বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখতে উৎসাহীদের ভিড়

চট্টগ্রাম অফিস বলয়গ্রাস সূর্য গ্রহণ দেখতে শুক্রবার দিনভর চট্টগ্রাম থেকে সেন্ট মার্টিন পর্যনত্ম দীর্ঘ সমুদ্র এলাকায় মানুষের কলকাকলীতে মুখরিত ছিল। সেন্টমার্টিন ও কক্সবাজারে উৎসুক মানুষ এবং পর্যটকদের ভিড় ছিল উপচেপড়া।
প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে সকাল থেকে ছিল যেন উৎসবের আমেজ। দুপুর গড়ালে সূর্যগ্রহণ দেখতে সৈকতগুলো পরিণত হয় রীতিমতো জনসমুদ্রে। মেঘমুক্ত পরিষ্কার আকাশে বহু মানুষ সূর্য, চন্দ্র এবং পৃথিবীর সমানত্মরাল অবস্থান দেখেছেন। নিরাপদে বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ প্রত্যৰ করতে বিভিন্ন সংগঠনও বিশেষ বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। চট্টগ্রামে দুপুরের পর থেকেই বিভিন্ন উঁচু দালান এবং পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে ভিড় বেড়ে যায়। দুপুর ২টা থেকে সূর্য রশ্মির তীৰ্নতা ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে শুরম্ন করলে মানুষের আগ্রহ বেড়ে যায়। বিভিন্ন ভবনের ছাদে উৎসুকরা থালা ভর্তি পানিতে দেখেছেন সূর্যকে চাঁদে ঢেকে ফেলার দৃশ্য। চট্টগ্রাম থেকে অবশ্য পুরোপুরি গ্রহণ নজরে পড়েনি। প্রায় ৭৭ ভাগ সূর্য ঢেকে গিয়েছিল বলয় গ্রহণের সময়। দুপুর আড়াইটায় পূর্ণ মাত্রায় বলয়গ্রাস পর্যবেৰণ করতে অনেকে ছুটে যান পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতেও। গ্রহণকালীন সূর্য থেকে বেগুনী রশ্মির চোখের ৰতি এড়াতে উৎসুকরা ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ধরনের ফিল্ম। প্রায় একঘণ্টা ধরে সূর্যালোকের তীৰ্নতা কমে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে কিছুটা ভীতিরও সৃষ্টি হয়। শুক্রবার জুমার নামাজের সময় সূর্যগ্রহণে বিভিন্ন ধরনের পরিবেশগত ৰতি এড়াতেও বিভিন্ন মসজিদে বিশেষ মোনাজাত করা হয়েছে। এছাড়া গ্রহণ সময়ে হিন্দুরাও বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে।
কক্সবাজার থেকে সংবাদদাতা জানান, দুপুর ২টা ৩১ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডে কক্সবাজারে সর্বোচ্চ গ্রহণের সময় রেকর্ড করেছেন উৎসুকরা। বিভিন্ন সংগঠন এবং বিজ্ঞান অনুসন্ধিৎসু চক্র মুহূর্তটিকে স্মরণীয় করে রাখতে এবং পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতে অসংখ্য টেলিস্কোপ ও সূর্যগ্রহণ দেখার সরঞ্জাম স্থাপন করে। কক্সবাজারের চেয়েও সেন্টমার্টিনে ছিল আরও অভূতপূর্ব দৃশ্য। সকাল থেকেই সারাদেশ থেকে অসংখ্য পর্যটক এবং মহাজাগতিক মুহূর্ত দেখতে উৎসুক মানুষ নাফ নদী পাড়ি দিয়ে সাগর প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে উপস্থিত হন। অসংখ্য মানুষে ভরে যায় এ দ্বীপ। তারপরও আলো অাঁধারি রূপ নেয়া সেন্টমার্টিন থেকে মানুষ উপভোগ করেছেন বলয়গ্রাসের পূর্ণ মুহূর্তটিকে। ২টা ৩৫ মিনিটে সূর্য রীতিমতো পরিণত হয় লাল চাঁদে। আলোর ছটায় বেশ কিছুৰণের জন্য সূর্য রূপ নেয় উজ্জ্বল একটি রিংয়ে। অনেকেই মুহূর্তটিকে ভিডিও এবং মোবাইল ও ক্যামেরায় ধারণ করে রেখেছেন। আগে থেকেই মানুষ এ মুহূর্ত সম্পর্কে অবগত হওয়ায় দ্বীপে কোন আতঙ্ক ছড়ায়নি। বলয়গ্রাস কেটে যাবার পর আবার উজ্জ্বল আলোতে উদ্ভাসিত হয় সেন্টমার্টিন।
অন্যদিকে, সরেজমিনে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে সকাল ৯টায় দেখা গেছে, মহাজাগতিক ঘটনা পর্যবেণের জন্য অনুসন্ধিৎসু চক্র কক্সবাজার, সেন্টমার্টিনসহ দেশব্যাপী ২০ টিরও অধিক ক্যাম্পের আয়োজন করে। চক্রের কেন্দ্রীয় ক্যাম্পটি স্থাপন করা হয় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে। দুপুর থেকে দেশী বিদেশী পর্যটক ছাড়াও স্থানীয় লোকজনের ভিড় বাড়তে থাকে।
দর্শনার্থী ও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের পর্যবেণ সুবিধার জন্য বসানো ৫০টি প্রজেকশন টেলিস্কোপ, দেশের সবচেয়ে বড় ৮ ইঞ্চি প্রতিসরণ টেলিস্কোপ, করোনাডো সোলার টেলিস্কোপ, ৮ ইঞ্চি মিড ক্যাসিগ্রেইন টেলিস্কোপ, এলসিডি প্রজেক্টও ও ১৫ হাজার সোলার ফিল্টার সর্বণিক ব্যসত্ম রাখা হয়। একের পর এক নারী পুরম্নষ ভিড় করে প্রজেকশন টেলিস্কোপ, করোনাডো সোলার টেলিস্কোপ এর সামনে। এসব দেখতে শিশুরাও পিছিয়ে ছিল না।
এবারের বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ পথের বিসত্মৃৃতি ছিল ৩০০ কিলোমিটার। যা পৃথিবীর অর্ধেক অঞ্চলের ওপর দিয়ে অতিক্রম করে বলে বিজ্ঞান সংগঠন অনুসন্ধিৎসু চক্রের জ্যোতির্বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি শাহজাহান মৃধা বেনু জানিয়েছেন।
রংপুর সদর থেকে সেন্টমার্টিনে বলয় গ্রহণ দেখতে বাবা মা'র সঙ্গে আসা দু' কিশোর প্রানত্মিক ও ঋতি্বক জানায়, প্রবাল দ্বীপ থেকে সরাসরি বলয়গ্রাস পর্যবেণ করতে পেরে তারা মহা আনন্দিত। কারণ ৫৪ বছর পর এমন আরেকটি দৃশ্য আবার দেখা সম্ভব হবে।
অনুসন্ধিৎসু চক্রের কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, জীববৈচিত্র ভরপুর সেন্টমার্টিন দ্বীপ পরিবেশের জন্য ইতোমধ্যে হুমকির সম্মুখীন হওয়ায় এবং বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত পর্যটক উপস্থিতির ফলে সেন্টমার্টিনের পরিবেশ আরও বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কায় চক্রের কেন্দ্রীয় ক্যাম্পটি সেন্টমার্টিনে স্থাপন না করে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.