জামায়াতী বিষবৃক্ষের উৎপাটন শুরু

 বিষবৃক্ষের শেকড় উৎপাটন না করলে যেমন দিনে দিনে শাখা প্রশাখা বিস্তৃত ঘটিয়ে গ্রাস করতে থাকে, গত ৪২ বছরে স্বাধীনতাবিরোধী হিংস্র জামায়াতের বিষাক্ত থাবায় দেশ কলুষিত হয়ে পড়েছে।
প্রজন্মের তরুণদের একটি অংশকেও তারা কলঙ্কিত অধ্যায়ের সঙ্গে যুক্ত করেছে। এদের অনেকেই এখন ভুল বুঝেও ফেরার পথ পাচ্ছে না। সুকৌশলী জামায়াত দুই পন্থায় তরুণ সমাজকে নিজেদের গ্রিপে নেয়। দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে তরুণদের আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে লেখাপড়া করিয়ে এবং কাজ দিয়ে দলে ভিড়িয়ে চিহ্নিত করে। তারপর সময়মতো ক্যাডার বানিয়ে মাঠে ছেড়ে দেয়। মাদ্রাসাকেন্দ্রিক ও মক্তবভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থায় শিশু-কিশোরদের কচি মনে বিভ্রান্তিকর কথা প্রচার করে। পরবর্তী সময়ে ওই শিশুরা যৌবনে উপনীত হলে তারাও জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারে পরিণত হয়। আরও কয়েকটি পন্থায় তারা দেশের একশ্রেণীর মানুষকে নিজেদের আয়ত্তে আনে। তা হলো- ধর্মীয় সেøাগান দিয়ে তাদের প্রতিষ্ঠিত ব্যাংক, অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান, বীমা ইত্যাদিতে ঋণ বিতরণসহ অর্থ বিনিয়োগের নানা সুযোগ সৃষ্টি করে বড় অঙ্কের মুনাফা দিয়ে আকর্ষণ করা। মিডিয়ার ভেতরে প্রবেশ করে টিভি চ্যানেল, অনলাইন সংবাদপত্র, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান হতে দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ করে নিজেদের দলে লোক ভিড়িয়ে স্বার্থ উদ্ধার। কোচিং সেন্টার, বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বানিয়ে শিশু-কিশোর ও তরুণদের নিজেদের দলে নিয়ে আসা। হালে কম্পিউটার শিক্ষায় তারা মাঠে নেমেছে। জামায়াত-শিবিরের কৌশল এতটাই সূক্ষè যে সহজে বোঝা যায় না। এত কিছুর পরও গত মঙ্গলবার মানবতাবিরোধী অপরাধী কাদের মোল্লার রায় ঘোষণা হওয়ার পর প্রজন্মের তারুণ্য সরাসরি মাঠে নেমে এবং প্রযুক্তির আকাশ সংস্কৃতি ব্যবহার করে ই-মেইল, টুইটার, ফেসবুক, নিজস্ব ব্লগ ও ওয়েবসাইট ইত্যাদির মাধ্যমে যেভাবে রাজাকারদের প্রতি ঘৃনা প্রকাশ করে বিশ্বের সকল মানুষকে জানিয়ে দিয়েছে তা দেখে সর্বস্তরের মানুষ স্বস্তি পেয়েছে। প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধারা বলেছেন, তারুণ্যের এই অঙ্গীকার আজ হোক কাল হোক দেশকে রাজাকারমুক্ত করবেই। ঢাকা মহানগরীর শাহবাগের এই ঢেউ দেশের সকল প্রান্তেই পৌঁছে যায় মুহূর্তেই। নিভৃত গ্রাম যেখানে এখনও বিদ্যুত যায়নি, কুপির (লণ্ঠন) আলোয় সন্ধ্যাবাতি দেয়া হয়, সেখানেও ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার মঙ্গল দীপের আলো পৌঁছেছে। বাঙালী নদী পারের রানীরপাড়া গ্রামের প্রবীণ কৃষক আজাহার আলী (৮১) বললেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় জামায়াত-শিবির দেশের মানুষকে হত্যা করেছে, গ্রামের পার গ্রাম আগুন লাগিয়ে দিয়েছে, লুণ্ঠন করেছে, নারী নির্যাতন করেছে। বিজয় অর্জনের ৪২ বছরেও তাদের কিছুই হয়নি। তরতাজা হয়ে দেশকে আরও বিপন্ন করে তুলছে। ওই জামায়াত শিবিরকে রাজনীতি করতে দেয়া হচ্ছে কেন! ওই দলটা বাতিল করা দরকার এখনই। প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষের মধ্যেও এখন জামায়াত-শিবিরকে বাতিলের আলোচনা শুরু হয়েছে। একজন ইতিহাসবিদ বললেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করা একটি জাতির প্রকৃত ইতিহাস লেখা হয় ৫০ বছর পর। বাংলাদেশেও প্রকৃত ইতিহাসের পালা শুরু হয়েছে। এতকাল যারা স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতকে লালন করেছে তাদেরও সময় হয়েছে প্রকৃত অবস্থায় ফিরে আসার। দেশজুড়ে গত চার দিনে তারুণ্যের অবস্থান কর্মসূচী দেখে এটা পরিষ্কার হয়ে যায় কেউ জামায়াত-শিবিরকে রক্ষার বাঁধ দেয়ার চেষ্টা করলেও কোন লাভ হবে না। স্রোত হয়ত সাময়িক আটকে যাবে। তারপর......! বাঁধ দিয়ে নদীর গতি হয়ত ফেরানো যায়, সাগরের টান থেকে ফেরানো যায় না। যত বাঁধই দেয়া হোক তারুণ্যের এই স্রোত কোন না কোন পথ বের করে বাঁধ উপড়ে ফেলে জামায়াত-শিবিরকে উথাল-পাথাল ঘূর্ণি স্রোতের পাকে ফেলে দিয়ে সাগরেই মিশে যাবে। নদীর ধর্মই তো সাগরে ফেরা। প্রজন্মের তরুণরা সেই পথেই তো এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান কর্মসূচীতে যখন তরুণরা মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোর সুর তোলে ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি.. তীর হারা এই টেউয়ের সাগর পাড়ি দেবো রে...।’ তখন হাজারো কণ্ঠে উচ্চাররিত হয়, রাজাকারদের ফাঁসি চাই, এ দেশে রাজাকারদের কোন স্থান নেই। দিন কয়েক আগেই দেশে শিবিরের তা-ব দেখা গেছে। পুলিশের কাছ থেকে অস্ত্র কেড়ে নিয়েছে তারা। লোকজন ভেবেছে কত শক্তিধর এই শিবির। পট পরিবর্তন হতে বেশি সময়ও নেয়নি। দেশের চারদিক হতে প্রজন্মের তারুণ্য হিংস্রতা নিয়ে নয়, শক্তিধর বাঙালী সংস্কৃতির গভীর থেকে উঠে এসে গোটা দেশ ছেয়ে ফেলেছে। একটি শাহবাগ যেমন হাজারো শাহবাগ সৃষ্টি করে মুহূতেই, তেমনই দেশের প্রজন্ম চারদিক থেকে ঘিরে ফেলবে জামায়াত-শিবিরকে। এই দিন বেশি দূরে নয়। যেদিন বিষবৃক্ষের শেকড় উৎপাটন করবে তরুণ এই প্রজন্ম। সেইদিনের অপেক্ষায় গোটা জাতি।

No comments

Powered by Blogger.