সাংসদ ইসরাফিলের সমালোচনা- ১১১ জন মানুষকে হত্যার পরও মালিক গ্রেপ্তার হলো না

‘তাজরীনের আগুন নিয়ে বিজিএমইএর তদন্ত প্রতিবেদন তাদের কাণ্ডজ্ঞানহীনতা ও দায়িত্বহীনতার বহিঃপ্রকাশ। এটা একপেশে। আমি তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করছি।’
গতকাল সোমবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে এভাবেই পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সমালোচনা করলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাংসদ ইসরাফিল আলম। তিনি এ সময় তাজরীনের মালিককে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে বলেন, ১১১ জন শ্রমিককে হত্যার পরও মালিক গ্রেপ্তার হলেন না। এটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা। মালিকের সহায়তা ছাড়া মধ্যম সারির কর্মকর্তাদের পক্ষে সেখানে কোনো নাশকতা করা সম্ভব নয়।
বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ অকুপেশনাল সেফটি হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (ওশি) ফাউন্ডেশন অনুষ্ঠানটির আয়োজক। আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডে ১১১ জন নিহতের ঘটনার সরেজমিনে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়। ওশির চেয়ারপারসন সাকী রেজওয়ানা এতে সভাপতিত্ব করেন।
ইসরাফিল আলম বলেন, বিজিএমইএ তাদের সদস্য তাজরীনের মালিককে বাঁচানোর জন্য ওই প্রতিবেদনে ইচ্ছামতো নাশকতার কথা বলেছে। এখন তাদেরই বলতে হবে সেখানে কী ধরনের নাশকতা হয়েছে, কারা করেছে। এসব জানতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। নাশকতার কথা বলে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা করছে তারা। তিনি বলেন, ‘বিজিএমইএর সদস্যরা শুধু মালিকই রয়ে গেলেন, তাঁরা এখনো মানুষ হননি। আমি তাঁদের আক্রমণাত্মক ও উসকানিমূলক আচরণ পরিহার করে ইতিবাচক আচরণ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
পোশাক মালিকদের উদ্দেশে সাংসদ বলেন, ‘আপনারা সুরম্য বিজিএমইএ ভবন বানিয়ে রেখেছেন। সেখানে তো কখনো “নাশকতার” কথা শোনা যায়নি। আপনাদের বাড়িতেও কখনো “নাশকতা” হয়নি। সব নাশকতা হয় ওই কারখানাগুলোতে। আপনাদের বাড়ি, ভবন সব সুরক্ষিত করতে পারেন। শুধু পারেন না কারখানাগুলোকে নিরাপদ করতে। ভালো কাজের কোনো পদক্ষেপ নেন না। শুধু দুর্ঘটনা ঘটলে মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী আর শ্রমিকনেতাদের নিয়ে লম্ফঝম্প করেন। কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করেন আর আপনাদের কোনো তথ্যভান্ডার নেই। কারা আপনাদের কারখানায় কাজ করেন, আপনারা তা জানেন না। শ্রমিকদের কোনো তালিকা নেই, ছবি নেই।’
সাংসদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত বাজারসুবিধা (জিএসপি) বাতিলের আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ নিয়েছে সে দেশের সরকার। আইনের সংস্কার, কর্মপরিবেশের উন্নতিসহ পুরো শিল্পের কাঠামোগত উন্নতি না করলে এই জিএসপিসুবিধা থাকবে না। মালিকেরা এত দিন শ্রম আইনের সংস্কার আটকে রেখেছিলেন। এখন এই আইন সংশোধন না করলে তাঁদের ব্যবসা থাকবে না। তিনি বলেন, ‘শ্রমিক ভাইদের বলব এখন একটু পল্টন-প্রেসক্লাব এলাকায় দৌড়াদৌড়ি, লেফট-রাইট করেন। আপনারা বাইরে থেকে চাপ দেন আমরা ভেতরে থেকে কাজ করছি।’
কারখানাগুলোর বিমাপদ্ধতির সমালোচনা করে সাংসদ বলেন, একটি কারখানায় শ্রমিক থাকেন পাঁচ হাজার। আর তারা গোষ্ঠীবদ্ধ বিমা করে রাখে মাত্র ২০ জনের জন্য। তাজরীনের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে।
তাজরীনে অগ্নিকাণ্ডে আহত-নিহত পরিবারগুলোকে চাকরি দেওয়ার কথা বললেও এখন পর্যন্ত সেই পরিবারগুলোর কোনো খোঁজই বিজিএমইএ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ওই অনুষ্ঠানে জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক রায় রমেশ চন্দ্র বলেন, ক্ষতিপূরণের অর্থ থেকে বঞ্চিত করার জন্য নিখোঁজ শ্রমিকদের শনাক্তের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে না সরকার।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক আবু নাঈম মো. শাহীদউল্লাহ বলেন, তাজরীনের মালিক জানেনই না নিরাপদ বহির্গমনপথের কথা। এই অজ্ঞানতাটাও আইনের লঙ্ঘন।
ওশি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, এটি একটি দুর্ঘটনা। নিচতলার গুদাম থেকে আগুন শুরু হয়। আর ভবনের তিনটি সিঁড়িই এই গুদামে এসে শেষ হয়েছে। ছিল না কোনো জরুরি নির্গমন সিঁড়ি। যথাসময়ে অগ্নিঘণ্টা বাজলেও শ্রমিকদের নামতে দেননি কারখানার ব্যবস্থাপকেরা। এতেই হতাহতের ঘটনা বেড়ে গেছে।
ওই অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন শ্রমিক লীগের সভাপতি শুক্কুর মাহমুদ, ওশির নির্বাহী পরিচালক এ আর চৌধুরী রিপন, কয়েকজন আহত শ্রমিক ও বিভিন্ন শ্রমিকসংগঠনের নেতারা।

No comments

Powered by Blogger.