মবায়ন করা হবে। ৬শ' ২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বাসত্মবায়ন করা হবে 'উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়কে দীর্ঘ সেতু নির্মাণ প্রকল্প।' খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাসত্মবায়ন করা হবে মংলা বন্দরে খাদ্যগুদাম নির্মাণ প্রকল্প। মোট ১শ' ৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পটি বাসত্মবায়ন করা হবে। স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনে ১ হাজার ৪শ' ৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে বাসত্মবায়ন করা হবে 'দৰিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প। 'ইউনিয়ন সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো উন্নয়ন (চট্টগ্রাম ও কক্সবাকজার) প্রকল্প।' ৩শ' ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পটি বাসত্মবায়ন করা হবে। সড়ক ও রেলপথ বিভাগের অধীনে বিআরটিসির জন্য কোরিয়ান সিএনজি বাস সংগ্রহ প্রকল্প। ২৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০০ সিএনজি বাস কিনে প্রকল্পটি বাসত্মবায়ন করা হবে। দৰিণ কোরিয়া সরকারের কাছ থেকে মাত্র দশমিক ৫ শতাংশ সুদে ঋণের টাকায় এসব বাস কেনা হবে। সড়ক ও রেলপথ বিভাগের অধীনে 'উলস্নাপাড়া-বেলকুচি সড়কের সোনাতলা ঘাটে করতোয়া নদীর উপর ৩৪৭ মিটার পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ প্রকল্প। এ প্রকল্পটিতে ৫৪ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, পরিকল্পনামন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব) একে খন্দকার, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এবং স্থানীয় সরকার ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসালামসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.