বিএনপি সংসদে যাচ্ছে রাজপথ গরমের প্রস্তুতিও নিচ্ছে- আজ বেগম জিয়া নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন

সংসদ অধিবেশনে যোগ দেয়ার পাশাপাশি রাজপথ গরম করার প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। আজ রবিবার বিরোধী দলের নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনে দলের জন্য দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখবেন, একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সফলতা-ব্যর্থতার দিকগুলো তুলে ধরবেন।
জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবী মহল থেকেও বিরোধী দল বিএনপিকে সংসদে যোগ দিয়ে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এমনকি বিএনপির অধিকাংশ তরম্নণ এমপি সংসদে যোগ দেয়ার পৰে রয়েছেন। দলীয় হাইকমান্ডের সিদ্ধানত্ম না হওয়ায় তরম্নণ সাংসদরা নীরব। অধিকাংশ তরম্নণ এমপি'র অভিমত হচ্ছে, সংসদ অধিবেশনে যোগ না দিয়ে শুধু ১০ দফার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে বিএনপির কোন লাভ হবে না। বরং সংসদে যোগ দিয়ে জনগণকে বুঝাতে হবে বিরোধী দলের সদস্যদের কথা বলার সুযোগ দিচ্ছে না সরকার। দু'এক দিনের মধ্যে বিএনপির সংসদীয় দলের সভা আহ্বান করা হচ্ছে। সংসদীয় দলের সভায় অধিবেশনে যোগ দেয়ার ব্যাপারে চূড়ানত্ম সিদ্ধানত্ম নেবে বিএনপি।
এদিকে সংসদ অধিবেশনে যোগ দেয়ার পাশাপাশি রাজপথে সরকারের বিরম্নদ্ধে আন্দোলনের কর্মসূচী দেয়ার কথা ভাবছে বিএনপি হাইকমান্ড। এ নিয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতারা বিভিন্ন ইসু্যতে আলোচনা করছেন। আন্দোলনকে সামনে রেখে ভারতবিরোধী বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনগুলোকে এক কাতারবন্দী করার পরিকল্পনা নিয়েছে বিরোধী দল। আজ রবিবার বিকালে বেগম খালেদা জিয়া তাঁর সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের প্রতিক্রিয়া দেয়ার পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ভারতকে ব্যবহার করতে দেয়ার বিরোধিতা করে দেশব্যাপী সকল সচেতন নাগরিকের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাবেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর ও ভারতের সঙ্গে তিনটি চুক্তি এবং দুটি সমঝোতা স্মারকের ফলে রাজনীতিতে নতুন মোড় নিচ্ছে। দেশের বড় দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সাংগঠনিকভাবে শক্তি অর্জন করছে। বিশেষ করে ভারত সফরের সফলতা-ব্যর্থতাকে এখন রাজনীতির মূল পয়েন্ট হিসাবে দেখছে সবাই। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সফরকে এক শ' ভাগ সফল দাবি করলেও সংসদের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি'র মতে, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর এক শ' ভাগ ব্যর্থ হয়েছে। বড় দুই দলের দুই নেত্রীই এখন ভারত সফর ও চুক্তির বিষয় নিয়ে একে অপরের মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন। নিজ নিজ দলের পৰ থেকে পৃথকভাবে কর্মসূচী দেয়ার চিনত্মাভাবনা করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে ভারতের সফলতার কথা তুলে ধরেছেন। ইতোমধ্যে বিরোধী দলের পৰ থেকে প্রতিক্রিয়া দেয়া হয়েছে। তবে আজ রবিবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার কথা রয়েছে।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের ব্যর্থতা তুলে ধরে সরকারের বিরম্নদ্ধে আন্দোলনের কর্মসূচী দেয়ার ব্যাপারে ভারত বিরোধী সংগঠনগুলো বেগম খালেদা জিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। এই মুহূর্তে মহাজোট সরকারের বিরম্নদ্ধে বড় ধরনের কর্মসূচী ঘোষণা না হলেও রাজপথে প্রতিবাদ সভা, সমাবেশসহ আলোচনা সভা, মানববন্ধন কর্মসূচী দেয়ার পৰে মতামত ব্যক্ত করেছেন জাতীযতাবাদী বুদ্ধিজীবী মহল। ভারত সরকারের সঙ্গে যেসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাৰর হয়েছে তাতে এ দেশের কোন কল্যাণ হবে না। বরং দেশের সব কিছু এক সময় ভারতের দখলে চলে যাবে_ এসব প্রশ্ন মাথায় রেখে বিরোধ সৃষ্ট জনমতকে এখন তাদের পৰে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে নানা কৌশল নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলো।
বছরের শুরম্ন পহেলা জানুয়ারি ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলৰে পল্টন ময়দানে এক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে নেতিবাচক বক্তব্য দিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সংসদের বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়া। সফর সফল হলে বিমানবন্দরে ফুলের তোড়া ও ব্যর্থ হলে রাসত্মায় কাটা বিছিয়ে দেয়া হবে বলে উলেস্নখ করেছেন বিরোধী দলের নেতা। প্রধানমন্ত্রী চারদিনের সফরে ১০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ভারত সফরে যান। চার দিনের সফর শেষে গত বুধবার সন্ধ্যায় দেশে ফিরে আসেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী যেদিন রাতে দেশে ফিরে আসেন ঠিক ওইদিন রাতেই গুলশান কার্যালয়ে বেগম খালেদা জিয়া জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবী ও পেশাজীবীদের নিয়ে বৈঠক করেন। এ ছাড়াও গভীর রাত পর্যনত্ম বেগম খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে সফলতা ও ব্যর্থতার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। সভায় সংসদে যোগ দেয়ার বিষয়ে অনেকে কথা বলেন। গত এক বছরে মহাজোট সরকারের অনেক ব্যর্থতা আছে। সরকারের ব্যর্থতা শুধু আলোচনাসভার মাধ্যমে নয়, সংসদে যোগ দিয়ে অধিবেশনে বক্তব্য রাখার পাশাপাশি রাজপথে বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে প্রতিবাদ করা উচিত। বৈঠকের পর থেকে দলের সিনিয়র নেতাদের অনেকে সংসদে যোগ দেয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক বক্তব্য রাখেন। কিন্তু সংসদীয় দলের সভা না হওয়া পর্যনত্ম কিছুই বলা কঠিন বলে মনত্মব্য করেন এক সাংসদ। তবে বিএনপির কট্টরপন্থী এক নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর এক শ' ভাগ ব্যর্থ হয়েছে। গত এক বছরে মহাজোট সরকারের কোন অর্জন নেই। ভারত সফরে দেশবাসীর কোন লাভ হয়নি। যা লাভ হয়েছে সবই ভারত সরকারের লাভ। সরকারের এই ব্যর্থতার জন্যই বিএনপি সংসদে যেতে পারে। তবে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সফলতা ও ব্যর্থতা নিয়ে এখন রাজপথে আন্দোলনের পাশাপাশি দলকে সাংগঠনিকভাবে চাঙ্গা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি।

No comments

Powered by Blogger.