স্বাস্থ্যনীতির মতামত সংবলিত খসড়া প্রকাশ

 তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নের ওপর গুরম্নত্ব দিয়ে জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি ২০১০-এর মতামত সংবলিত খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে। শনিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কৰে আনুষ্ঠানিক সাংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রম্নহুল হক মতামত সংবলিত স্বাস্থ্যনীতির খসড়া তুলে ধরেন।
তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, আমরা এর মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাতের গণমুখী উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির সমন্বয় করে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতে পারব। আগামী তিন মাসের মধ্যে স্বাস্থ্যনীতি চূড়ানত্ম করা হবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
স্বাস্থ্যনীতির খসড়ায় জাতি, ধর্ম, গোত্র, আয়, লিঙ্গ এবং ভৌগোলিক অবস্থান নির্বিশেষে সকলের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করে সামাজিক ন্যায়বিচার ও সমতার ভিত্তিতে স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ওপর গুরম্নত্ব দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী তাঁর লিখিত বক্তৃতায় বলেন, অত্যাবশ্যকীয় সেবাগুলো রাষ্ট্রীয় ভূখ-ের যে কোন ভৌগোলিক অবস্থানের প্রত্যেক নাগরিকের কাছে পেঁৗছে দেয়া হবে।
মন্ত্রী বলেন, খসড়া স্বাস্থ্যনীতির ওপর মতামত প্রদানের জন্য বিভাগ এবং জেলাপর্যায়ে এটি প্রেরণ করা হবে। চাইলে অন্যকেউও এ সময়ে মতামত দিতে পারেন। সকলের মতামত পাওয়ার পর আগামী ৩ মাসের মধ্যে জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি চূড়ানত্ম করা হবে। প্রতি ৫ বছর পরপর পরিবর্তিত সময়, সম্পদ ও অবস্থা বিবেচনা করে জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন করে হালনাগাদ করা হবে বলে জানান তিনি।
এক প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিগত ৭ বছর দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যেভাবে ভেঙ্গে পড়েছিল আমরা সে পথে হাঁটছি না। আশা করি মানুষ যা চায় তা আমরা দিতে পারব। স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নে আগামী দেড় মাসের মধ্যে ডাক্তার নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরম্ন হবে। দেশের সকল এলাকার হাসপাতালে যাতে ডাক্তারদের সমবণ্টন হয় জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে সে বিষয়ে গুরম্নত্ব দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য সেবার বিকেন্দ্রীকরণের কথা উলেস্নখ করে তিনি বলেন, আমরা চাচ্ছি জেলা এবং বিভাগীয় পর্যায়ে উন্নত সেবা পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হোক। যাতে আগামী দেড় বছরের মধ্যে হার্ট বাইপাস ও কিডনি প্রতিস্থাপনের মতো বড় অস্ত্রপ্রচার রাজধানীর বাইরে করা সম্ভব হবে।
প্রতি ৬ হাজার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য একটি করে কমিউনিটি কিনিক স্থাপন করাকে সরকারের বড় সাফল্য উলেস্নখ করে তিনি স্বীকার করেন এৰেত্রে আমাদের কিছু অব্যবস্থাপনা রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য বিষক উপদেষ্টা ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেন, আমরা একটি বাসত্মবভিত্তিক স্বাস্থ্যনীতি করতে চেয়েছি যা বাসত্মবায়ন করা সম্ভব হবে। বেসরকারী স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তির ৰেত্রে মাত্রাতিরিক্ত অর্থগুনতে হয় সাংবাদিকদের এমন অভিযোগ খ-ন করে তিনি বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতির কারণে দেশে স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সমালোচনা করে বলেন, এর ভাল এবং মন্দ দু'টি দিকই আছে। ভাল দিকগুলো গ্রহণ করবেন আর অসুবিধা গ্রহণ করবেন না তা হবে না। আইনজীবীদের উচ্চহারে সম্মানী নেয়ার সমালোচনা না করা হলেও চিকিৎসকদের সম্মানী নেয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলার বিষয়ে তিনি ৰোভ প্রকাশ করেন।
খসড়া স্বাস্থ্যনীতিকে মোট ১০টি অধ্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে প্রসত্মাবনা, প্রোপট ও প্রবণতা, প্রতিবন্ধকতাসমূহ, রূপকল্প, ল্য, উদ্দেশ্য, নীতি, কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা। স্বাস্থ্যনীতি বাসত্মবায়নের জন্য ২০ টি সুনির্দিষ্ট লৰ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ল্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য ২০টি নীতি অনুসরণ করা হবে। এসব নীতি অনুসরণ করে ল্য অর্জনের জন্য ৪৮ টি কৌশল অবলম্বন করার কথা বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্যনীতির খসড়ার রূপকল্পে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যখাত এমন একটি কার্যকর পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়তা করতে চায় যেখানে বাংলাদেশের জনগণ সুস্বাস্থ্য অর্জন ও তা ধরে রাখার সুযোগ পাবে। স্বাস্থ্যনীতির প্রতিবন্ধকতা অধ্যায়ে মাতৃ ও শিশু মৃতু্য হার, এইচআইভি, ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা, কালাজ্বর, আর্সেনিক দূষণ, অপুষ্টির ৰেত্রে যথেষ্ট অর্জন থাকলেও তা আনত্মর্জাতিক পর্যায়ের নয় বলে উলেস্নখ করা হয়েছে। এসব ৰেত্রে পরিবার, সামাজিক পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টি এবং স্বাস্থ্যখাতে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ওপর গুরম্নত্বারোপ করা হয়েছে। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জলবায়ু পরিবর্তন, মানব সম্পদ, অনানুষ্ঠানিক স্বাস্থ্যসেবা, কেন্দ্রীভূত ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্য গবেষণা এবং তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তির আরও কিছু বিষয়কে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক শাহ মনির হোসেন, বিএমএর সহসভাপতি ডা. কামরম্নল হাসান খান, মহাসচিব মোঃ শরফুদ্দীন আহমদ, যুগ্ম মহাসচিব ডা. মোঃ আব্দুল আজিজ, স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্যসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের বিরোধিতার জন্য ১৯৯০ সালে প্রণীত স্বাস্থ্যনীতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে দেয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ৰমতায় আসার পর একটি স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়নের উদ্যোগ নেয় এর ধারাবাহিকতায় ২০০০ সালের আগস্টে একটি স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু পরবর্তী বিএনপি জামায়াত জোট সরকার স্বাস্থ্যনীতির গণমুখী বিভিন্ন প্রসত্মাবনা বাসত্মবায়নে অবহেলা করে যাতে স্বাস্থ্যনীতি ২০০০ এর মৌলিক উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ২০০০ সালের স্বাস্থ্যনীতিকে ভিত্তি ধরে একটি যুগোপযোগী স্বাস্থ্যনীতি প্রণয়ন করা হয়। প্রণীত খসড়া স্বাস্থ্যনীতির ওপর ওয়েবসাইটে মতামত চাওয়া হলে প্রায় ৩২ হাজার মানুষ এর ওপর মতামত দেন। এসব মতামত যাচাই বাছাই করে শনিবার প্রকাশ করা হলো মতামত সংবলিত স্বাস্থ্যনীতি ২০১০।

No comments

Powered by Blogger.