পলাতক ছয় খুনীকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে- বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা by বিকাশ দত্ত

 জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় দ-িত কারাগারে আটক পাঁচ খুনীর মৃতু্যদ- কার্যকর করার পাশাপাশি বিদেশে পলাতক ছয় খুনীকে দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
এ ব্যাপারে সংশিস্নষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ করছে। পলাতক ৬ খুনী বিভিন্ন দেশে পালিয়ে রয়েছে। অপরদিকে কারাগারে আটক পাঁচ খুনীর মধ্যে তিন খুনী সুপ্রীমকোর্টের রায় রিভিউয়ের জন্য আবেদন করেছে। এ ব্যাপারে ২৪ জানুয়ারি শুনানির দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু হত্যার সাথে জড়িত ১২ খুনীর মধ্যে ৬ খুনী বিদেশে পলাতক রয়েছে। এদের মধ্যে লে. কর্নেল (অব.) খোন্দকার আব্দুর রশীদ লিবিয়া ও বেলজিয়ামে অবস্থান করছে। বেশিরভাগ লিবিয়াতে থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্য করছে। লে. কর্নেল (অব) শরিফুল হক ডালিম পাকিসত্মানে অবস্থান করছে বলে জানা গেছে। পাকিসত্মান থেকে হংকংয়ে তার যাতায়াত রয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। লে. কর্নেল (অব) এ এম রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে। লে. কর্নেল (অব) এনএইচএমবি নুর চৌধুরী কানাডায় রয়েছে। সম্প্রতি জানা গেছে, সে লন্ডনে অবস্থান করছে। বঙ্গবন্ধুর দুই খুনী ভারতে কারাগারে আটক বলে জানা গেছে। এরা হলো ক্যাপ্টেন (অব) আব্দুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে গিয়ে ৩টি চুক্তি করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো দু'দেশে যে সব দ-িত খুনী ও সন্ত্রাসীরা রয়েছে তা ফিরিয়ে দেয়া। সে অনুযায়ী ভারতে আটক দুই খুনী ক্যাপ্টেন (অব.) আব্দুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেমউদ্দিনকে বাংলাদেশের কাছে হসত্মানত্মর করা হতে পারে। বাদ বাকী ৪ জন খুনীর ব্যাপারে সংশিস্নষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে বন্দী বিনিময় চুক্তি না হলেও পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে খুনীদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করা হবে।
আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেছেন, কারাগারে আটক পাঁচ খুনীর মধ্যে তিন খুনী রাষ্ট্রপতির নিকট প্রাণভিৰার আবেদন করেছে।
আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে এ সংক্রানত্ম নথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠিয়েছে। এখন প্রধানমন্ত্রী অনুমোদনসহ তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবেন। এরপর রাষ্ট্রপতি তার সিদ্ধানত্ম গ্রহণ করবেন। তিনি আরও বলেন, আসামিদের রিভিউ শুনানি এবং রাষ্ট্রপতির প্রাণভিৰার আবেদন সম্পন্ন করে জানুয়ারিতেই খুনীদের ফাঁসি কার্যকর হওয়া সম্ভব। পলাতক খুনীদের ব্যাপারে আইনমন্ত্রী বলেন, তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। দেশে এনে তাদের রায় কার্যকর করা হবে। লে কর্নেল (অব) নুর চৌধুরীর ব্যাপারে তিনি বলেন, নুর কানাডাতেই আছে। লন্ডনে অবস্থান করা নিয়ে যে খবর বেরিয়েছে তা মিথ্যা, কানাডার রাষ্ট্রদূত ইয়াকুব আলী সমসত্ম কাগজপত্র পাঠিয়েছেন। কানাডায় খুনী নুরের পাসপোর্ট জব্দ করেছে সে দেশের সরকার। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে যে সমসত্ম দেশে খুনীরা অবস্থান করছে সে দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর একদল কর্মকর্তা ও সৈনিক ধানম-ির ৩২ নম্বরের বাড়িতে ঢুকে বেশ কয়েকজন আত্মীয়স্বজনসহ স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। ঘটনার ২১ বছর পর বিচার প্রক্রিয়া শুরম্ন হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৯৬ সালের আগ পর্যনত্ম যে সমসত্ম সরকার ৰমতায় ছিল তারা খুনীদের প্রত্যৰ ও পরোৰভাবে সহযোগিতা করেছে।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ৰমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়া শুরম্ন করে। ১৯৯৮ সালের ৮ নবেম্বর ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল ১৫ জন আসামিকে ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃতু্যদ- প্রদান করেন। এই রায়ের বিরম্নদ্ধে আপীল ও মৃতু্যদ- নিশ্চিত করনের শুনানি হয় হাইকোর্টে। হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এই মামলায় দ্বিধাবিভক্ত রায় প্রদান করেন। পরে তৃতীয় বেঞ্চ ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল ১২ জনের মৃতু্যদ- অনুমোদন করে রায় প্রদান করে। কারাগারে আটক পাঁচ খুনী লে. কর্নেল (বরখাসত্ম) সৈয়দ ফারম্নক রহমান, লে. কর্নেল (অব) মুহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি), লে. কর্নেল (অব) একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার), লে. কর্নেল (অব) সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান ও মেজর (অব) বজলুল হুদা এই রায়ের বিরম্নদ্ধে আপীল করে। আপীল বিভাগের পাঁচ বিচারপতি মোঃ তাফাজ্জাল ইসলাম, বিচারপতি মোঃ আব্দুল আজিজ, বিচারপতি বিজন কুমার দাস, বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেন ও বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ১৯ নবেম্বর ঐতিহাসিক রায়ে খুনীদের আবেদন নাকচ করে দেন। ফলে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকে। আপীল বিভাগের রায়ের পর বিচারিক আদালত পাঁচ খুনীর বিরম্নদ্ধে মৃতু্যপরোয়ানা জারি করেন। পাঁচ খুনীদের মধ্যে তিনজন রিভিউ পিটিশনের জন্য আবেদন করেছে। ১৯ জানুয়ারির মধ্যে বাদ বাকিদেরকেও রিভিউ করতে হবে। ২৪ জানুয়ারি রিভিউয়ের উপর শুনানি হবে। এরপর আদালত যে সিদ্ধানত্মই দিক না কেন, পরবতর্ী সিদ্ধানত্ম নেবেন রাষ্ট্রপতি মোঃ জিলস্নুর রহমান। ১২ খুনীর মধ্যে লে. কর্নেল (অব) আজিজ পাশা ২০০১ সালে জিম্বাবুইয়েতে পলাতক অবস্থায় মারা গেছে। নতুন বছরের শেষে পাঁচ খুনীর রায় কার্যকর করে অবশিষ্ট ৬ পলাতক খুনীকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকার সংশিস্নষ্ট দেশগুলোতে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের সহযোগিতা চেয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.