মাদ্রিদে তিন বাঙাল by মুনতাসীর মামুন

দাম দিতে গিয়ে আবার সেই পুরনো কসরত। মাসুম বা শাহীন কিছুতেই দাম দিতে দেবে না। রীতিমতো ধমক দিয়ে তাদের থামাতে হলো। আমরা দু'জন দু'হাতে চরটে শপিং ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে আসি।
হ্যান্ডিক্রাফটসের আরও কয়েকটা দোকান দেখলাম। মালিক সবই ইন্দোনেশীয়। দামের খুব একটা হেরফের নেই। এখানে বাঙালিদের ফোন-ফ্যাক্স, কাপড় আর মুদি দোকান বেশি। ইন্দোনেশীয়দের দেখা যাচ্ছে ক্রাফটসের দিকে ঝোঁক বেশি। 'এবার ফেরা যাক,' ঘোষণা করি আমি।
হাশেম ভাইও সায় দেন। সূর্য পশ্চিমে আরও খানিকটা হেলেছে। কিন্তু গরম কমেনি। কানত্ম পায়ে আমরা চারজন নীরবে হাঁটি। খানিক পর দেখি প্রাদোর উল্টোদিকে সদর রাসত্মায় এসে পড়েছি। জায়গাটা আমার চেনা।
'মামুন, আমাদের আরেকটা কাজ বাকি রয়ে গেল।' জানালেন হাশেম ভাই।
'কী?'
'ডলার ভাঙানো।'
এতৰণ টাকা ভাঙানোর কথা ভুলে গিয়েছিলাম। ডানদিকে দূরে স্টেশন নজরে পড়ল। বললাম, 'আর কোথায় না থাক, ইউরোপে স্টেশন বা বিমানবন্দরে টাকা ভাঙানোর বন্দোবসত্ম থাকবেই। চলেন দেখি।'
শাহীন এখান থেকে বিদায় নেয়। মাসুমকে বলি, 'তুমি তো যথেষ্ট ঘুরেছ। এ জায়গাটা আমাদের চেনা। তুমিও চলে যাও। তোমারও তো ডিউটি আছে।' 'না, দেরি আছে,' বলল মাসুম, 'চলেন, আপনাদের সঙ্গে স্টেশন পর্যনত্ম যাই।'
আমরা আবার স্টেশনের দিকে হাঁটতে থাকি। হাতে বোঝা থাকায় এখন আরও কানত্ম লাগছে। ফুটপাতে দু'একজন টু্যরিস্ট অবশ্য আছে। স্টেশনটি রাসত্মার থেকে অনেক নিচুতে। সিঁড়ি ভেঙ্গে নামতে হয়। স্টেশনে ঢুকে খানিক খোঁজাখুঁজির পর মানি এক্সচেঞ্জ পেয়ে যাই। কাউন্টার খালি শুধু একজন তরম্নণী বসে। মাসুম স্পেনিশ ভাষায় জিজ্ঞেস করে এখানে ডলার ভাঙানো যাবে কিনা? তরম্নণী বলে, 'সি, সি'। মাসুম তারপর রেট জিজ্ঞেস করে। আমি আর হাশেম ভাই হিসেব করে সন্তুষ্ট হই। সকালে দুপুরে ব্যাংকগুলোতে যে রেট দেখেছি তার চেয়ে অনেক বেশি। হাশেম ভাই বলেন, 'আজ যা কেনার কিনেছি। আগামীকাল ঘুরে ফিরে টাকা ভাঙাব। জায়গা তো চিনেই গেলাম।' আমি সায় দিই।
স্টেশন থেকে বেরিয়ে আমরা প্রাদোর দিতে হাঁটতে থাকি। প্রাদোর চত্বরে তখন বেশ ভিড়। শৌখিন চিত্রশিল্পীরা তাদের অাঁকা ছবির পসরা সাজিয়ে বসেছেন। বিভিন্ন দামের ল্যান্ডস্কেপ। সেই বোঝা হাতে নিয়ে আমি আর হাশেম ভাই সেগুলি ঘুরে ঘুরে দেখি। এক তরম্নণী জানায়, ছবিগুলি তার বাবার অাঁকা। বাবা অাঁকেন আর সে বিক্রি করে।
