জয়ী হয়েছি- ০ বিরোধী দলকে সংসদে আসার আহ্বান- ০ এক বছরে দেশের মর্যাদা বেড়েছ- ০ ভারত সফর সম্পর্কে শেখ হাসিনা

জাতীয় স্বার্থকে দলীয় স্বার্থের উর্ধে তুলে ধরার জন্য বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে সংসদে ফিরে এসে সকল বিষয়ে কথা বলার জন্য বিরোধী দলের প্রতি পুনর্বার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, "অনেক সংগ্রাম, রক্ত ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা দেশকে স্বাধীন করেছি।
আমার বাবা-মা, ভাই-ভাবিসহ ৩০ লাখ মানুষ এ দেশের জন্য জীবন দিয়েছে। তাই শেখ হাসিনা কখনও দেশকে বিক্রি করতে পারে না। একটি মহল স্বভাবগতভাবেই 'দেশ বিক্রি'র মিথ্যাচার করে জনগণকে বিভ্রানত্ম করতে চায়। তবে দেশবাসী তাদের মিথ্যাচার সম্পর্কে ভাল করেই জানেন।
ভারত সফর নিয়ে বিরোধী দলের সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "ভারতে গিয়ে আমি দেশের স্বার্থ শতভাগ রৰা করতে চেয়েছি, তাতে আমি জয়ী হয়েছি। বাংলাদেশসহ দৰিণ এশিয়ার মানুষ লাভবান হবে।" সফরের সফলতা নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, অমি জয়ী হয়েছি। যে লৰ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে গিয়েছিলাম, শতভাগ সফল হয়েছি। দেশের স্বার্থ রৰা করতে পেরেছি। কাজেই জয়ী আমি আজ।
প্রধানমন্ত্রী এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ৰেত্রে নতুন দিগনত্মের সূচনা হয়েছে উলেস্নখ করে আরও বলেন, এই উপমহাদেশ তথা দৰিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় শত্রম্ন দারিদ্র্য। বাংলাদেশের মানুষ আরও দরিদ্র। এই দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতেই হবে। কেননা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দিয়ে অনেক কিছু আদায় করা যায়, ঝগড়া করে নয়। আঞ্চলিক সহযোগিতা ছাড়া এ অঞ্চলে স্বাভাবিক উন্নতি হবে না। আর প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক সমঝোতাপূর্ণ না হলে বাংলাদেশেরও উন্নয়ন হবে না। তাঁর ভারত সফরে বাংলাদেশ আর্থিকসহ নানা খাতে বহুলাংশে লাভবান হবে দাবি করে তিনি বলেন, আমরা প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে কোন হানাহানি, মারামারি বা সংঘাত চাই না। পুরো দৰিণ এশিয়াকে শানত্মিপূর্ণ এলাকায় পরিণত করতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী বিকেলে তাঁর কার্যালয়ের আনত্মর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের বাইরে খোলা জায়গায় মহাজোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে ভারত সফরসহ পুরো এক বছরে দেশকে অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে ধাবিত করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা ও অর্জিত সাফল্যগুলো তুলে ধরেন। শুধু তাই নয়, ভারত সফর সম্পর্কে দেশের অধিকাংশ শীর্ষস্থানীয় জাতীয় দৈনিক ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সম্পাদকদের জোরালো প্রশ্নের উত্তর দেন শেখ হাসিনা। আর ৰমতায় আসার পর আয়োজিত শনিবারের সাংবাদিক সম্মেলনে এত বিপুল সংখ্যক সম্পাদক ও প্রবীণ সাংবাদিকের উপস্থিতিও ছিল উলেস্নখ করার মতো।
দলের সর্বপর্যায়ের জাতীয় ও সিনিয়র নেতা, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা ছাড়াও সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মূসা, জনকণ্ঠ সম্পাদক আতিকউলস্নাহ খান মাসুদ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট সম্পাদক মাহবুবুল আলম, ইত্তেফাকের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রাহাত খান, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারোয়ার, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম, অবজারভার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দিন, কালের