দোয়া বান্দার হাতিয়ার by সাইমুম রিদা

দোয়া শব্দের অর্থ প্রার্থনা করা, আহ্বান করা, কোনো কিছু পাওয়ার জন্য কাকুতি-মিনতি করা ইত্যাদি। দোয়া আল্লাহর সঙ্গে বান্দার কথোপকথনের প্রধান মাধ্যম। ইসলামে দোয়াকে একটি স্বতন্ত্র ইবাদতের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। দুনিয়ায় যারাই আল্লাহর প্রিয় হয়েছেন, তারা দোয়ার মাধ্যমেই হয়েছেন।
দোয়ার মধ্যে মানুষের পার্থিব ও পরকালীন সফলতা নিহিত আছে। দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহ ও তাঁর বান্দার মধ্যে সেতুবন্ধ রচিত হয়।
আল্লাহতায়ালা বান্দার ওই মুহূর্তটিকে অধিক পছন্দ করেন, যখন বান্দা তার নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে, তাঁর কাছে মাগফিরাত কামনা করে। বান্দার নিজস্ব কোনো ক্ষমতা ও ইচ্ছা নেই_ স্বতঃসিদ্ধ এ কথাটি যখন বান্দার মুখ থেকে আকুতির মাধ্যমে বের হয়, তখন আল্লাহর করুণা বান্দার প্রতি প্রবল বেগে বর্ষিত হয়। বান্দা কীভাবে তার চাহিদার কথা মহান প্রভুর দরবারে উপস্থাপন করবে এর কৌশল প্রভু নিজেই শিখিয়ে দিয়েছেন। নিজের কাছে কোনো কিছু চাওয়ার আহ্বান করা এবং এর পদ্ধতি বলে দেওয়ার নজির কেবল মহান আহকামুল হাকিমিনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
কোরআনের বিভিন্ন স্থানে দোয়া কীভাবে করতে হবে এর পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন_ দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতার জন্য কীভাবে দোয়া করবে এ প্রসঙ্গে শিক্ষা দিয়েছেন, 'হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে দুনিয়া এবং আখিরাত উভয়ের মধ্যে সফলতা দান করো এবং আমাকে জাহান্নামের কঠিন আজাব থেকে নাজাত দাও।' আরেক জায়গায় দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন এভাবে, 'হে আমার প্রতিপালক! আমি আমার নিজের ওপর অত্যাচার করেছি, এখন যদি তুমি আমাকে মাফ না করো এবং আমার ওপর দয়া না করো, তবে নিশ্চয়ই আমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবো।' এভাবে কোরআনে আল্লাহ বান্দার আহ্বানে সাড়া দেবেন বলে ওয়াদা করেছেন, 'হে বান্দারা! তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।'
রাসূল (সা.) আল্লাহর অত্যন্ত প্রিয় হাবীব ছিলেন। দোয়ার মাধ্যমে তিনি আল্লাহর কাছাকাছি চলে যেতেন। যে কোনো বিপদ-আপদে আল্লাহর রাসূল দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টি করে তা থেকে নাজাত লাভ করতেন। মক্কায় অবস্থানকালীন কঠিন মুহূর্তে, ঐতিহাসিক বদরের যুদ্ধে অনিবার্য পরাজয়ের মুখে, হিজরতের সময় কাফেরদের হাতে ধরা পড়ার অতি নিকটবর্তী সময়েও রাসূল (সা.) যখনই আল্লাহর দরবারে হাত উঠিয়েছেন তখনই আল্লাহর সাহায্য এসেছে। আল্লাহ তাঁর কৃপার অদৃশ্য হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন প্রিয় নবীর সাহায্যার্থে। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ কিংবা মানবিক বিপর্যের করুণ মুহূর্তে রাসূল (সা.)-এর সর্বোৎকৃষ্ট হাতিয়ার ছিল দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে আল্লাহর মনোযোগ আকর্ষণ করা। তাঁর অফুরন্ত ভাণ্ডারে দয়া ও করুণার ভিক্ষা প্রার্থনা করা। গভীর রাতে সমস্ত জগৎ যখন ঘুমে বিভোর, তখনও রাসূল (সা.) উম্মতের মুক্তির জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে কান্নাকাটি করতেন। প্রিয় হাবিবের সঙ্গে সেসব অন্তরঙ্গ মুহূর্তকে মূল্যায়ন করে উম্মতে মুহাম্মদীকে আল্লাহতায়ালা তাঁর বিশেষ করুণার প্রস্রবণে সিক্ত করেছেন।
দোয়ার আদব হলো, বান্দা তার সব দুর্বলতা ও কমজোরি আল্লাহর কাছে পেশ করবে অতন্ত বিনম্র ভাষায়। নিজের সমস্ত সত্তাকে বিলীন করে দেবে আল্লাহর দরবারে। নিজেকে সম্পূর্ণ আল্লাহর দরবারে সোপর্দ করে চাহিদার কথা, অভাব-অনটনের কথা প্রভুকে জানাবে। প্রকৃত ও যথার্থ দোয়ার ফল অবশ্যম্ভাবী। সঠিক নিয়মে দোয়া করলে তা কখনও বিফলে যাবে না।
saimumrida@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.