নেতারা বিরূপ মনত্মব্য করলেও বিএনপি জামায়াতের মাঠ পর্যায়ের সদস্যদেও মনত্মব্য ইতিবাচক- প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর ও যৌথ ইশতেহার

রাজশাহী মহাজোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সামপ্রতিক ভারত সফর, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বি-পাকি সম্পর্ক উন্নয়নে ঘোষিত যৌথ ইশতেহার সম্পর্কে বিএনপি এবং জামায়াতের কেন্দ্রীয় মহাসচিবদ্বয় 'নেতিবাচক' মনত্মব্য করেছেন। কিন্তু তাদের দলের মাঠ পর্যায়ের সদস্যদের ঘোষিত ইশতেহারকে 'ইতিবাচক' হিসেবেই দেখছেন।
এতে করে বিএনপি-জামায়াতের মহাসচিবদের বক্তব্যে শুধুমাত্র 'বিরোধিতা'র জন্যই 'বিরোধিতা'র বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
বিএনপির নতুন কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব, রাজশাহীর সাবেক মেয়র ও সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিনুর স্ত্রী অধ্যাপিকা সালমা শাহাদাত প্রকাশিত এবং জামায়াতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার সরদার আব্দুর রহমান সম্পাদিত রাজশাহীর 'নতুন প্রভাত' পত্রিকার গত ১৪ জানুয়ারির সংখ্যায় লাল কালিতে ব্যানার শিরোনামে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সম্ভাবনার চিত্র উঠে এসেছে। পত্রিকাটির সম্পাদক সরদার আব্দুর রহমানের নিজ নামে প্রকাশিত লাল কালির ব্যানার শিরোনামে বলা হয়েছে, 'বাংলাদেশ-নেপাল বাণিজ্যের সম্ভাবনায় রাজশাহী নগরী গুরম্নত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে'।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সঙ্গে নেপালের ব্যবসা-বাণিজ্যভিত্তিক যোগাযোগ গড়ে তোলার কাজ শুরম্ন হলে রাজশাহী হয়ে উঠবে অন্যতম গুরম্নত্বপূর্ণ কেন্দ্র। এ ল্যে এখন থেকেই এখানকার অবকাঠামো উন্নয়নে নজর দেয়া দরকার বলে পর্যবেকরা মনে করেন। দীর্ঘ দিনের আলোচিত ও প্রত্যাশিত বাংলাদেশ-নেপাল যোগাযোগ বাসত্মবায়নের পথে প্রধান বাধা ছিল ভারতের ভূ-খ- ব্যবহার করতে না পারা। গত ১২ জানুয়ারি মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের মধ্য দিয়ে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা হয়েছে বলে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে। এ বিষয়ে উভয় দেশের যৌথ ইশতেহারে বলা হয়েছে, নেপালে বাংলাদেশের ট্রানজিটের জন্য রহনপুর সিঙ্গাবাদ ব্রডগেজ রম্নটটি চালু হবে। এই সিদ্ধানত্মের ফলে নেপাল-বাংলাদেশ বাণিজ্য সমপ্রসারণের পথে রাজনৈতিক বাধা দূর হবে বলে আশা করা হচ্ছে। নেপালের অবস্থান বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় অংশে হবার ফলে এই ব্যবসা-বাণিজ্যের অনেকটাই বৃহত্তর রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলের রম্নটগুলোকে ঘিরে আবর্তিত হবে। সূত্রে প্রকাশ, বিভাগীয় নগরী রাজশাহীকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ নেপাল রম্নটে বড় ধরনের বাণিজ্যিক আবহ তৈরি হবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। রাজশাহী-আমনুরা জংশন হয়ে রহনপুর স্টেশন পর্যনত্ম পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। রহনপুর থেকে পণ্যবাহী ট্রেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার সিঙ্গাবাদ-মালদা-ইটাহার হয়ে নেপাল সীমানত্মের ভারতীয় স্টেশন জগবানি বা রকশাল স্টেশনে পেঁৗছবে। নেপালের রেলওয়ে নেটওয়ার্ক তেমন উলেস্নখযোগ্য ও উন্নত না হওয়ায় সেখান থেকে ট্রাকযোগে নেপালের ভেতরে পণ্য পরিবহন করা হবে। সিঙ্গাবাদ থেকে এই রম্নটের দূরত্ব প্রায় দেড় শ' কিলোমিটার। নেপাল যেতে এই রম্নটে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ার প্রয়োজন হবে এবং পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পাবার আশঙ্কা রয়েছে।
কিন্তু বর্তমানে এই রম্নটে বাংলাদেশ থেকে নেপাল পর্যনত্ম রেললাইন বিদ্যমান রয়েছে। কিছু সংস্কার কাজ ছাড়া বড় রকম কোন অবকাঠামো নির্মাণের প্রয়োজন হবে না বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে ইতোমধ্যে দেড় শ' কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে রাজশাহী-রহনপুর ও আমনুরা-চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ রম্নটের ৯২ কিলোমিটার সংস্কার কাজে হাত দিয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কতর্ৃপ এই রম্নটের সী্পকার মেরামত, পাথর ফেলা এবং রম্নটের স্টেশনসমূহের আধুনিকায়নের কাজ করবে বলে জানা গেছে। নেপালের সঙ্গে রেল যোগাযোগের আরেকটি রম্নটের কথা সংশিস্নষ্ট মহল থেকে বলা হচ্ছে। সেটি হলো চিলাহাটি-হলিদাবাড়ি-জগবানি রম্নট। নীলফামারী সীমানত্মের চিলাহাটি স্টেশন থেকে জলপাইগুড়ির হলিদাবাড়ি হয়ে নেপালের সীমানত্মবর্তী ভারতীয় রেলস্টেশন জগবানির দূরত্ব (চিলাহাটি-জগবানি) মাত্র ৩৫ কিলোমিটার। কিন্তু এই রম্নট পছন্দ করতে হলে বাংলাদেশকে ৮ কিলোমিটার এবং ভারতকে ৩ কিলোমিটার ব্রডগেজ লাইন নতুন করে নির্মাণ করতে হবে। তবে যেহেতু উভয় দেশের যৌথ ইশতেহারে রহনপুর-সিঙ্গাবাদ রম্নটের কথা সনি্নবেশিত হয়েছে, ফলে এই রম্নটই চূড়ানত্ম বলে মনে করা হচ্ছে। এর ফলে সে েেত্র রাজশাহীতে গড়ে উঠতে পারে বড় রকম ডাম্পিং স্টেশন। আর নানারকম সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির কারণে এই রম্নটের ব্যবসায়ী ও সংশিস্নষ্টদের জন্য রাজশাহী হয়ে উঠতে পারে গুরম্নত্বপূর্ণ কেন্দ্র। উলেস্নখ করা যেতে পারে, ১৯৭৬ সাল থেকে বাংলাদেশ-নেপাল বাণিজ্যের জন্য সম্মত হয়ে আসলেও ভারত কোন রকম ট্রানজিট সুবিধা না দেয়ার ফলে এই বিষয়টি কার্যকর রূপ পায়নি।

No comments

Powered by Blogger.