এখান থেকে মাসুমকে বিদায় জানাই। মাসুম জানায়, আগামীকাল সকালে সে আবার আসার চেষ্টা করবে। এবার গাছে ঢাকা ফুটপাতের দিকে এগোই। একটু ঘুরপথ হবে। তবুও ছায়ায় ছায়ায় হেঁটে যাওয়া যাবে। হঠাৎ ছায়া পেয়ে যেন আরও কানত্মি বেড়ে যায়। প্রায় নীরবে হাঁটতে থাকি। আধঘণ্টা পর মনির ভাইয়ের ফ্যাটের সামনে এসে দাঁড়াই। ঘড়ির কাঁটা তখন সাতটার দিকে। সূর্য তখনও ডোবেনি।
ফ্যাটের দরজা খুলে একগাল হেসে মনির ভাই বললেন, 'মেলা মার্কেটিং করছেন মনে হয়।'
'দাও, মারছি বলতে পার,' উত্তর দিলেন হাশেম ভাই। 'যান, হাতমুখ ধুইয়া আসেন। সারাদিন কাজ করছি এখন একটু কফিটকি খাওয়া যাক।'
নিজেদের রম্নমে বোঝা নামিয়ে সুস্থির হয়ে বসি। হাশেম ভাই নিরলস কর্মী, উনি বিছানায় বসে আবার পরিপাটি করে কেনা জিনিসপত্র গোছাতে বসেন। আমি শপিং ব্যাগ এক কোণে রেখে জানালা বা দরজাটা খুলে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ি। আলো তখন নিভে আসছে। তাপ কমছে। বাইরে থেকে এই ঘরটা এখন ঢের আরামদায়ক।
হাশেম ভাই পরিপাটি করে সব গুছিযে হাতমুখ ধুতে গেলেন। আমি বোধ হয় আধোঘুমে ছিলাম। হাশেম ভাই বললেন, 'এখন ঘুমিয়ো না। হাতমুখ ধুয়ে আসো।'
বিছানা ছেড়ে উঠে হাতে মুখে পানি দিলাম। এখন বেশ ঝরঝরে লাগছে। মনির ভাই কফির পানি বসিয়ে তার স্টুডিওতে ব্রাশ হাতে এদিক ওদিক করছেন। খাবার টেবিলের পাশে মেঝেতে দু'টি বড় সাইজের ছবি বিছানো। ভেতরে ছাপা মেশিনের ওপর একটি। আমাকে দেখে বললেন, 'ফিনিশ হয় নাই। আরো কিছু কাজ করমু।'
আমি স্টুডিয়োতে ঢুকি। ছাপা মেশিনের এক দিকে ডাই করা লোভনীয় সব পুরনো প্রিন্ট। প্রতিটি প্রিন্টের কিছু কিছু রেখে দিয়েছেন। ছাপা মেশিনের উল্টোদিকে টানা টেবিল। তাতে নানা ধরনের রংয়ের কৌটা, ব্রাশ, পাত্র ছড়ানো। এর পাশে দেয়ালঘেঁষে আরেকটি টেবিল। সেটিরও একই অবস্থা। মেশিনের ওপর একটি ছবি। সামনে খালি গায়ে ব্রাশ হাতে মনির ভাই ছবিটি নিরীৰা করছেন। আমি সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটি সিগারেট এগিয়ে দিই। একগাল হেসে বলেন, 'থ্যাংকু থ্যাংকু মুনতাসীর।' সিগারেট ধরিয়ে ছবিটি আরেকবার নিরীৰা করে বলেন, 'ঠিক জমতাছে না।' বলে ব্রাশ এক কৌটোতে ডুবিয়ে দু'টিয় স্ট্রোক দিলেন। কিছুৰণ পর তার ওপর একটি কাগজ বিছিয়ে মেশিনে প্রেস করলেন। 'দেখলেন, টেক্সচারটা মেন আইছে।'