কণ্ঠের সম্পাদক আবেদ খান, যুগানত্মর সম্পাদক সালমা ইসলাম, মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, আমাদের সময় সম্পাদক নাইমুল ইসলাম খান, নিউজ টুডের সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, বাসসের প্রধান সম্পাদক ইহসানুল করিম হেলাল, এপির প্রধান ফরিদ হোসেন, বিডি নিউজ সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালেদী, খবর সম্পাদক ড. মিজানুর রহমান মিজান, এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান ড. মাহফুজুর রহমান, দেশ টিভির আসাদুজ্জামান নূর, এনটিভির এমডি এনায়েতুর রহিম বাপ্পি, জনকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়সহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সিনিয়র সাংবাদিকগণ।
বিরোধী দলকে সংসদে এসে সকল বিষয়ে কথা বলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় স্বার্থকে দলীয় স্বার্থের উর্ধে তুলে ধরম্নন। আসুন প্রিয় মাতৃভূমিকে ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও দলীয় স্বার্থের উর্ধে স্থান দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দিনবদলের সংগ্রামে অংশগ্রহণ করি। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, "সংসদে বিরোধী দলের ৯০ দিন অনুপস্থিতি প্রায় শেষ হতে চলেছে। বাকি ২৬ কার্যদিবসের মধ্যে সংসদের আসন রৰায় বিরোধী দলকে সংসদে আসতেই হবে। তাই ভারত সফর নিয়ে বাইরে কথা না বলে সংসদে এসে বলুন। যে কোন বিষয়ে কথা বলুন, আমরা জবাব দেব। বিরোধীদলীয় নেত্রী থাকতে আমার মাইক বার বার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু বর্তমান সরকারের সময় বর্তমান বিরোধীদলীয় নেত্রীর মাইক একটি বারের জন্যও বন্ধ করা হয়নি, যতৰণ ইচ্ছা তিনি কথা বলেছেন। এবারও পারবেন।"
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার গত এক বছরে একটি কার্যকর কূটনৈতিক তৎপরতার প্রমাণ রেখেছে। সরকারের গৃহীত আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক সিদ্ধানত্ম ও কর্মকা- বিশ্বে বাংলাদেশের একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে তুলেছে। গত সাতটি বছর ধরে চলা নেতিবাচক পরিচয় থেকে বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশ বিশ্বের ১০টি দুনর্ীতিগ্রসত্ম দেশের তালিকায় অনত্মভর্ুক্ত ছিল। বর্তমান সরকারের এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশ এ অপবাদ থেকে মুক্তি পেয়েছে। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে যে বদনাম ছিল বাংলাদেশ তা থেকে মুক্ত হয়েছে। তাদের সময়ে বাংলাদেশ ছিল সাংবাদিক ও সংখ্যালঘু নির্যাতনকারী দেশের তালিকায়। তা থেকেও আমরা এই দেশকে মুক্ত করতে পেরেছি। বাংলাদেশের হারানো সম্মান আমরা ফিরিয়ে এনেছি।
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আসুন অমিত সম্ভাবনার বাংলাদেশকে আমরা বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে অভিষিক্ত করতে যার যার অবস্থান থেকে কাজ করে যাই। আমার বিশ্বাস, সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশ দৰিণ এশিয়ার শানত্মির দেশ হিসেবে বিশ্বে পরিচিত হবে। সেই লৰ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
ভারত সফরে অর্জন
প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি তাঁর ভারত সফরে অর্জিত সাফল্যগুলো তুলে ধরে বলেন, ভারত আমাদের নিকটতম পড়শী দেশ। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিক। মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এদেশের ৩০ লাখ শহীদের রক্তের সঙ্গে মিশে আছে ভারতের সেনাবাহিনীর ১৮ হাজার মিত্রসেনার রক্ত। তিনি বলেন, বিশ্বের অধিকাংশ দরিদ্র মানুষের বাস দৰিণ এশিয়ায়। আমরা এ অঞ্চলের মানুষের অভিন্ন শত্রম্ন দারিদ্র্যের বিরম্নদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করতে চাই। এটা সম্ভব শুধু উপমহাদেশে ও দৰিণ এশিয়ার দেশগুলোর পারস্পরিক মৈত্র্যর বন্ধনকে জোরদার করার মাধ্যমে। আর দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সমুন্নত রেখে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে সহযোগিতাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টিই আমাদের পররাষ্ট্রনীতির বৈশিষ্ট্য। আমার ভারত সফর ছিল এমনি এক প্রেৰাপটে।
