শিক্ষক আন্দোলনের নামে সেলিম ভূঁইয়া চাঁদাবাজি, রাজনীতি করছেন- অভিযোগ বিএনপি নেত্রী জ্যোতির by বিভাষ বাড়ৈ

 শিক্ষকদের সঙ্গে প্রতারণা করে আন্দোলনের নামে রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন আর শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজির ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভেঙ্গে গেছে বিএনপিপন্থী শিক্ষক সংগঠন।
‘শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের বৈধ কর্তৃত্ব নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে বিএনপিপন্থী শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া ও সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ শরীফুল ইসলামের অনুসারীরা। প্রয়াত শিক্ষক নেতার অনুসারীদের নেতৃত্বে ছিল বিএনপি নেত্রী ও সাবেক এমপি নূর আফরোজ জ্যোতি এবং জাহাঙ্গীর খান। সেলিম ভূইয়ার গ্রুপ নিজেদের বৈধ আর অপর পক্ষকে অবৈধ বলে অভিযোগ তুললেও নূর আফরোজ জ্যোতি বলেছেন, আমরাই বৈধ ও মূল। সেলিম ভূঁইয়া ব্যানার ছিনতাই করে অবৈধভাবে সংগঠনের নামে কাজ করছেন। তিনি শিক্ষকদের জাতীয়করণের আন্দোলনে বিএনপি নেতাদের এনে পুরো আন্দোলনকে বিতর্কিত করেছেন। শিক্ষকদের স্বার্থ নয় বরং এই লোক নিজেকে বড় বিএনপি নেতা হিসেবে জাহির করার চেষ্টা করছেন।
এদিকে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে রাজধানীতে রাস্তা আটকে অবরোধ কর্মসূচীর পর আন্দোলন নিয়ে নানা বিতর্ক ওঠায় নতুন কর্মসূচী নিয়ে সক্রিয় থাকার কৌশল নিয়েছেন শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান দাবিদার অধ্যক্ষ সেলিম ভঁইয়া। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে নতুন কর্মসূচী ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেছেন, আমাদের চাকরি জাতীয়করণের দাবি মানা না হলে প্রয়োজনে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা বর্জন করবেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। আশা করব, শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় যাতে ব্যাঘাত না ঘটে সেদিক বিবেচনায় নিয়ে সরকার আমাদের দাবি মেনে নেবেন। আর যদি তা করা না হয়Ñ তাহলে আমরা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হব। একই সঙ্গে তিনি বলেন, দাবি বাস্তবায়নে রবিবার (আজ) তার সংগঠনের পক্ষ থেকে বেসরকারী শিক্ষক ও কর্মচারীদের দাবি জানিয়ে স্পীকার ও সংসদ সদস্যদের স্মারকলিপি দেয়া হবে। শনিবার সকাল থেকেই এ সংগঠনের কিছু শিক্ষক জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হয়ে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন। দুপুরে গান গেয়ে ও কবিতা আবৃত্তি করে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের উজ্জীবিত রাখতে দেখা গেছে। গত কদিন ধরেই প্রেসক্লাবের সামনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সাধারণ শিক্ষকদের জড়ো করে সরকার ও শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও গালিগালাজ করে চলেছেন সেলিম ভূঁইয়াসহ সংগঠনের কয়েক নেতা। প্রতিদিনই সেখানে এসে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। এক পর্যায়ে সারাদেশ থেকে আসা সাধারণ শিক্ষকরাও এর প্রতিবাদ জানান। শিক্ষকদের নিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচীর এক পর্যায়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, শিক্ষকদের মনে রাখতে হবে বর্তমান সরকার এক সঙ্গে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য যত সুবিধা নিশ্চিত করেছে অতীতে কোন সরকার তা করেনি। রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষমতা ও বাস্তবতাও আমাদের বুঝতে হবে। বিএনপিপন্থী শিক্ষক সংগঠন শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের নেতাদের আন্দোলনের নামে রাজনৈতিক বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, সুুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির পরেও এখন চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে তাদের আন্দোলনের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির পরেও আন্দোলন করাকে ‘অবাস্তব’ অ্যাখ্যায়িত করে তিনি বলেন, আন্দোলনের নামে সাধারণ শিক্ষক-কর্মচারিদের বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। প্রাইমারি আর মাধ্যমিক বা কলেজ এক নয়। প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক। সেলিম ভূঁইয়ার উদ্দেশ্যে মন্ত্রী বলেন, এখন এই দাবি তুলছেন। কিন্তু আপনার সরকার তো ২৮ বছরেও এটি করেনি। আপনি তো কোনদিন এই দাবি নিয়ে আপনার সরকারের আমলে কাজ করেননি। একটি টাকাও তো দেয়ার চেষ্টা করেনি আপনার সরকার।