আবার নিরীৰা করলেন, গুণগুণ করে গান ধররেন, 'ম্যায় ভুল গিয়া হার বাত, মগার তোমহারা', গানের কলি শেষ করলেন, 'যাক, পরে আবার ধরা যাইব।'
'আরে না, আপনি আপনার কাজ করম্নন, গল্প করার মেলা টাইম আছে।' বললাম আমি।
'আরে রাখেন, ছবি আকার মেলা টাইম আছে, আপনাদের পামু কই? লন কফি খাই।'
স্টুডিয়ো থেকে বেরম্নতেই দেখি হাশেম ভাই তাঁর প্রিয় হবি নিয়ে ব্যসত্ম। অর্থাৎ হাঁটায়। খাবার টেবিল থেকে আমাদের ঘর পর্যনত্ম সরম্ন করিডোরে তিনি ডাবল মার্চ করছেন। আমাদের দেখে হাঁটা থামালেন।
'এক্সারসাইজ বন্ধ করেন,' বললেন মনির ভাই, 'এখন কফি টাইম'।
কাপ তস্তুরি বের করে সাজালেন। এসব আবার তিনি পরিপাটি করে করতে ভালবাসেন। তিন কাপে কফি ঢাললেন। তারপর আয়েশ করে চেয়ারে বসলেন। আমরাও আমাদের নির্দিষ্ট চেয়ারে বসলাম।
'তা মনির ভাই কবে যাচ্ছেন ঢাকা?' জিজ্ঞেস করি আমি।
'আপনাদের সঙ্গেই। মার শরীর খারাপ। বড় বোনও চলে গেছেন। আপনাদের জন্য যাওয়া একটু পিছাইলাম।'
মনির ভাই এখন প্রতি বছর ঢাকায় বেশ খানিকটা সময় কাটান। ধানম-িতে ফ্যাট নিয়েছেন, চাঁদপুরেও স্টুডিও করেছেন। ঢাকায় থাকাটাও খুব এনজয় করেন।
'হঁ্যা, এখন দেখি প্রায় যারা বিদেশ আছেন ঢাকায় বছরে একবার চলে আসেন। প্রদর্শনীও করেন। প্রবাসে তারাও প্রথিতযশা শিল্পী বলে দেশে পরিচিতি পান। আদৌ কি সেটা ঠিক?'
'ইউরোপ আমেরিকায় আমাদের মতো দেশের শিল্পীদের নামকরা কষ্টকর,' আমার কথার উত্তর না দিয়ে বললেন তিনি, 'তবে, সবাইরই চলে যায়। সেখানে শিল্পের বাজারটা তো বড়।'
'হঁ্যা, তা ঠিক' বলি আমি, 'কিন্তু নিজ দেশে নাম না হলে বিদেশে কল্কে পাওয়া বোধহয় কঠিন।'
'মাইকেল মধুসূদনই পেলেন না, আমরা তো কোন ছাড়।' হেসে বললেন হাসেম খান।
ভারতীয় অনেক প্রথিতযশা শিল্পীদের দেখেছি, যৌবনে প্যারিস, নিউইয়র্ক চলে গেছেন, থেকেছেন কিছুদিন কিন্তু তারপর ফিরে এসেছেন ভারতে। আর মার্কেট ইকোনোমির যুগে প্রচার একটি বড় ব্যাপার। ইউরোপীয় বা মার্কিনীরা আমাদের শিল্পীরা যতই প্রতিভাবান হোক না কেন, পাবলিসিটি দেবে কেন। তারা চীন বা তাইওয়ানের শিল্পীদের প্রচার করে এক আধটু তাও চীন সুপার পাওয়ার হয়ে যাচ্ছে দেখে।
'স্পেনের অবস্থা কেমন?'