ভারত সফরকালে আনুষ্ঠানিক আলোচনা ও বৈঠকে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বিভিন্ন দিক বিসত্মারিত আলোচনা হয়েছে উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বহুদিনের আলোচিত ও অমীমাংসিত বিভিন্ন বিষয়ে দু'দেশের মধ্যে কর্মকর্তা ও মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজার ব্যাপারে ঐকমত্য হয়েছে। আর এ সফরকালে আলোচনার ভিত্তিতে উভয়পৰ একটি যৌথ ঘোষণা প্রকাশ করেছে। তিনি জানান, সফরকালে নিরাপত্তা বিষয়ে তিনটি চুক্তি এবং বিদু্যৎ ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক ও একটি বিনিময় কার্যক্রম স্বাৰরিত হয়েছে। সকল প্রকার সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদ দমনে দু'দেশ একে অপরকে সাহায্য করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে।
শেখ হাসিনা আরও জানান, সফরকালে ১৯৭৪ সালে ভারতের সঙ্গে স্বাৰরিত ঐতিহাসিক ইন্দিরা-মুজিব চুক্তির আলোকে সকল সীমানত্ম সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে উভয় পৰ একমত হয়েছে। তিন বিঘা করিডরের মাধ্যমে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতায় বিদু্যত সবরাহের কার্যক্রম শুরম্ন হয়েছে। ভারতীয় জনগণের চলাচলের জন্য ভারত শীঘ্রই তিন বিঘায় একটি ফাইওভার তৈরির কাজ শুরম্ন করবে। ফলে বাংলাদেশের নাগরিকরা তিন বিঘা ব্যবহার করে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতায় ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন যাতায়াতের সুযোগ পাবে। তিনি বলেন, সীমানত্ম চোরাচালান বন্ধে সীমানত্মরৰী বাহিনী দুটির মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা হবে। সীমানত্মে গোলাগুলির ঘটনায় অনেক জীবন ৰয় হয়। এই প্রাণহানি রোধে দু'দেশের সীমানত্মরৰী বাহিনী যে কোন সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করবে।
শেখ হাসিনা জানান, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য প্রসারে আমাদের পণ্যের ওপর সব ধরনের ট্যারিফ ও নন ট্যারিফ বাধা দূর করার সিদ্ধানত্ম হয়েছে। এর ফলে ভারতের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে। বাংলাদেশের বিএসটিআই আনত্মর্জাতিক মানের করতে ভারত সহযোগিতা করবে। তা ছাড়া বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য ভারত এক বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে, যার মধ্যে রয়েছে রেলওয়ে অবকাঠামো নির্মাণ. রেল ইঞ্জিন ও কোচ ক্রয়, সৈয়দপুর রেল ওয়ার্কশপের উন্নয়ন, বাস ক্রয় ও নদী খনন ইত্যাদি।
ভারত সফরে অর্জিত সাফল্যের কথা উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন. সফরকালে রামগড়-সাবরম্নম এবং দেমাগিরি-তেগামুখ স্থলবন্দর চালুর সিদ্ধানত্ম হয়েছে। আরও স্থলবন্দর চালুর উদ্যোগ নেয়া হবে। নেপাল ও ভুটানকে ভারত সরকার ট্রানজিট দেবে, যাতে নেপাল ও ভুটানের পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে। তিনি বলেন, আমরা ভুটান, নেপাল ও ভারতকে চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দেব। এতে বাংলাদেশ আর্থিকভাবে লাভবান হবে। চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দর আঞ্চলিক রফতানি বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে। এ ছাড়া মেঘালয়-বাংলাদেশ সীমানত্মে পরীৰামূলকভাবে সীমানত্মহাট স্থাপন করা হবে, যাতে ঐ অঞ্চলের মানুষ উৎপাদিত পণ্য সহজে বাজারজাত করতে পারে। এতে চোরাচালান কমবে। তিনি জানান, রোহনপুর-সিংগাবাদ রেলপথের মাধ্যমে বাংলাদেশের পণ্য নেপালে যেতে পারবে। এৰেত্রে ভারত আমাদের ট্রানজিট দেবে। ভুটানের সঙ্গে সড়ক ও রেলপথ ব্যবহার করে পণ্য পরিবহনের ৰেত্রেও ভারত ট্রানজিট দেবে।
