লা লিগার সর্বশেষ যে তিন ম্যাচে রোনালদো খেলেননি, সেই তিনটিতেই তারা জিততে ব্যর্থ- রোনালদোকে ছাড়া বিবর্ণ রিয়াল

স্পেনের শীর্ষ দুই ক্রীড়া দৈনিকের শিরোনাম প্রায় কাছাকাছি।মার্কার ওয়েবসাইটে শিরোনাম, ‘ক্রিস্টিয়ানোকে ছাড়া মাদ্রিদ কিছুই নয়।’ প্রচারসংখ্যা নিয়ে মাদ্রিদের যে আরেকটি ক্রীড়া দৈনিকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, সেই এএস লিখেছে, ‘ক্রিস্টিয়ানো ছাড়া আগুন নেই।’
এই দুটি শিরোনামেই ফুটে উঠেছে গত পরশু রিয়াল মাদ্রিদ-ওসাসুনা ম্যাচের মূল চিত্রটা। বলা যেতে পারে, রিয়াল মাদ্রিদের সাম্প্রতিক ছবিও। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর খেলা না-খেলা আর তাঁর পারফরম্যান্সের ওপরই নির্ভর করে যেন রিয়ালের ভাগ্য। রোনালদোর হ্যাটট্রিকে বুধবারে যে দলকে মনে হলো দুর্বার, রোনালদোকে ছাড়া সেই দলটাই ভীষণ নিষ্প্রভ শনিবার। যেটির খেসারত দিতে হলো পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে থাকা ওসাসুনার সঙ্গে ড্র করে! ম্যাচে কোনো গোল হয়নি। কিন্তু রিয়াল করে ফেলেছে একটি ‘হ্যাটট্রিক।’ লা লিগার সর্বশেষ যে তিন ম্যাচে রোনালদো খেলেননি, সেই তিনটিতেই তারা জিততে ব্যর্থ। পাঁচ হলুদ কার্ডের খাঁড়ায় এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা ছিল রোনালদোর। বাইরে থাকলেন লা লিগায় টানা ৬০টি ম্যাচ খেলার পর!
০-০ স্কোরলাইন যা বলছে, পরশুর ম্যাচটা হয়েছে এর চেয়েও অনেক বেশি ম্যাড়মেড়ে। পুরো ম্যাচে মাত্র একটি শটই প্রতিপক্ষের গোলপোস্টে রাখতে পেরেছে রিয়াল। গোলে শট নেওয়ার হিসাবে হোসে মরিনহোর কোচিংয়ে লা লিগায় এতটা বাজে ম্যাচ আর কাটেনি রিয়ালের। লা লিগায় রিয়ালের বিস্ময়কর দুঃসময়ও দীর্ঘায়িত হলো আরেকটু। ম্যাচ শেষে শীর্ষে থাকা বার্সেলোনার সঙ্গে ব্যবধান ছিল ১৫। কাল মালাগার সঙ্গে মেসিরা জিতে থাকলে যেটি হয়ে গেছে ১৮। এমনকি দুইয়ে থাকা অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদও আস্তে আস্তে চলে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। কাল জারাগোজাকে হারিয়ে থাকলে অ্যাটলেটিকো এগিয়ে গেছে ৭ পয়েন্টে!
রিয়ালের দুঃসময়ের প্রতীক হয়েই যেন পরশু লাল কার্ড জুটল কাকার কপালে। এমনিতেই মাঠে নামার সুযোগ হয় না, পরশু বদলি নেমে ১৮ মিনিটের মধ্যে মাঠ ছাড়তে হলো দুটি হলুদ কার্ড দেখে! রিয়াল মাদ্রিদ ক্যারিয়ারে এটাই কাকার প্রথম লাল কার্ড। সব মিলিয়ে সর্বশেষ লাল কার্ড দেখেছিলেন ২০১০ বিশ্বকাপে আইভরি কোস্টের বিপক্ষে।
ওসাসুনার এল সাদার স্টেডিয়ামে প্রথম ২৫ মিনিট হয়েছে শুধু উদ্দেশ্যহীন ছুটোছুটি আর চর্মগোলকে এলোমেলো লাথির প্রদর্শনী। ২৫ মিনিটে খেদিরার উদ্দেশ্যে বাড়ানো হিগুয়েইনের সেন্টার গোললাইন থেকে ফেরান ওসাসুনা ডিফেন্ডার মার্ক বেলট্রান। ৩৫ মিনিটে হোসে কায়েহনের হেড অল্পের জন্য চলে যায় বাইরে। পরে কায়েহন একবার বল ঢুকিয়েছিলেন জালে, কিন্তু অফসাইডের কারণে বাতিল হয় সেটি। রোনালদোর পাশাপশি নিষেধাজ্ঞার কারণে ছিলেন না সার্জিও রামোসও। রাউল আলবিওল, হিগুয়েইনরা প্রথম একাদশে সুযোগ পাওয়াটাকে যৌক্তিক প্রমাণ করতে পারেননি পারফরম্যান্সে। ডি মারিয়াও ছিলেন নিষ্প্রভ, লুকা মডরিচকে তো খুঁজে পাওয়াই মুশকিল ছিল। বদলি নেমে ওজিল-বেনজেমারাও কিছু করতে পারেননি।
হোসে মরিনহোর ওপর চাপটাকে আরেকটু ভারী করেছে এই ড্র। তবে ভাবনার ধরনটা ভিন্ন বলেই না তিনি আর সবার চেয়ে আলাদা! পরশুর পারফরম্যান্সে যেমন অখুশি নন মরিনহো, ‘চোটকে দায় দেব না আমি, যদিও এক-দু মাস ধরে অনেককে পাচ্ছি না আমরা। অনেকের নিষিদ্ধ থাকাটাকেও অজুহাত দেব না। আজ (পরশু) দলের মানসিকতাটা বরং আমার ভালো লেগেছে। কয়েকজন তো দারুণ খেলেছে। প্রতিপক্ষ এভাবে খেললে সুযোগ সৃষ্টি করা খুব সহজ নয়। কিন্তু খুব বেশি না হলেও আমরা তা করতে পেরেছিলাম।’ এএফপি, রয়টার্স।

No comments

Powered by Blogger.