মনির ভাই বেশ কিছু শিল্পীর কথা বললেন যাদের নাম ওই মুহূর্তে মনে করতে পারছি না। আসলে, উনিশ বিশ শতকের অবস্থাটা ছিল ভিন্ন। এখন প্রতি দেশে অজস্র শিল্পী, নিজ দেশে কল্কে পাওয়াই মুশকিল। ভাল ছবি অাঁকলেও অনেকে কল্কে পান না যদি না নামকরা কোন গ্যালারি তাকে 'আবিষ্কার' করেন, পাবলিসিটি মেশিন তার পৰে কাজ করে। আর এখন 'পাবলিসিটি' মেশিনও তো অসংখ্য। যার যার দেশে সবাইকে আবদ্ধ হয়ে যেতে হচ্ছে। ব্যতিক্রম দু'একজন থাকতেও পারেন। শিল্পকর্ম, শিল্পের বাজার নিয়ে কিছুৰণ কথাবার্তা বলি। মনির ভাই বলেন, 'চিত্রকলা বিক্রির ৰেত্রেও কিছুটা নর্মস থাকে। আমাদের দেশে সেগুলি মানে কে? যেমন, প্রিন্টের ৰেত্রে দেখেন। কয়টা প্রিন্ট করমু তার একটা সীমা আছে। গ্যালারিকে জানাতে হয়। আমার কাছে কয়টা থাকবে তারও একটা হিসাব আছে। তারপর পেস্নট নষ্ট করে ফেলতে হয়। একটি পেইন্টিংয়ের দাম ধরে তারপর প্রিন্টের অনুপাতে তা ভাগ করা হয়। দশ হাজার টাকা ছবির দাম হলে আমি যদি ৫০টা প্রিন্ট করি, তাহলে দশ হাজারকে ভাগ করতে হবে ৫০ দিয়ে। সেটাই হবে একটা প্রিন্টের দাম।'
কথাটা ঠিক। আমাদের এখানে প্রিন্টের দাম প্রায় তেলরংয়ের সমান। অথচ নতুন সংগ্রাহকদের জন্য প্রধানত প্রিন্ট যাতে তারা কম দামে তা সংগ্রহ করতে পারেন। কফি শেষ হয়ে গেছে অনেক আগে। মনির ভাই আরেকটা সিগারেট ধরিয়ে বললেন, 'ডিনারের বন্দোবসত্ম করতে হয়।'
'বেশি ঝামেলা কইরেন না', বলি আমি।
'আরে আবার কোথায় কী লিখবেন ঠিক আছে।'
এটি একটি বিশেষ ঘটনার রেফারেন্স, আমরা অনেকেই তা জানি। সুতরাং আমরা হেসে ফেলি।
'যে যাই বলুক, সিম্পল ব্যবস্থা করেন।'
'একটা সু্যপ তো করি। একটা ভেজিটেবল আর চিকেন।'
'হঁ্যা, তাই করো, মামুন তো আবার মাছ খায় না।' যোগ করলেন হাশেম ভাই।
মনির ভাই ধীরে সুস্থে উঠে চুলো জ্বালিয়ে ভাত বসালেন, আরেক চুলোয় পানি গরম করতে দিয়ে কাটাকুটিতে ব্যসত্ম হয়ে পড়লেন। মুরগি কাটতে কাটতে বললেন, 'এখানে আর কিছু না হোক একটা জিনিস ভাল। ভেজাল টেজাল নেই।'
আমরা একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেললাম। 'ভেজালের একটা গুণ আছে,' বললাম আমি, 'আমাদের ইমমিউন সিস্টেম খুব স্ট্রং। বিদেশ থেকে কেউ এসে যখন পানির বোতল নিয়ে হাঁটে, আর খাওয়া দাওয়া প্রায় করতে চায় না তখন কিন্তু ব্যাপারটা খুব এনজয় করি।'
'না, তেলটা ভালও হলেও চলে', বললেন মনির ভাই, 'এই দেখেন তেল। খাঁটি জলপাই তেল। ঢাকায় গেলেও আমি জলপাই তেলই কিনে নেই। সেটা তো কেউ ভেজাল দেয়ার কথা ভাবে না।'
মাংস ধুয়ে, তরকারি কোটায় ব্যসত্ম হলেন মনির ভাই, আমি রম্নমে গিয়ে, আধপড়া একটা থ্রিলার নিয়ে বসি। জীবনে, আমার মনে হয়, খেয়ে দেয়ে থ্রিলার পড়তে পড়তে ঘুমানোর চেয়ে আনন্দের আর কিছু নেই। হাশেম ভাই আবার হাঁটাহাঁটি শুরম্ন করেন। আধ ঘণ্টা পর মনির ভাই হাঁক দেন, 'সব প্রায় রেডি।'
