নারীর প্রতি সহিংসতা কাম্য নয় by শাহীন হাসনাত

ক'দিন আগে পালিত হলো বিশ্ব নারী দিবস। নারী সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু নারী এখনও পায়নি পূর্ণ নিরাপত্তা। নারী নির্যাতনের ভয়াবহ সব খবর হামেশাই পত্রিকায় আমরা দেখছি। নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে পারছে না শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধারাও।
অবস্থা এমন পর্যায়ে পেঁৗছেছে যে, নারী মানে নির্যাতন, নারী মানেই সহিংসতা। নারীর প্রতি সমাজের এই দৃষ্টিভঙ্গি ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলাম চায় নারীর পূর্ণ নিরাপত্তা ও সম্মানজনক জীবন। একজন মুসলিম নারীকে সমাজের বেশ কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। ইসলামী সমাজব্যবস্থায় নারীকে জীবনের কোনো ধাপেই অপাঙ্ক্তেয় করে রাখা হয়নি।
নারী তার জীবনে অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করে সাফল্যের চূড়ায় উপনীত হয়। স্ত্রী ও মা হিসেবে নারীর অসামান্য অবদান সমাজসৌধ নির্মাণে যে ভূমিকা রাখছে তা অনস্বীকার্য। নারী কন্যা, বোন ও স্ত্রী হিসেবে যেমন আদরণীয় তেমনি মা হিসেবেও সে সম্মানীয়। সুতরাং পারিবারিক জীবনের কোনো অংশেই সুযোগ নেই নারী নির্যাতনের; নারীকে অবহেলার।
ইসলাম-পূর্ব যুগে কন্যাশিশুকে মাটিতে পুঁতে ফেলা হতো, কন্যাশিশুর জন্ম বাবার জন্য ছিল অবমাননাকর এক অধ্যায়। এর যথার্থ বিবরণ কোরআনুল কারিমে বিবৃত হয়েছে। আখেরি নবী হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) নবুওয়তপ্রাপ্তির পর কন্যাসন্তান লালন-পালনের বিনিময়ে জান্নাতের ঘোষণা দিয়ে কন্যাশিশুকে অভাবনীয় মর্যাদায় অভিষিক্ত করেন।
কন্যাসন্তানকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলে যদি প্রতিষ্ঠিত করা যায় তাহলে দুনিয়া ও আখিরাতে অবশ্যই কল্যাণপ্রাপ্তির আশা করা যেতে পারে। বর্তমান বিশ্বে নারী-পুরুষের ব্যবধান ঘোচানোর জন্য যে দাবি উঠেছে তার নিরসন হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) দেড় হাজার বছর আগেই দিয়ে গেছেন। কিন্তু তাঁর আদর্শ অনুসরণ না করে মানবরচিত আদর্শ অনুসরণের কারণেই আজ নারীজাতি অবহেলিত ও নির্যাতিত। যদি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দেখানো পথে নারীর মুক্তি খোঁজা হয় তবেই এ সমস্যার সমাধান হবে বলে আমরা নিশ্চিত।
এ কথা অনস্বীকার্য, নারীর প্রতি সদয় অথবা নিষ্ঠুর আচরণে এক জাতির সঙ্গে আরেক জাতির এবং এক আইনের সঙ্গে আরেক আইনের যতই পার্থক্য ও বৈপরীত্য থাকুক না কেন, ইসলামের অভ্যুদয়ের আগে নারী কখনও কোনো সমাজে তার যথাযোগ্য সামাজিক ও আইনগত মর্যাদা লাভ করেনি।
এই যখন নারীর অবস্থা, তখন কোরআনুল কারিম ঘোষণা দেয়_ 'নারীদের সঙ্গে সদ্ভাবে জীবনযাপন করো।' সূরা নিসা : ১৯
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কণ্ঠে ধ্বনিত হলো_ 'নারীগণ পুরুষদেরই সহোদরা।' _আহমদ ও আবু দাউদ
এভাবেই ইসলাম সর্বপ্রথম নারীদের সমাজে স্বাধীন, সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার অধিকার প্রদান করে। এমনকি সূরা নিসা নামে পবিত্র কোরআনের একটি পূর্ণাঙ্গ সূরাই নাজিল হয় নারীর সব অধিকারের বার্তা নিয়ে। ইসলামের নবীই নারীকে একজন মা হিসেবে সম্মান ও মর্যাদার সুউচ্চ আসনে সমাসীন করেন। তিনি ঘোষণা করেন, 'মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত।' _মুসনাদে আহমদ
কিন্তু দুঃখের বিষয়, যে ইসলাম নারীকে যথার্থ সম্মান ও মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে, তার আইনসম্মত অধিকারের পূর্ণ নিশ্চয়তা প্রদান করেছে, সব নিপীড়ন ও নির্যাতন, শোষণ ও বঞ্চনা থেকে তাকে মুক্তির পয়গাম শুনিয়েছে, সেই ইসলামকেই আজ নারী স্বাধীনতার অন্তরায়, নারীর উন্নয়নের চরম প্রতিবন্ধক হিসেবে চিত্রিত করার অপপ্রয়াস চলছে। ইসলামের নীতিকে ত্রুটিপূর্ণ ও অযৌক্তিক প্রমাণ করার অপচেষ্টা চলছে। ইসলামী আইনকে অবিচার, অন্যায় ও বৈষম্যমূলক প্রমাণ করতে তাদের নিরন্তন প্রচেষ্টা খুবই লক্ষণীয়। বিষয়টি অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
সম্প্রতি 'নারী উন্নয়ন নীতিমালা ২০১১' নিয়ে সরকার ও ধর্মভিত্তিক দলগুলো পরস্পর আস্থাহীনতায় ভুগছে। নারী উন্নয়ন নীতিমালায় নারীর সার্বিক উন্নয়ন ও অধিকার সংরক্ষণের কথা বলা হচ্ছে। অন্যদিকে ধর্মভিত্তিক দলগুলো সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকারের বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। এমতাবস্থায় মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ড. শিরিন শারমীন চৌধুরী স্পষ্ট করে বলেছেন, নতুন নীতিমালায় সম্পত্তিতে নারীর সমঅধিকারের বিষয়টি নেই। বিষয়টি নিয়ে যেহেতু বিতর্ক দেখা দিয়েছে, সুতরাং নতুন নীতিমালাটি জনসমক্ষে প্রকাশের ব্যবস্থা করা হোক। তাতে মানুষ সত্য জানতে পারবে। নারী উন্নয়ন নীতিমালা এখনও পাস হয়নি। প্রস্তাবিত নীতিমালায় যদি কোরআনবিরোধী কোনো ধারা থেকে থাকে তা বাদ দিতে হবে। ধর্মপ্রাণ মানুষের দাবির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা নির্বাচিত সরকারের দায়িত্ব।
আরেকটি কথা, আল্লাহতায়ালা নারী ও পুরুষকে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, যা একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর এটা সর্বজন স্বীকৃত যে, ইসলামই প্রকৃতপক্ষে নারীর ন্যায্য অধিকারের কথা বলে। পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিকসহ সব ক্ষেত্রে ইসলাম নারীর ন্যায্য অধিকার সুনিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশের জনগণ শত শত বছর ধরে নারীসমাজের প্রতি ইসলামের প্রদত্ত অধিকারগুলো নিশ্চিন্তে ও নিঃসঙ্কোচে গ্রহণ করে আসছে। এর দ্বারা তারা কখনোই অপরিতৃপ্তিবোধ করেনি। সামনেও করবে না ইনশাআল্লাহ।
 

No comments

Powered by Blogger.