শীত- হিমেল হাওয়া, বৃষ্টির মতো ঝিরিঝিরি কুয়াশা by নিখিল মানখিন

 রাজধানীতে মৌসুমের সবচেয়ে বেশি শীত অনুভূত হয়েছে শনিবার। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ফারাক বেশি কাছাকাছি আসায় এমনটি হয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। পাশাপাশি রয়েছে ঘন কুয়াশা এবং কনকনে উত্তুরে হিমেল হাওয়া।
রাজধানীতে হিমেল বাতাস বইছে ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে। এমন অবস্থা আরও দু'তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। শনিবারও তীব্র শীত, কুয়াশা ও ঠা-া বাতাসে দেশবাসীর দুর্ভোগের সীমা ছিল না। ইরি-বোরো বীজতলা চরমভাবে তিগ্রসত্ম হচ্ছে। শুধু গাইবান্ধার সাদুলস্নাপুর উপজেলাতেই শীত ও কুয়াশায় ইতোমধ্যে ৮৫ হেক্টর বীজতলা নষ্ট হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে দিনাজপুর জেলার অধিকাংশ শিা প্রতিষ্ঠান। শনিবার নতুন করে ৬ জনের মৃতু্য ঘটেছে। এ নিয়ে গত ২৭ দিনে শীতে মৃতু্যর সংখ্যা দাঁড়াল ১১৭জনে। দেশের বেশ কিছু অঞ্চলে আজ রবিবারও মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বইতে পারে। সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে।
আবহাওয়া অফিস জানায়, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য যত কাছাকাছি হবে শীত তত বেশি অনুভূত হবে। এ কারণে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা খুব বেশি নিচে না নামলেও শনিবার রাজধানীতে প্রচ- শীত অনুভূত হয়েছে। দিনের তাপমাত্রা ৮ থেকে ৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস কমে যায়। সূর্যরশ্মির স্বল্পতাও দিনেরবেলায় বেশি শীত অনুভূত হওয়ার পেছনে ভূমিকা রেখেছে। শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা শুক্রবারের তুলনায় ২ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা শূন্য দশমিক ৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস কমে যায়। অর্থাৎ শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সিলেটে ২৭ দশমিক ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন শ্রীমঙ্গলে ৮ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড হয়। এদিন ঢাকা বিভাগের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার মধ্যে পার্থক্য ছিল মাত্র ৪ দশমিক ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। অর্থাৎ ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ১২ দশমিক ৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড হয়। সূত্রটি আরও জানায় যশোর, কুষ্টিয়া ও শ্রীমঙ্গল অঞ্চলসহ রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা আরও কমতে পারে।
দু'দিন বিরতির পর রাজধানীতে শীতের তীব্রতা আবারও বেড়েছে। শনিবার দিনভর নগরীর আকাশ ছিল কুয়াশার দখলে। হিমেল বাতাস বাড়িয়ে দেয় শীতের তীব্রতা। কুয়াশা ভেদ করে বেরিয়ে আসতে পারেনি সূর্যের আলো। স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় নেমে আসে স্থবিরতা। ছিন্নমূল মানুষের কষ্টের সীমা ছিল না। অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হতে সাহস করেনি কেউ। গরম কাপড় ব্যবহার করতে হয়েছে সকলকে। পড়ে যায় গরম কাপড় কেনার হিড়িক। দেড় থেকে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হয় গরম কাপড়। মাথায় গরম টুপি, গলায় মাফলার, গায়ে ভারি চাদর বা জ্যাকেট এবং পায়ে মোজা_ এ সবই ছিল শনিবারের পোশাক। ভিড় জমে ওঠে প্রতিটি চা দোকানে। ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় কমে যায় গ্যাসের চাপ। রাজধানীতে সৃষ্টি হয় গ্যাসের সঙ্কট। অনেক এলাকায় গ্যাসের চাপ একেবারেই ছিল না। সকালে কর্মজীবী মানুষ এবং স্কুলগামী শিশু ও তাদের অভিভাবকদের কনকনে শীতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। শনিবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণে নামেন পুলিশের আইজি নুর মোহাম্মদ। অফিস-আদালত ও স্কুল-কলেজে উপস্থিতি ছিল কম।
নিজস্ব সংবাদদাতা গাইবান্ধা থেকে জানান, হিমেল বাতাস ও ঘন কুয়াশার পাশাপাশি শীতের তীব্রতা বেড়েছে। শীতজনিত রোগে সাদুলস্নাপুর উপজেলার কলেজপাড়ার গেন্দালা শেখ (৮০) নামে এক বৃদ্ধের মৃতু্য ঘটেছে। এ নিয়ে জেলায় শীতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২০ জনে। ইরি-বোরো বীজতলায় মড়ক দেখা দিয়েছে। ইরি-বোরো চারা হলদে হয়ে মরে যাচ্ছে। চারাগুলো বৃদ্ধি না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছে কৃষকরা। শুধু সাদুলস্নাপুর উপজেলাতেই ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান লাগানোর ল্যমাত্রা পূরণে ৪১০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮৫ হেক্টর বীজতলা তিগ্রসত্ম হয়েছে। গোটা জেলাতেই ইরি-বোরো চারার সঙ্কট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কৃষকরা।
স্টাফ রিপোর্টার দিনাজপুর থেকে জানান, দিনাজপুর জেলায় শনিবার সকাল থেকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মতো কুয়াশাপাত শুরম্ন হয়েছে। এমন বৈরী আবহাওয়ার কারণে জেলার অধিকাংশ শিা প্রতিষ্ঠানে ছুটি দেয়া হয়। শহরের রাসত্মাঘাটে মানুষের চলাচল ছিল না বললেই চলে। শীতজনিত রোগে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ জনের মৃতু্য হয়েছে। মৃতরা হলেন আবুল হাসেম (আড়াই মাস), বাবু (৩দিন), শরিফুল ইসলাম (৭২), আমেনা খাতুন (৫৭) ও সহিদুল ইসলাম (৬৯)। এ নিয়ে জেলায় শীতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৪৭ জনে।

No comments

Powered by Blogger.