এটি ডিনারের ঘণ্টার মতো। থ্রিলার ছেড়ে আমি উঠে আসি। হাশেম ভাইও হাঁটাহাঁটি ছেড়ে কিচেন এড়িয়ায় চলে আসেন। আমি পেস্নট সাজাই। মনির ভাই ভাতের মাড় গালতে দেন। সু্যপটা নামিয়ে পেয়ালায় পেয়ালায় ঢেলে বলেন, 'ফার্স্ট কোর্স শুরম্ন করেন।' তিন নম্বর চুলোয় মাংসটা একটু নেড়ে তিনি আবার টেবিলে এসে বসেন। এক চামচ সু্যপ মুখে দিয়ে বললাম, 'ওয়ান্ডারফুল।'
'আমি সু্যপটা ভালই বানায়', আত্মগর্ভে বলীয়ান হয়ে মনত্মব্য করলেন মনির ভাই।
'যাক ছবি না অাঁকলেও তুমি শেফের চাকরি পেতে পারো।' যোগ করলেন হাশেম ভাই। গল্পগুজব করতে করতে সু্যপ পর্ব সারি। মনির ভাই মুরগিটা নেড়ে চেড়ে দেখেন। ভেজিটেবল আগেই হয়ে গেছে। মিনিট দশকের মধ্যে 'মুরগির কারি'ও তৈরি। দ্বিতীয় দফা খাওয়ার পর্ব শুরম্ন হয়। গরম গরম ভাত তরকারি অমৃতের মতো লাগে। সারাদিনের কানত্মিও বোধ হয় একটা কারণ। খেতে খেতে মনির ভাই ও হাশেম ভাই ফের আর্ট কলেজের গল্প শুরম্ন করেন। গল্প করতে করতে ফের তাদের পুরনো স্যারদের প্রসঙ্গ চলে আসে। হাশেম ভাই বলেন, 'আরেকটা কাহিনী শোনাতে পারি।'
'দাঁড়ান, আগে টেবিলটা সাফ করি।' বললেন মনির ভাই।
আমরা তিনজন হাত ধুয়ে পেস্নট সরিয়ে ফেলি। ডিশওয়াশারে সব দিয়ে মনির ভাই ভিনুর একটা বোতল বের করেন। সবার গস্নাসে ভিনু ঢেলে নিজে চেয়ারে বসেন। ভিনুর গস্নাসে চুমুক দিয়ে 'আহ' বলে একটা সিগারেট ধরান। ধোঁয়া ছেড়ে বলেন, 'শুরম্ন করেন হাশেম ভাই'। আমি ঘড়ির দিকে তাকাই। ঘড়ির কাঁটা এগারোটার ঘর পেরিয়েছে।
'কাহিনীটা আমাদের শফিকুল হোসেনকে নিয়ে,' বললেন হাশেম ভাই, 'আমি তো তাঁদের পরিবারের একজনের মতো ছিলাম। শাহাদতের দুলাভাই। আমার স্যার হলেও শাহাদাতের সুবাদে তাঁর স্ত্রী আমার আপা। নিত্য আসা যাওয়া ছিল বাসায়।'
'বড় ভাল মানুষ ছিলেন', মনত্মব্য করেন মনির ভাই।
হঁ্যা, শিল্পী শফিকুল হোসেনকে আমাদের মনে আছে। নিতানত্ম নিরীহ মানুষ, কারো সাতেপাঁচে ছিলেন না। আপনভোলা মানুষ।
'তা অনেক আগে', বললেন হাশেম ভাই, 'দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পর বাংলাদেশের শিল্পীদের ছবির প্রদর্শনী নিয়ে গেছি ভারত। কলকাতায় প্রদর্শনী চলছে। স্যারও আছেন। তিনি এখানেই বড় হয়েছেন, পড়াশোনা করেছেন। তাঁর অনেক বন্ধু-বান্ধব ছড়িয়ে ছিটিয়ে। দেশ বিভাগের পর বোধহয় আর আসেননি। প্রায় এদিক সেদিক চলে যান। একদিন বিকেলে আমাকে বললেন, হাশেম, আগামীকাল বিকেলে তুমি আমার সঙ্গে বেরম্নবে। কোন প্রোগ্রাম রেখ না। আমি বললাম, কোথায় স্যার। বললেন, আহ, অস্থির হচ্ছো কেন? যাবে আমার সঙ্গে এক বাসায়। তবে, হঁ্যা শোন, ব্যাপারটা তোমাকেই বলছি। আর কাউকে বলো না যেন।
(চলবে)

No comments

Powered by Blogger.