মনের টানে দূরে থেকেও কাছে by শামিমা আক্তার রিমা

শিশির প্রায় ৩ মাস হলো কানাডায়, ওদের কোম্পানি কানাডার কোলাবরেশনে একটা নতুন প্রজেক্ট লঞ্চ করেছে। সেই প্রজেক্ট ম্যানেজ করছে শিশির। এখনও প্রায় ৪ মাস থাকতে হবে। তার জন্য এই প্রজেক্টটা নিজেকে প্রমাণ করার একটা বড় সুযোগ।
সেজন্য আমরা দু’জনেই চেয়েছিলাম যে এটা সাকসেসফুল হোক। কিন্তু এর ফলে যা হয়েছে তা হলো আমাদের স্বাভাবিক দাম্পত্যটা হঠাৎই লং ডিস্টান্স রিলেশনশিপে পরিণত হয়েছে। ফলে অফিস, সংসার আর আমাদের একমাত্র মেয়ের সব দায়িত্ব আপাতত আমার হাতেই ন্যস্ত। সারাদিন ধরে এই পর্বতপ্রমাণ কাজ সামলাতে সামলাতে খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ি। তবে ক্লান্তির থেকেও অনেক বেশি পীড়া দেয় একাকীত্ব। থেকে থেকেই মনে হয় শিশিরের কাছে থাকলে বোধহয় এতটা খারাপ লাগত না। মেয়েও ওর বাবাকে ভীষণ মিস করে। কিন্তু আর ঢাকার জন্য পৃথিবীর দু’প্রান্তে বসে কাজের ফাঁকে দিনগোনা ছাড়া এখন আমাদের আর কোন উপায় নেই।
আপনার প্রিয় মানুষটি কাছাকাছি নেই বলে সব সময় ডিপ্রেসড থাকলে অজান্তেই তাকে আরও দূরে ঠেলে দেবেন। সামনাসামনি দেখা না হওয়া সত্ত্বেও যাতে সম্পর্কে সূত্রটা ছিন্ন না হয়, সেজন্য নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ দৃঢ় করুন। এক মুহূর্তের জন্যও সঙ্গীকে টেকেন ফর গ্রান্টেড ভাববেন না। দৈনন্দিন জীবনের ছোট্ট কোন মজার ঘটনা, বাচ্চার পড়াশোনা, নিজের মন খারাপের মতো তুচ্ছ ঘটনাই আপনাদের কাছাকাছি এনে দেবে। দূরে আছেন বলে নিজেদের সাধ আহ্লাদ একেবারে ভুলে যাবেন না। নতুন গান, বই বা সিনেমা একসঙ্গে না উপভোগ করতে পারলেও তা নিয়ে আলোচনা করতে তো বাধা নেই। আপনারা দু’জনে একসঙ্গে যা যা করতে ভালবাসেন সেগুলো নিয়ে নিয়মিত মতবিনিময় করুন। যতই ফ্রাস্টেটেড বা একা লাগুক সব সময় মনে রাখুন লং ডিস্টান্স রিলেশনশিপ একটা নিতান্তই সাময়িক ব্যাপার। কিছুদিনের মধ্যেই তো প্রিয় মানুষটি আপনার কাছেই চলে আসবেন। আজ থেকে ১-২ বছর পর আপনারা নিজেদের কীভাবে দেখতে চান, সেই প্ল্যানিং করার সব থেকে ভাল সময় এখনই। নতুন করে সাংসারিক বাজেট বানান, ইনডেস্টমেন্টের বিভিন্ন উপায় ভাল করে জানুন। প্রয়োজন হলে একটা বিশেষ ফান্ড গড়তে পারেন যেখানে বাড়তি টাকা পয়সা রাখবেন।
দূরে থাকা সঙ্গীর সঙ্গে যোগাযোগের সবচেয়ে সহজ মাধ্যম অবশ্যই হাতের কাছে রাখা টেলিফোনটা। সারাদিনের মধ্যে একটা নির্দিষ্ট সময়ে লং ডিস্টান্স কলের রেট কম থাকে, সেই সময়টা কথা বলুন। আরও ভাল হয় যদি কারও ওপরই বেশি চাপ পড়বে না।
যোগাযোগের সবচেয়ে কার্যকর উপায় অবশ্যই ই-মেইল। ই-মেইল করার জন্য আপনার পার্সোনাল কম্পিউটারে ইন্টারনেট কানেকশন নিতে হবে। ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের সাহায্যে ইন্টারনেটে ঢুকে কোন একটি বিশ্বস্ত ওয়েবসাইটে নিজের ই-মেইল এ্যাকাউন্ট খুলে চিঠি লিখতে পারেন। আপনার সঙ্গীরও অবশ্য একটা ই-মেইল এ্যাকাউন্ট থাকা প্রয়োজন। চিঠি পৌঁছে যাবে মুুহূর্তের মধ্যে। নিজের পার্সোনাল কম্পিউটারে ইন্সট্যান্ট মেসেঞ্জার ডাউনলোড করে নিলে, চ্যাট করতে পারেন কাজের ফাঁকে ফাঁকে। আপনারা দু’জনেই যদি কম্পিউটারে ওয়েবক্যাম ফিট করে নেন, তাহলে চ্যাটিং করার সময় একে অপরকে দেখতেও পাবেন।
*জন্মদিন, এ্যানিভার্সারি বা অন্য বিশেষ দিনগুলো ভুলে যাবেন না। প্রিয়জনকে পাঠাতে পারেন ইলেক্ট্রনিক গ্রিটিং কার্ড, তবে পোস্টে কার্ড পাঠানো আরও ভাল। ব্যক্তিগত ছোঁয়া সম্পর্কের উষ্ণতা পুনর্জীবিত করবে। ছোট্ট গিফট, ফুল বা চকোলেট ও অনলাইনে অর্ডার করে দিতে পারেন।
* কিছুদিন পর পর আপনার ছেলেমেয়ে, বাড়ির অন্য সদস্যদের তোলা রিসেন্ট ফোটোগ্রাফ পাঠিয়ে দিন ই-মেইলের সাহায্যে। সঙ্গীকেও বলুন ওর নিজের কলিগদের, নতুন বাড়ির ছবি পাঠাতে। ছবির মাধ্যমেও অনেক না বলা কথা একে অপরের কাছে পৌঁছে যাবে।

No comments

Powered by Blogger.