টিপাইমুখ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী আবারও দৃঢ়ভাবে পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে, বাংলাদেশের জন্য ৰতিকর কোন কার্যক্রম ভারত গ্রহণ করবে না। তিসত্মাসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। ইতোমধ্যেই টেকনিক্যাল গ্রম্নপ ও সচিব পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। অচিরেই যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের নদীগুলোর নাব্য বৃদ্ধির কাজে সহায়তা করতেও ভারত ড্রেজার সরবরাহ করবে।
তিনি জানান, সফরকালে উভয় দেশ ঐকমত্য হয়েছি যে, সমুদ্রসীমা নির্ধারণে উভয় পৰ আলোচনা ও ইউএনসিএলওএসের বিধানের আলোকে সালিশের মীমাংসায় পেঁৗছানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। পিআইডবিস্নউটিটি-এর আওতায় বাংলাদেশের আশুগঞ্জ ও ভারতের শিলাঘাটকে পোর্ট অব কল হিসেবে ঘোষণা করা হবে। ভারতের সার্বিক ও কারিগরি সহযোগিতায় আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ স্থাপিত হবে। তিনি জানান, ভারত বাংলাদেশকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদু্যত প্রদান করবে। এ জন্য গ্রিড সংযোগের কার্যক্রম ইতোমধ্যেই শুরম্ন হয়েছে। উভয় দেশ যৌথভাবে বিদু্যত উৎপাদনের লৰ্যে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেবে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, সফরকালে সার্ক ও বিমসটেকসহ সকল আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থায় উভয় দেশ একযোগে কাজ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে। ঢাকায় বিমসটেকের সদর দফতর স্থাপনে বাংলাদেশের অনুরোধ ভারত ইতিবাচক বিবেচনা করছে। এ ছাড়া জাতিসংঘকে আরও অর্থবহ করতে উভয় দেশ একযোগে কাজ করবে। বিশ্বের জলবায়ু ও পরিবেশ রৰায় উভয় দেশ একযোগে কাজ করবে। প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরকালে ভারতের রাষ্ট্রপতি শানত্মি, নিরস্ত্রীকরণ ও উন্নয়নে অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে মর্যাদাপূর্ণ 'ইন্দিরা গান্ধী শানত্মি, নিরস্ত্রীকরণ ও উন্নয়ন' পদক প্রদানের বিষয়টি উলেস্নখ করে বলেন, আমি মনে করি এ সম্মানের মূল দাবিদার বাংলাদেশের মানুষ। যাঁরা গণতন্ত্র, শানত্মি ও উন্নয়নের অভিযাত্রায় দীর্ঘ সংগ্রাম করে যাচ্ছে। তিনি এ পুরস্কার দেশবাসীর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ এবং পুরস্কারের অর্থ বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের মাধ্যমে গরিব ছাত্রদের বৃত্তি ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আহতদের চিকিৎসা খাতে ব্যয় করার ঘোষণা দেন।
জমজমাট প্রশ্নোত্তর পর্ব
লিখিত বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সম্পর্কে প্রশ্নোত্তর পর্বও জমে উঠেছিল। তবে সাংবাদিক সম্মেলনে অধিকাংশ প্রশ্নই ছিল বিভিন্ন প্রভাবশালী জাতীয় দৈনিক ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সম্পাদকদের। প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি প্রশ্নের সাবলীল ও হাস্যোজ্জ্বল চিত্তে উত্তর দেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সম্পাদকদের কাছে জানতে চান, 'আমরা সাংবাদিক-সম্পাদকদের স্বাধীনতা এবং অযথা হয়রানি বন্ধ করতে আইন করেছি। কিন্তু অনেক সংবাদ মাধ্যম দিয়ে আমরা অযথা হয়রানির শিকার হচ্ছি, এর প্রতিকার করবে কে?