এদিকে কর্মসূচীর নামে বিএনপিপন্থ’ী শিক্ষক নেতার সরকার ও শিক্ষামন্ত্রীর বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে প্রগতিশীল শিক্ষক সংগঠনগুলোর মাঝে। এই সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ ঘটনার তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, আমরাও জাতীয়করণ চাই, তবে সাধারণ শিক্ষকদের রাজধানীতে জড়ো করে নিজের রাজনৈতিক শোডাউন করা আর ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ দেশের শিক্ষা আন্দোলনকে বিতর্কিত করার ষড়যন্ত্র। এর মাধ্যমে শিক্ষক সমাজকে অপমান করা হচ্ছে। শিক্ষক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ জাতীয়করণের দাবি তুললেও আন্দোলনের নামে নেতাদের রাজনীতি করার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। অধ্যক্ষ মোঃ শাহজাহান আলম সাজু বলেন, শিক্ষামন্ত্রী সম্পর্কে সেলিম ভূঁইয়ার আচরণ অশিক্ষকসূলভ, অসৌজন্যমূলক, শিষ্টাচার বহির্ভূত, অবোধ ও অমার্জিত। এ কর্মকা- শিক্ষক সমাজ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে অশ্রদ্ধার জন্ম দেবে এবং চলমান শিক্ষক আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর আলামত পাওয়া গেল বিএনপিপন্থী শিক্ষক সংগঠনের ভাঙ্গনের সঙ্গে সঙ্গেই। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই নামে দুই পক্ষের কর্মসূচী শেষে স্পষ্ট হয়ে গেছে বিরোধ। সেলিম ভূঁইয়া সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন, আমাদের সংগঠনের নাম ব্যবহার করে একটি গ্রুপ আন্দোলন বানচালের চেষ্টা করছে। তারা কারাÑ এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সাবেক এমপি নূর আফরোজ জ্যোতি আর তার সঙ্গে কিছু লোক আছে। তারা বৈধ সংগঠন নয়। আমরাই বৈধ। এখন আমাদের ব্যানারে কর্মসূচী চালিয়ে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন লোকগুলো। বিভক্তি সম্পর্কে তিনি বলেন, ওই নেত্রী আমার কাছে এসেছিলেন কাজ করার জন্য। আমি সায় দেইনি বলে এখন এসব করছেন। তবে জানা গেল, এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতার অনুসারীরাই কয়েক বছর কিছুটা নীরব থাকলেও কার্যক্রম ছিল। সম্প্রতি তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি সক্রিয় কয়েছেন। এই নেতার অনুসারীদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপি নেত্রী ও সাবেক এমপি নূর আফরোজ জ্যোতি ও জাহাঙ্গীর খান। নূর আফরোজ জ্যোতি অভিযোগ করেছেন, আমরাই বৈধ ও মূল। সেলিম ভূঁইয়া ব্যানার ছিনতাই করে অবৈধভাবে সংগঠনের নামে কাজ করছেন। তিনি শিক্ষকদের জাতীয়করণের আন্দোলনে বিএনপি নেতাদের এনে পুরো আন্দোলনকে বিতর্কিত করেছেন। শিক্ষকদের স্বার্থ নয় বরং এই লোক নিজেকে বড় বিএনপি নেতা হিসেবে জাহির করার চেষ্টা করছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি সেলিম ভূঁইয়াকে বহুবার বলেছি পেশাজীবীর কার্যক্রমে দলীয় নেতাদের আনবেন না। তাহলে আন্দোলন বিতর্কিত হবে। কিন্তু তিনি তাই করলেন। এই লোকের কারণেই শিক্ষামন্ত্রী এই আন্দোলনকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলার সুযোগ পেয়েছেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিক্ষক নেতা শরীফুল ইসলাম স্যার এই সংগঠন গঠন করেছেন ২০০০ সালের ১৩ জুলাই। এটা তার সংগঠন। কিন্তু ২০০৪ সালে সেক্রেটারি নির্বাচনে জিততে না পেরে সেলিম ভূঁইয়া নিজের অবৈধভাবে ব্যানার ব্যবহার করে কাজ করেন। আর আমি তার কাছে যাইনি বরং তিনিই আমাকে বারবার ফোন করেছেন। আমি দলীয় রূপ নিতে না করেছি তাকে। এমনকি তাকে নিয়ে উত্তরাঞ্চলে কর্মসূচী করেছি যেখানে সেলিম ভূঁইয়া কোনদিন যাওয়ার সাহসই পায়নি।

No comments

Powered by Blogger.