নদীর বুকে দু'ঘণ্টা by ম. ফেরদৌস

যান্ত্রিক জীবনের গতিময়তায় আমরা যেন একেকজন রোবট হয়ে গিয়েছি। সবুজ ঘাসের বুকে জমে থাকা শিশিরকণা দেখার সময় নেই, জ্যোৎস্না রাতে তারাদের মেলায় হারিয়ে যাবার সময় নেই, নেই সমুদ্রের তীরে বসে ফেনিল ঢেউগুলোর মাতামাতি দেখার।
তার পরেও যদি কাজের ফাঁকে সময় হয়_ মন যেতে চায় শানত্ম নদীর কাছে, নিজেকে সঁপে দিতে কিছুণের জন্য তাহলে আসুন ঘুরে আসি শীতল্যার কোল থেকে। শীতল্যাকে এই জন্য নির্বাচন করলাম যে, বুড়িগঙ্গার মতো এখনও এর স্বাভাবিক স্বচ্ছতা, নির্মলতা হারায়নি_ হারায়নি তার সজীব, চঞ্চল রূপ।
আপনাকে যেতে হবে মতিঝিল থেকে আশিয়ান এসি বাস (মতিঝিল_নারায়ণগঞ্জ) সার্ভিসে। এই বাসগুলো বেশ কমফোর্টেবল। (যারা নিজস্ব কার ড্রাইভ করে যেতে চান তাঁরা তাঁদের পছন্দমতো সময় এবং সুবিধা মতো যেতে পারেন)। বাসটি থামবে নারায়ণগঞ্জ শহীদমিনার মোড়ে। সেখান থেকে রিক্সা নিয়ে যেতে হবে লঞ্চঘাট। টিকেট কেটে ভিতরে প্রবেশ। দু'পাশে দোকানপাট। পানি এবং শুকনো খাবার কিনে সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন পছন্দমতো।
কেননা লঞ্চে কোন খোলা খাবার কিনে না খাওয়াই নিরাপদ। সাঁকো পার হয়ে লঞ্চঘাটে পেঁৗছানোর পর দেখা যাবে অনেক লঞ্চ থেমে আছে। কিছু কিছু আবার ছেড়ে যাচ্ছে এবং আসছে। আপনি কাছাকাছি অল্প সময়ের জন্য কোথাও যেতে চাইলে যেতে পারেন চাঁদপুরের লঞ্চে চড়ে গজারিতে। গজারি হলো প্রথম স্টপেজ, যেখানে লঞ্চ তার তরী ভিড়ায়। লঞ্চে দেখা যায় নানা রঙের মানুষ_ নানা জিনিসের পসরা সাজিয়ে বিক্রি করছে। বুট, বাদাম, কারও কাছে আবার লিপস্টিক, নেইলপলিশ, চেন, কিপ, কেউ কলা, আমড়া। আমি বলে উঠলাম লঞ্চের মধ্যে এত গেদারিং কেন, কে এদের উঠতে দেয়। আমার সহোদর বলল_ আমি বা তুমি যেমন চাকরি বা ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করি_ওরা এই সব জিনিসপত্র ফেরি করে বিক্রি করে জীবন চালায়। আমরা কিছুণ সিটে বসেছিলাম। লঞ্চ ছাড়ার পর বাইরে গিয়ে দাঁড়ালাম। কি চমৎকার দৃশ্য! কবি কি শুধুই বলেছেন, "এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি, সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি, সে যে আমার জন্মভূমি।" নদীতে অনেক লঞ্চ, নৌকার সমাহার। লঞ্চটির কাছাকাছি যখন অন্যকোন লঞ্চ এসে পড়ছিল ঠিক তখনই হর্ন দিয়ে তাকে সতর্ক করে দেয়া হচ্ছিল_ যাতে আগেই সে সরে যেতে পারে। নদীর তীরে গড়ে উঠেছে অনেক শিল্পকারখানা। বড় বড় সিমেন্ট ফ্যাক্টরি। গাঁয়ের ছেলেমেয়ে, বধূরা তীরে গোসল করছে। একপাশে সবুজ ধানতে। নদীর পাশে সবুজের সমারোহ। মাথার ওপর নীল আকাশ। মাঝে মাঝে তুলার মতো মেঘ ভেসে যাচ্ছে, ণে রোদ, ণে মেঘলা আকাশ। চমৎকার কেটেছে আমার জীবনের একটি দিনের কিছুণ সময়। আর লঞ্চের দোতলায় দাঁড়িয়ে নদীর পানি দেখলে মনে হবে লঞ্চটি নদীর পানি কেটে যাচ্ছে। লঞ্চের ফ্রন্ট সাইটের পানিগুলো কেমন ফেনার সৃষ্টি করছে। খুব সুন্দর দৃশ্য।
চোখ বন্ধ করলে মনে হয় ইচ্ছে করলেই ফিরে যেতে পারি সেই মুহূর্তে_ অদ্ভুত সুন্দর ভাললাগার একটি মুহূর্ত, প্রকৃতির অনেক কাছাকাছি।

No comments

Powered by Blogger.