ভারতে সম্পাদিত চুক্তির ফলে চট্টগ্রাম অঞ্চল ভারত হয়ে যাবে বিরোধী দলের এমন দাবি সম্পর্কে অবজারভার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়ার নাম উলেস্নখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শানত্মিচুক্তি করার সময়ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বলেছিলেন ফেনী পর্যনত্ম ভারত হয়ে যাবে। অথচ তিনি ফেনী থেকে নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সদস্য হয়েছেন, ভারতের পার্লামেন্টের সদস্য হননি। আর মংলা ও চট্টগ্রাম পোর্ট বিক্রি করলে ওই অঞ্চলের মানুষও ভারতীয় নাগরিক হয়ে গেছেন! আসলে ৰমতায় গেলে সব ভুলে যাওয়া আর বিরোধী দলে গেলে মিথ্যাচারের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রানত্ম করাই তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, ভারত বিরোধী ক্যাম্পেন নতুন নয়, ৫৪তে এটা শুরম্ন হয়। যারা বলার তারা বলে যাবে। আমরা ন্যায়সঙ্গত কাজ করে যাব। পায়ে পা ঠেকিয়ে ঝগড়া করব না। তিনি বলেন, ভারতবিরোধী ক্যাম্পেন তাদের স্বভাবজাত। তাদের স্বভাব কীভাবে বদলাবে? আসলে তাঁরা মিথ্যাচার করে জনগণকে বিভ্রানত্ম করতে চায়। জনগণও এটা ভাল করেই বোঝে।
টিপাইমুখ ড্যাম নির্মাণ প্রসঙ্গে বার্তা সংস্থা এপির বু্যরো প্রধান ফরিদ হোসেনের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, সফরকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং স্পষ্ট ভাষায় আমাদের বলেছেন, বাংলাদেশের ৰতি হোক এমন কোন প্রকল্প করবে না ভারত। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, টিপাইমুখ নিয়ে বিরোধী দলের মুখে এখন এত আওয়াজ। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট ৰমতায় থাকতে এ বিষয়ে একটি কথাও বলেননি। বরং এই টিপাইমুখ ড্যামকে অনত্মভর্ুক্ত করে প্রণীত ফ্যাড এ্যাকশন পস্নান বিএনপি-জামায়াত জোটের কেবিনেটেই অনুমোদন দেয়া হয়েছিল।
অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরকে আরও আধুনিক করা হবে কি-না, সমকাল সম্পাদক গোলাম সারোয়ারের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের ক্যাপাসিটির ৪০ ভাগ এবং মংলা বন্দরের ১০ ভাগও আমরা ব্যবহার করতে পারি না। পুরোপুরিভাবে এ দু'টি বন্দর ব্যবহার করতে পারলে বাংলাদেশ লাভবান হবে। ভারত, নেপাল ও ভুটান এ বন্দর দু'টি ব্যবহার করলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করবে। এ অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজে লাগবে। তাই রাসত্মাঘাট, যোগাযোগ স্থাপনসহ দু'টি বন্দরকেই আধুনিকায়ন করা হবে। এছাড়া বর্তমান সরকার গভীর সমুদ্র আরেকটি নতুন নৌ বন্দর স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে। আর এ বছরের মধ্যেই যেন তারা তা ব্যবহার করতে পারে_ সে চেষ্টাই করা হবে।
