আমাজন ফিশ 'আরাপাইমা' হারিয়ে যাচ্ছে by এমদাদ হোসেন ভূঁইয়া

অতিকায় আমাজন ফিশ বা আমাজন নদীর আরাপাইমা প্রজাতির মাছের অসত্মিত্ব এখন হুমকির মুখে। অতিমাত্রায় শিকারের কারণেই এই দশা হয়েছে। সাম্প্রতিককালে এক স্টাডিতে দেখা যায়, প্রজাতি বা আকার নির্বিশেষে কোন বাছবিচার ছাড়াই শিকারিরা এই মাছ ধরছে।
ফলে আরাপাইমা এখন নির্বংশ হতে চলেছে। দেহের আয়তনে আরাপাইমা পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় আকৃতির মাছ। বিজ্ঞানীরা বলেন, চার প্রজাতির আরাপাইমা রয়েছে। গবেষণা, যত্ন ও ব্যবস্থাপনার অভাবে এগুলো এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। সম্প্রতি এই মাছ নিয়ে গবেষণা করছেন ম্যাসাচুসেটসের উডস হোল রিসার্চ সেন্টারের ডক্টর লিয়ানড্রো ক্যাসটেলেস্না এবং স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের প্রফেসর ডোনাল্ড স্টুয়ার্ট। তাদের গবেষণা থেকেই মাছটি সম্পর্কে সর্বশেষ তথ্য জানা গেছে। তারা এই মাছের জীবন প্রণালী এবং বর্তমান অবস্থা নিয়ে বিসত্মারিত গবেষণা চালিয়েছেন। তারা মাছের সংখ্যাও পর্যালোচনা করেছেন। ইতোপূর্বে ধারণা করা হতো, পৃথিবীতে মাত্র একটি প্রজাতির আরাপাইমা আছে। যার নাম পিরারম্নকু বা পাইকি। বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করে এই তথ্য জানা গেছে। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে আরও প্রজাতির সন্ধান পেয়েছেন।

একটি পূর্ণ বয়স্ক আরাপাইমার দৈর্ঘ্য ৩ মিটার এবং ওজন ২শ' কিলোগ্রামের বেশি। এরা জলের উপরিভাগে এসে বাতাস থেকে শ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকে। প্রতি পাঁচ থেকে দশ মিনিট অনত্মর এদের দম নিতে হয়। তাই এরা আমাজন অববাহিকার নদী, হ্রদ ও প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে। যেখানে অক্সিজেনের কোন ঘাটতি নেই।

যাই হোক চলমান স্টাডি বা গবেষণায় প্রফেসর স্টুয়ার্ট বিশ্বের বিভিন্ন জাদুঘরে সংরতি সব প্রজাতির আরাপাইমার খোঁজখবর নিয়েছেন। সেগুলোর জীবনাচরণ বিশেস্নষণ করেছেন। এ পর্যনত্ম তিনি মাত্র একটি প্রজাতির খোঁজ পেয়েছেন, যার নাম আরাপাইমা গিগাস। আর অন্যগুলো হয়তো এই প্রজাতির কাছাকাছি। তবে এ বিষয়ে এখনও চূড়ানত্ম প্রতিবেদন আসেনি।

ডক্টর কাসটেলেস্না বলেন, তাদের নতুন বিশেস্নষণে শুধু এটুকু জানা গেছে, বিশ্বে অনত্মত চার প্রজাতির আরাপাইমা রয়েছে। সুতরাং মাঠপর্যায়ে জরিপ কাজ শেষ হওয়ার আগ পর্যনত্ম বলা যাচ্ছে না, আরাপাইমা গিগাসের অসত্মিত্ব একেবারে শেষ প্রানত্মে পেঁৗছে গেছে, না কি এটি এখনও পানিতে বিচরণ করছে। তবে ডক্টর কাসটেলেস্না এবং প্রফেসর স্টুয়ার্ডের জরিপে এ পর্যনত্ম মাছের যে সংখ্যা পাওয়া গেছে, তাতে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

গবেষণায় দেখা যায়, আরাপাইমার যৌন তাড়না হয় অপোকৃত বিলম্বে। প্রজননের জন্য তাদের বিশেষ পরিবেশের প্রয়োজন হয়। গবেষণায় আগে দেখা গেছে, জেলেদের অতিমাত্রায় শিকারের কারণে এর অসত্মিত্ব আজ বিপন্ন। যেহেতু এসব মাছ দম নেয়ার জন্য কিছুণ পরপরই পানির উপরে ভেসে ওঠে তাই এদের শিকার করা খুব সহজ। জেলেরা হারপুন কিংবা জাল দিয়ে এই মাছ ধরে। খেতে সুস্বাদু এবং শ্বাস নিতে ঘন ঘন জলের ওপর ভেসে থাকাই এদের জন্য কাল হয়েছে। জেলেরা ১৮০০ সাল থেকে এভাবে আরাপাইম শিকার করে আসছে। অতিমাত্রায় শিকারের ফলে মাছের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। সঙ্গত কারণে প্রজনন হারও কমে গেছে।

ব্রাজিল ২০ বছর আগে এই মাছ শিকারের ওপর কিছু বিধি নিষেধ আরোপ করলেও শিকারিরা তা মানছে না। সুতরাং এর অসত্মিত্ব আজ সত্যিকারভাবেই বিপন্ন।

হঁ্যা, একটি উপায় আছে, এজন্য সরকারকে অতিরিক্ত নজরদারির ভূমিকা পালনের পাশাপাশি জেলেদের জন্য কমিউনিটিভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে, যাতে তারা এই মাছ ধরা থেকে স্বেচ্ছায় বিরত থাকে। যেমন গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব জেলে হারপুন বা কোচ দিয়ে আরাপাইমা শিকার করে তাদের প েএই মাছ নিখুঁতভাবে গণনা করা সম্ভব। মাছের দম নেয়ার অভ্যাসগত কারণেই তা সম্ভব। কাজেই এই পদ্ধতির আলোকে ঢালাওভাবে না ধরে কেবল বাছাই করা আরাপাইমাকেই শিকার করতে পারে তারা। এভাবে বছরে ৫০ শতাংশ আরাপাইমা বেঁচে যাবে। ফলে এদের সংখ্যা বাড়বে। ফলন বাড়লে পরবর্তীতে জেলেরাও অধিকহারে লাভবান হবে। এরকম প্রায় ১শ' কমিউনিটি প্রকল্প হাতে নেয়ায় এরই মধ্যে সুফল পাওয়া গেছে। বন্যপ্রাণী সংরণের েেত্র এ ধরনের সাফল্য বিরল। তবে এতে আত্মপ্রসাদের অবকাশ নেই। সামনে অনেক কাজ বাকি। বিশেষ করে বর্তমান অবস্থায় দেখা যাচ্ছে, একটি বিশেষ এলাকায় একটি প্রজাতির হ্রাসমান সংখ্যা হয়তো ক্রমশ পূরণ হচ্ছে। কিন্তু অন্য প্রজাতিগুলোর সঠিক হাল আমাদের জানা নেই।

সূত্র : ইন্টারনেট

No comments

Powered by Blogger.