দৰিণ এশিয়াকে শানত্মিপূর্ণ অঞ্চলে পরিণত করতে নেতৃত্ব দেবেন কিনা_ ইত্তেফাকের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক রাহাত খান এমন প্রশ্ন করলে জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমি নেতৃত্ব চাই না। দৰিণ এশিয়ার মানুষ দরিদ্র। বাংলাদেশের মানুষ আরও দরিদ্র। দারিদ্র্য দূর করতে যার সঙ্গে যত আলোচনা, যত সহযোগিতা দরকার, আমি তাই করব।' তিনি বলেন, দৰিণ এশিয়াসহ এ উপমহাদেশে দারিদ্র্যই বড় শত্রম্ন। এ শত্রম্ন তাড়াতে হলে সবার এক সঙ্গে কাজ করে যেতে হবে। আর প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক সমঝোতাপূর্ণ না হলে বাংলাদেশের উন্নয়ন হবে না। তাই আমরা হানাহানি-মারামারি নয়, দৰিণ এশিয়াকেই শানত্মিপূর্ণ করে প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা তিসত্মার পানি বণ্টন চুক্তির ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, তিসত্মাসহ সরকার অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ৰেত্রে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে আলোচনা করেই সিদ্ধানত্ম নেয়া হবে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী পানি বণ্টনের আলোচনা এগিয়ে না নেয়ার জন্য বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সমালোচনা করেন। ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি কবে নাগাদ বাসত্মবায়িত হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাসত্মবায়নের জন্য সময় লাগবে। গাছ লাগালেও ফল পেতে সময় লাগে। আমরা যদি ৰমতায় থেকে যাই, বাসত্মবায়ন করে যেতে পারব।
সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদের প্রশ্নের জবাব দিতে প্রধানমন্ত্রী তাঁর উদ্দেশে পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, 'আপনিই বলেছেন, ভারত বাই ল্যাটারাল (দ্বিপাৰিক) ফরেন পলিসিতে সব সমস্যার সমাধান করে, মাল্টিল্যাটারাল (বহুপাৰিক) করে না। আমি ভারতে গিয়ে তো আঞ্চলিক সমস্যার সমাধান করে এলাম। ভারত, নেপাল, ভুটান আমাদের বন্দর ব্যবহার করতে পারবে। কারণ আমরা আঞ্চলিক সহযোগিতায় বিশ্বাসী।
মহাজোটের মিলনমেলা
সাংবাদিক সম্মেলনে শুধু প্রবীণ-নবীন সাংবাদিকেরই নয়, মহাজোটের নেতাদেরও রীতিমতো মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা, মন্ত্রী, মহাজোটের সিনিয়র নেতা ও ১৪ দলের শীর্ষ নেতাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। সাংবাদিক সম্মেলন শেষে সবাইকে চা চক্রে আমন্ত্রণ এবং সবার কুশল বিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, আবদুল জলিল, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ওবায়দুল কাদের, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, মোহাম্মদ নাসিম, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, মাহবুব-উল-আলম হানিফ, আক্তারম্নজ্জামান, জাতীয় পার্টির এইচএম এরশাদ, রম্নহুল আমিন হাওলাদার, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, জাসদের হাসানুল হক ইনু, শরিফ নুরম্নল আম্বিয়া, মইনুদ্দিন খান বাদল, সাম্যবাদী দলের মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, গণ আজাদী লীগের হাজী আবদুস সামাদ, গণতন্ত্রী পার্টির শরাফত আলী হীরা, ডা. শহীদুলস্নাহ সিকদার, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডা. অসিত বরণ রায় প্রমুখ। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ছাড়াও সরকারের মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, দলীয় সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.